Wine Outlet

এবার খুচরো মদ বিক্রির ব্যবসায়ে নামছে রাজ্য

রাজ্য

Wine Outlet

বাংলা ডেয়ারি থেকে দুধ বিক্রি করে সরকার। হরিণঘাটা নাম দিয়ে সরকারি কোম্পানি বিক্রি করে মাংস। এবার ফ্রানচাইজি খুলে মদ বিক্রির ঢালাও লাইসেন্স দিতে চলেছে নবান্ন। 
কীভাবে সাজাতে হবে মদের দোকান তার নকশা তৈরি করেছে বেভারেজ কর্পোরেশন। রাজ্যজুড়ে এবার খুচরো মদ বিক্রির ব্যবসায় নামছে রাজ্য সরকার!
শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে বিদ্যালয় শিক্ষা। তাতে হুঁশ নেই সরকারের। কিন্তু মদ বিক্রির প্রসারে নতুন করে বিপণনে নামছে নবান্ন। রাজ্যজুড়ে নতুন উদ্যোগে মদের দোকান খুলতে উদ্যোগী হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজ কর্পোরেশন। মদ বিক্রির জন্য নতুনভাবে খোলা দোকানের নামও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। মদের দোকানের নামকরণ করা হবে, ‘বেভকো রিটেল শপ’!
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজ কর্পোরেশন লিমিটেড (বেভকো) ইতিমধ্যেই ফ্রানচাইজি খোলার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। শুরুতে দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ ও আলিপুরদুয়ার— এই তিন জেলাকে বাছা হয়েছে। সেখানেই ফ্রানচাইজির মাধ্যমে ‘বেভকো’ খুলতে চলছে খুচরো মদ বিক্রির দোকান। এই তিন জেলাতে মদের দোকান খোলার জন্য বেছে নিয়ে আসলে সমীক্ষা করতে চলছে রাজ্যের আবগারি দপ্তর। তারপর ধীরে ধীরে গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া হবে মদ বিক্রির খুচরো দোকান। ভারতীয় ব্রান্ডের মদের সঙ্গে, বিদেশি ও ভারতে তৈরি বিদেশি মদ মিলবে। 
এরাজ্যে স্রেফ শিক্ষকের অভাবে বিপন্ন স্কুল শিক্ষা। রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। একই অবস্থা উচ্চপ্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে। শিক্ষকের অভাবে বহু বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার পঠনপাঠন বন্ধ হতে বসেছে। এলাকার মানুষের অর্থানাকুল্যে চলছে বিজ্ঞান শিক্ষার ক্লাস। সেখানে মদ বিক্রির দোকান খুলে মদ নিয়ে মাতামাতিতে ব্যস্ত রাজ্য সরকার।
মদ বিক্রির এহেন বিপুল কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য হিসাবে রাখা হয়েছে সরকারি কোষাগারের আয় বাড়ানো। রাজ্যের এক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘সরকার কোম্পানি (বেভকো) তৈরি করেছে তার পণ্য বিক্রি করার জন্য। সরকারি এই কোম্পানির সাফল্যের মূল্যায়নের মাপকাঠিই হলো, লাভ করছে না ক্ষতি করছে। সেইদিক থেকে বেভারেজ কোম্পানির কাজই তার পণ্য বাজারে যে কোনও মূল্যে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা।’’  
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি কোম্পানির লক্ষ্য হচ্ছে মদ বিক্রি করা। মদ বিক্রি করার জন্য এই পরিশ্রম করতে হচ্ছে সরকারকে এটা নিয়েই উদ্বেগ সব মহল। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘‘সিগারেট খেয়ে মানুষ উত্তেজিত হয়ে কেউ খুন করে না। কিন্তু খুন, ধর্ষণ সহ যত রকমের অপরাধ সংগঠিত হয় তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত মদ্যপ থাকার প্রমাণ মিলেছে। এই প্রশ্নে গত সোমবার মালদহ শহরের এসডিও গাড়িতে মৃত্যুর ঘটনায় মহকুমা শাসকের বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থাতেই গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গাড়িতে ওইভাবে পিষে দিয়ে পথচারীকে খুন করার ঘটনা ঘটতো না। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর ফলেই এই ভয়াবহ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে রাজ্যে স্রেফ কোষাগারের হাল ফেরাতে মদ বিক্রি বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তে রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি বিপজ্জনক প্রভাব পড়বেই।’’ 
বেভকো রিটেল শপ খোলার জন্য ঠিক হয়েছে, কর্পোরেশন ও পৌর এলাকার মদের দোকান থাকলে তার এক কিমি এলাকার মধ্যে ফ্রানচাইজিকে দোকান খুলতে দেওয়া হবে না। একইভাবে পঞ্চায়েত এলাকায় তিন কিমির বাইরে ফ্রানচাইজির হাতে দেওয়া হবে মদের দোকান খোলার চাবি। কর্পোরেশন, পৌর এলাকা ও পঞ্চায়েত এলাকায় ফ্রানচাইজি নিতে হলে কত টাকা বেভারেজ কর্পোরেশনকে জমা দিতে হবে সেটাও টেন্ডারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন যাঁরা মদের দোকান চালান তাঁদের কোনোভাবেই ফ্রানচাইজির মাধ্যমে দোকান খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। কোষাগারের আয় নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা করে একজনকে তিনটি ফ্রানচাইজি’র রিটেল আউটলেট করার অনুমতি দেওয়া হবে। 
আবগারি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন গোটা রাজ্যে আড়াই হাজারের বেশি মদের দোকান আছে। এই দোকানের মালিকদের ফি বছর সরকারের কাছে লাইসেন্স রিনিউয়াল বা পুনর্নবীকরণ করতে হয়। কিন্তু সরকারি মদের দোকানের বিক্রিবাটা দেখে ভবিষ্যতে সরকার খুচরো ব্যবসাতেও একচেটিয়া দখল নিতে আগে থেকেই তৎপর হতে শুরু করেছিল। 
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন লিমিটেড (বেভাকো) নামে ইতিমধ্যেই এক নিগম তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। এই নিগমের হাতেই এখন গোটা রাজ্যের মদের পাইকারি বাজার। কিন্তু খুচরো মদের দোকান খোলার জন্য সরকারের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল বিধি। গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর সেই বিধিতেও সংশোধনী আনা হয়েছে। নতুন বিধিতে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে সরকারি কোম্পানিকে সরকার মদ বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স দিতে পারে।
 সেই লক্ষ্য নিয়েই মদের আউটলেট খোলার ঢালাই ছাড়পত্র দিতে শুরু করল নবান্ন। 

Comments :0

Login to leave a comment