West Bengal Awas corruption

আবাস যোজনা নিয়ে নবান্নে অভিযোগ তিন লক্ষ ছাড়িয়ে

রাজ্য জেলা

Pm awas west bengal tmc mamata banerjee corruption bengali news

আবাস যোজনায় ত্রুটিমুক্ত তালিকা তৈরি করা সত্ত্বেও কেন্দ্র টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু তারপরেও শুধু আবাস যোজনা নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে জমা পড়েছে ৩ লক্ষের উপর অভিযোগ!


একশো শতাংশ নির্ভুল তালিকা তৈরি করেও আবাস যোজনা নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমেছে নবান্নে। ভাটায় পড়া সংগঠনে জোয়ার আনতে দুই মাসের জন্য কলকাতা ছাড়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। কোচবিহার থেকে শুরু করবেন তাঁর জনসংযোগ যাত্রা। সেই কোচবিহার জেলাতেই আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে নবান্নে জমা পড়েছে ২৭ হাজার অভিযোগ।  


আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগে গ্রামে উত্তাল ক্ষোভের মুখে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করার জন্য আশাকর্মী, পুলিশ পর্যন্ত নামিয়ে সমীক্ষা করেছিল রাজ্য সরকার।

পরবর্তীকালে সরকারের তালিকা থেকে ১৬ লক্ষ নাম বাদ দেওয়ার তথ্য সামনে এনেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ১১ লক্ষ নামের নির্ভুল তালিকা তৈরি করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আবাস যোজনার টাকা না ছাড়ার রাজনৈতিক অভিযোগ ছিল মমতা ব্যানার্জির। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে আবাস যোজনা নিয়ে নবান্নে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভ্যান্স সেল’-এ জমা পড়া ৩ লক্ষের উপর অভিযোগ। 
নবান্ন সূত্রের খবর, জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশ অভিযোগের নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এখনও পড়ে থাকা ৫৮ শতাংশ অভিযোগের নিষ্পত্তি করা যায়নি। আবাস যোজনা নিয়ে জমা পড়া ৩ লক্ষের অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার অভিযোগের। 

প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ মূলত দুই ধরনের। যোগ্য হয়েও আবাস যোজনার তালিকায় নাম না থাকায় অভিযোগ এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর গ্রিভ্যান্স সেলে। আর দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, পাকা বাড়ির মালিক হয়েও আবাস যোজনার তালিকায় নাম ঢুকে আছে। এই সংখ্যায় অভিযোগ আসার পর প্রশাসনের অন্দরেই প্রশ্ন, ১১ লক্ষের নির্ভুল তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে আসলে যা দাবি করা হচ্ছে, তা আদপেই ঠিক নয়। না হলে এই বিপুল সংখ্যায় অভিযোগ অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে এসে পৌঁছাতো না। 


গ্রামে এই মুহূর্তে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হওয়ার থেকেও মানুষের ক্ষোভ বেশি আবাস যোজনার ঘর নিয়ে। এর আগে আবাস যোজনার ঘরের জন্য বিপুল টাকা কাটমানি হিসাবে আদায় করার অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন গ্রামের তৃণমূল নেতারা। টাকা নিয়ে ঘর পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধান সহ সদস্যদের বিরুদ্ধে। 


ক্ষোভের রোষ থেকে দলের নেতা-কর্মীদের রক্ষা করতে এর আগে তৃণমূল কংগ্রেস দিদির দূত কর্মসূচি নিয়ে গ্রামে গিয়েছিল। একইসঙ্গে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিও সমান্তরালভাবে চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। সরকারকে সামনে রেখে গত ১ এপ্রিল থেকে দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজন করেছিল নবান্ন। 

প্রথম পর্যায়ে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পরিষেবা প্রদানের সময় দেওয়া থাকলেও তা বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল করা হয়েছে। এত কিছুর পরেও দুর্নীতি নিয়ে গ্রামের মানুষের ক্ষোভে যে বিন্দুমাত্র লাগাম পরানো যায়নি, তা সামনে এসেছে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফে ফের একদফা ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে।

আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে টানা দুই মাস অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের প্রতিটি জেলার গ্রামে যাবে। গত ২৯ মার্চ শহীদ মিনারে সমাবেশ করে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে লক্ষ মানুষের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন সাংসদ। এখন দিল্লি যাত্রা থেকে সরে এসে গ্রামে দলের হাল ফেরাতে জনসংযোগ যাত্রার কর্মসূচি নিতে হচ্ছে তৃণমূলকে।

 
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে আবাস যোজনা নিয়ে অভিযোগের শীর্ষে আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ৭১ লক্ষের উপর অভিযোগ জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নিষ্পত্তি সেলে। জমা পড়া অভিযোগের নিষ্পত্তির হার ২৫ শতাংশ। 

আরও করুণ চিত্র মুর্শিদাবাদ জেলায়। ৯২ শতাংশ অভিযোগের নিষ্পত্তি করা যায়নি। ৩৪ হাজারের উপর অভিযোগের মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য সরকার। বীরভূম জেলা থেকে আবাস যোজনা নিয়ে প্রায় ১৯ হাজারের উপর অভিযোগ জমা পড়েছিল। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৯৫৫টি অভিযোগের। ৯৫ শতাংশ অভিযোগ পড়ে আছে। 


আসলে রাজ্য সরকারের কাছে আবাস যোজনা নিয়ে অভিযোগ আসলে কার্যত সরকারের সেভাবে কিছু করা নেই। কারণ, আবাস যোজনার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত কিংবা বিয়োজনের জন্য পঞ্চায়েতে গ্রামসভার বৈঠক করে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করতে হয়। আবাস যোজনা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ টের পেয়ে গত ডিসেম্বর মাসেই গ্রামসভার বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছিল রাজ্য সরকার।

 

Comments :0

Login to leave a comment