West Bengal Panchayat Elections

ভোটের মূল দায়িত্বে পুলিশই,জানিয়ে দিল কমিশন

রাজ্য

West Bengal Panchayat Elections


এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দলের মতামতই গুরুত্ব পেতে চলেছে। প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের দাবিকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নবান্ন চেয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীও দাবি করেছিলেন, রাজ্যের পুলিশ যথেষ্ট দক্ষ। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের চাপে কমিশন দু’দফায় ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন্দ্রের কাছে চাইলেও শনিবার পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে ৩৩৭ কোম্পানির বেশি বাহিনী আর পঞ্চায়েত ভোটে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফ‍‌লে যৎসামান্য কিছু অতি স্পর্শকাতর বুথ ছাড়া বাকি প্রায় সাড়ে ৬১ হাজার বুথে রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট হতে চলেছে। এদিন কমিশন সূত্রে এমনটাই জানাগেছে।

শুক্রবার রাতে জেলায় জেলায় বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নাকা চেকিং, টহলদারির কাজে লাগাতে হবে। গোটা জেলায় ভ্রাম্যমাণ বাহিনী (মোবাইল ফোর্স) হিসাবে ব্যবহার করতে হবে বাহিনীকে। ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর কাজও করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এলাকা নিয়ন্ত্রণের কাজেও বাহিনীকে ব্যবহার করা যাবে। আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক চেক পয়েন্টগুলিতেও নজরদারির কাজে ব্যবহার করা যাবে বাহিনীকে। কিন্তু ও‍‌ই নির্দেশিকার কোথাও বলা হয়নি যে বুথেও বাহিনী থাকবে। এখনও পর্যন্ত কমিশনের যা পরিকল্পনা তাতে বাহিনীকে পথ দেখাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ প্রশাসন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার বক্তব্য, রাজ্যে এই মুহূর্তে ৬৫ হাজার পুলিশ কর্মী রয়েছেন। তাঁদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া বাড়তি কিছু বিশেষ বাহিনী (স্পেশালাইজ ফোর্স) দিচ্ছে রাজ্য। এরপরেও যদি কিছু কম পড়ে তাহলে পার্শ্ববর্তী অ-বিজেপি রাজ্য থেকে পুলিশ নিয়ে আসা হবে ভোটের আগে। অর্থাৎ ৮ জুন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় কমিশনার রাজীব সিনহা ভোটে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে যেভাবে বলেছিলেন, সে পথেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হ‍‌তে চলেছে। খুব বেশি হলে কলকাতা হাইকোর্টে কমিশন যে ১৮৯টি স্পর্শকাতর বুথের কথা উল্লেখ করেছিল, শুধু মাত্র সেখানেই থাকতে পারে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাও সেটা ঠিক হবে প্রচার শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে।
বুথে বুথে নিরাপত্তা চেয়ে একদিকে ভোটকর্মীরা অন্যদিকে কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে থেকেই সরব ছিল। একেবারে মনোনয়ন পর্ব থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করেছিল কয়েকটি বিরোধী দল।

কমিশনের অনীহায় তা হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টে কমিশনের দেওয়া হলফনামা অনুসারে ২০ হাজার ৬১২টি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়। কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞনমের ডিভিসন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কমিশন এবং রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের নির্দেশকেই মান্যতা দেওয়ার জন্য। তারপর কমিশন কেন্দ্রের স্বরাস্ট্র মন্ত্রকের কাছে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চায়। তার আগে গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মাত্র ২২ কোম্পানি বাহিনী ২২টি জেলার জন্য চেয়ে‍‌ছিল কমিশন। দু’দফায় ৮২২ কোম্পানি বাহিনীর দাবি করলেও কেন্দ্র দু’দফায় ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পাঠানোর ছাড়পত্র দেয়। তারমধ্যে ২২ কোম্পানি আগে আসে তারপরে ৩১৫ কোম্পানি এখনো পর্যায়ক্রমে রাজ্যে আসছে। শুক্রবার পর্যন্ত ৬৫ কোম্পানি এসেছিল। বাকি ২৫০ কোম্পানি আসছে! রাজীব সিনহার বক্তব্য, যে সমস্ত বুথ স্পর্শকাতর সেখানে বেশি নজর দিতে বলেছি। মজার বিষয় হলো ২০ জুন জেলাগু‍‌লি থেকে নবান্নের কাছে স্পর্শকাতর বুথের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মণ্ডহারবারের কোনও উল্লেখই নেই।
এদিকে কমিশন জেলায় জেলায় নির্দেশ পাঠিয়েছে প্রতিটি ব্লক, মহকুমা এবং জেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করতে হবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর রাজনৈতিক দলগুলিকে দিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কন্ট্রোল রুমগুলি চালু থাকবে। প্রতিটি কন্ট্রোল রুমে রেজিস্ট্রার রাখতে হবে। তাতে প্রতিটি অভিযোগ এবং তার ভিত্তিতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো, লিখে রাখতে হবে। এছাড়া বলা হয়েছে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সি সি ক্যামেরা থাকবে। যেখানে সি সি ক্যামেরা একান্ত না পাওয়া যাবে সেখানে ‍‌গোটা প্রক্রিয়া ভিডিও করে রাখতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment