West Bengal Panchayat Elections

অস্থায়ী কর্মীদের ঢোকাতে পঞ্চম পোলিং অফিসার !

রাজ্য

West Bengal Panchayat Elections

ঘুরপথে অস্থায়ী কর্মচারীদের ভোটের ডিউটি দিতে ‘ফিফথ পোলিং’ অফিসার নিয়োগ করে তৃণমূলের হাতে বুথকে উপহারের ব্যবস্থা করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন!
গত ১৩ জুন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ অস্থায়ী কর্মচারীদের ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কার্যকরী করেনি তা ফের উঠে আসে গত ২৮ জুন। রাজ্যজুড়ে প্রতিটি জেলাতেই অস্থায়ী কর্মচারীদের ভোটের প্রথম থেকে চতুর্থ পোলিং অফিসারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলতে থাকে। 
আগামী সোমবার ফের কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে পঞ্চায়েত মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত আছে। ঠিক তার আগে শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে পঞ্চম পোলিং অফিসারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শাসকদের কাছে। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসার (বিডিও) জেলা পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসারের ( জেলা শাসক) কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনের ভিত্তিতে পঞ্চম পোলিং অফিসার নিয়োগ করতে পারবেন।



রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইন ও রাজ্য পঞ্চায়েত আইনে এই পঞ্চম পোলিং অফিসার নিয়োগের কথা বলা আছে। কিন্তু এরাজ্যে বহু নির্বাচনে প্রিসাংডিং অফিসার থেকে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের অভিজ্ঞতায় পঞ্চম পোলিং অফিসারের কথা মনে করতে পারছেন না। আর এখানেই প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, পঞ্চম পোলিং অফিসারের নিয়োগের মধ্য দিয়ে রাজ্য প্রশাসন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদেরই বুথের ভিতরে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করতে চলেছে। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ গোটা রাজ্য ছড়িয়ে আছে। হুগলীর আরামবাগ মহকুমাতে ‘ব্লক ইউথ ভলান্টিয়ার’ নামে কার্যত দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ হওয়া কর্মীদের বুথের পোলিং অফিসারের প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিউটিতে পাঠানো হচ্ছে! সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী কর্মচারীর স্বীকৃতি নেই এমন বহু ঠিকায় নিযুক্ত কর্মচারীদের পাঠানো হচ্ছে ভোটের দায়িত্ব দিয়ে।

অবস্থা এমন নয় যে রাজ্যের সব সরকারি স্থায়ী কর্মচারীদের ভোটের দায়িত্ব দিয়ে কমিশন কর্মচারী সঙ্কটে পড়েছে। বরং সরকারি কর্মচারীদের অভিযোগ, বহু জায়গাতেই সরকারের স্থায়ী কর্মচারীদের এবার ভোটের কোনও দায়িত্বে রাখা হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের একজনও স্থায়ী কর্মচারীকে এবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রিসাইডিং থেকে পোলিং অফিসার করা হয়নি। রাজ্যের পঞ্চায়েত কর্মচারী আন্দোলনের নেতা সন্দীপ রায় জানান,‘‘হাইকোর্টের রায়কে অমান্য করে যেভাবে প্রশাসন অস্থায়ী কর্মচারীদের ভোটের দায়িত্ব দিচ্ছে আমরা আশঙ্কা করছি, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হবে। আমরা বুথে ভোটার থেকে ভোটকর্মী সবার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি করছি।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে বুথ সুরক্ষার দাবিতে আগামী ৪জুলাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে অবস্থান করতে চলেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। 
রাজ্যের ভোটে এতদিন একজন প্রিসাইডিং অফিসারের তত্ত্বাবধানে চারজন পোলিং অফিসারকে সামনে রেখে নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন করার চল ছিল। এবারও রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের শুরুতে এই ধারা মেনেই রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের কাজ শুরু করেছিল কমিশন। কিন্তু শুরুতেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী কর্মচারীদের দিয়ে ভোট করানো নিয়ে প্রবল আপত্তি জানানো হয়। আপত্তি শেষ পর্যন্ত গড়ায় আদালতে। গত ২৮ জুন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, কোনোভাবেই অস্থায়ী কর্মচারীদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। একইসঙ্গে সিভিক পুলিশকেও ভোটের সময় বুথ প্রহরা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ।

গত ১৩ জুন হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের নির্দেশের পর আদালতের রায় উল্লেখ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে সমস্ত জেলা শাসকদের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল। সেই নির্দেশে কমিশন নিতান্ত নিরুপায় বোধ করলে অস্থায়ী কর্মচারীদের চতুর্থ পোলিং অফিসারের নিচের কোনও কাজের জন্য নিয়োগ করতে পারে। একইসঙ্গে হাইকোর্ট স্পষ্ট ভাষায় কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি পদে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্য থেকেই নির্বাচন কমিশন চতুর্থ পোলিং অফিসার নিয়োগ করতে বাধ্য থাকবে। আদালতের এই নির্দেশ তুলে ধরে জেলা শাসকদের কাছে পাঠানোর পরও তা কার্যকর না হওয়ায় গত ২৮ জুন কলকাতা হাইকোর্টে ফের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। 
শুক্রবারই পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশ থেকে জানা যাচ্ছে, অস্থায়ী কর্মচারী ও প্যারা টিচারদের প্রিসাইডিং অফিসার, প্রথম পোলিং অফিসার, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের অস্থায়ীদের কাজ কী হবে? জেলা শাসক এই অস্থায়ী কর্মচারী ও প্যারা টিচারদের হাইকোর্টের রায়কে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে চতুর্থ পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দিচ্ছে! শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, হুগলী, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের সব জেলাতেই নাগাড়ে অস্থায়ী কর্মচারী থেকে সরকারি কাজে যুক্ত ঠিকা কর্মীদের পঞ্চায়েত ভোটের পোলিং অফিসারের কাজে বহাল রেখে যাচ্ছে। ফের আদালতে যাতে অবমাননার মুখে পড়তে না হয় তার জন্যই নতুন করে পঞ্চম পোলিং অফিসার নামিয়ে কার্যত তৃণমূলের হাতে বুথকে তুলে দিচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।


Comments :0

Login to leave a comment