Sandeshkhali

ইডি নয়, রাজ্য পুলিশের হাতে ধরা দিতে পারে শাহজাহান

রাজ্য

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপদার্থতায় শেখ শাহজাহান প্রায় দেড়মাস ধরে শুধু ফেরার রয়েছে তাই নয়, ২০ হাজার কোটি টাকার রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তও কার্যত গতিহীন।
লুক-আউট নোটিস জারি হওয়ার পরেও ফেরার শাহজাহান। ফেরার অবস্থাতেই এই বাহুবলী তৃণমূলী নেতা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বারাসত আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছে একাধিকবার। স্বাভাবিকভাবেই পিটিশনে তাকে সই করতে হয়েছে। গোপন ডেরায় বসে বা কলকাতায় এসে তাকে সই করতে হয়েছে! তাতেই স্পষ্ট, প্রশাসনের গোচরেই আছে এই তৃণমূল নেতা।
বুধবার রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সন্দেশখালি সফর তাৎপর্যপূর্ণ। গত শনিবার রাজীব কুমারের সাংবাদিক বৈঠকের ১০মিনিট পরেই গ্রেপ্তার হয়েছিল শাহজাহানের সঙ্গেই গত ৫ জানুয়ারি থেকে ফেরার হওয়া, ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা। তার আগের শনিবার, কলকাতার সভা থেকে ‘অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশ” অনুসারে আরেক অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার সাসপেন্ড ঘোষিত হন এবং তারপরই রাতে গ্রেপ্তার হন। শাসক তৃণমূলের নির্দেশ এলে তবেই গ্রেপ্তার হবে, নচেৎ নয়। পশ্চিমবঙ্গে এখন এটাই দস্তুর।
এই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমারের সন্দেশখালি যাত্রার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে এবার কি ‘নির্দেশ’ মোতাবেক গোপন ডেরা থেকে বেরিয়ে আসবে বা গ্রেপ্তার করা হবে সন্দেশখালি ত্রাস এই তৃণমূল নেতাকে? তারজন্যই মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ চলছে এদিন থেকে?
সন্দেশখালি- ১ নম্বর ব্লকের শাহজাহানের এলাকা আকুঞ্জিপাড়া থেকে রামপুর, ধামাখালি বা নদীর ওপারে জেলিয়াখালি দ্বীপের তৃণমূলী বাহিনীর আবদার, ‘দাদা’ গ্রেপ্তার হলে যেন রাজ্য পুলিশের হাতেই হয়, ইডি’র হাতে নয়। আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নিস্পৃহতা, অপদার্থতায় সেই আবদারেই সিলমোহর পড়তে চলেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টমহল।
শাহজাহানকে রাজীব কুমারের বাহিনী যদি গ্রেপ্তার করে স্বাভাবিকভাবেই রেশন দুর্নীতির তদন্তও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরাও। রেশনকাণ্ডে ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বয়ানেই উঠে এসেছিল শাহজাহান যোগের তথ্য। ইডি’র একটা সূত্রে জানা গিয়েছিল, রেশনকাণ্ডে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে একাধিক তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে এই বাহুবলী নেতার বিরুদ্ধে। বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের নথিও হাতে এসেছে। যোগ মিলেছে বনগাঁর ধৃত তৃণমূল নেতার একাধিক ফরেক্স কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারেরও।
সন্দেশখালিতে একশোর বেশি রেশন ডিলার রয়েছে বিভিন্ন দ্বীপ এলাকায়। সকলেই ন্যাজাট থেকে বরাদ্দকৃত সামগ্রী পায়। রেশনের সামগ্রীর মান খুবই নিম্নমানের। সন্দেশখালিতে শাহজাহান তার বাহিনীকে দিয়ে রেশন ডিলারের দোকানের সামনে বিক্ষোভ করাতো মাঝেমধ্যে, নিম্নমানের চাল, গম মাল দেওয়া হচ্ছে কেন, এই প্রশ্ন তুলে। এদিকে রেশনের বরাদ্দ সামগ্রীর বস্তা বদলি করে খারাপ নিম্নমানের চাল, গম চলে আসত ডিলারের গুদামে। রাস্তায় গাড়ি থেকে বস্তা বদলি হয়ে যেত। পুলিশের সামনেই দাঁড়িয়ে থেকে তা করাতো শাহজাহান বাহিনী। তারপর তা খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে বিপুল টাকার লেনদেন হতো। 
এর প্রতিবাদ করায় সন্দেশখালির বিভিন্ন দ্বীপের একাধিক রেশন ডিলার আক্রান্ত হয়েছেন। শিবু হাজরার যে ভুয়ো এফআইআরের ভিত্তিতে সিপিআই(এম) নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে গ্রেপ্তার করেছ পুলিশ, সেই মামলাতেই রয়েছে সন্দেশখালি ত্রিমোহনী বাজার লাগোয়া রেশন ডিলারের নাম। আপাতত সেই দোকানও বন্ধ, রেশনও পাচ্ছেন না গ্রামবাসীরা।
ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিবিআই’র বিশেষ তদন্তকারী দলের নেতৃত্ব তদন্তের বিষয়টাও আদালতে। রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তদন্তে স্বাভাবিকভাবেই আপত্তি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারও। এই পরিস্থিতিতে গত দেড়মাস ধরে অধরা শাহজাহান। ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, বিধায়করা এই দুর্নীতিগ্রস্ত ও মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় অভিযুক্তর পক্ষে যা মন্তব্য করেছেন, তাতেই প্রশাসনের মনোভাব স্পষ্ট। 
এর আগে সন্দেশখালির বিধায়ক থেকে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন যে শাহজাহান ‘এলাকাতেই আছে, দাদা পালিয়ে যায়নি’! সন্দেশখালি-১ নম্বর ব্লকেই পুলিশ প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই লুকিয়ে আছে সন্দেশখালির ত্রাস, দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এবার রাজীব কুমারের সফর এবং তার পরবর্তীতে শাহজাহানের গ্রেপ্তারি কি একই চিত্রনাট্যের অংশ হতে চলেছে? লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাত থেকে শাহজাহানকে রক্ষা করতেই চাইছে শাসক দল, অভিযোগ তেমনই।
 

Comments :0

Login to leave a comment