WRESTLING BODY WOMEN

কুস্তি ফেডারেশনের নতুন কমিটি সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি মহিলাদের

জাতীয়

 ‘‘সাসপেন্ড নয়, একেবারে বাতিল করে দেওয়া হোক রেসলিং ফেডারেশনের নতুন কমিটিকে। তাহলেই যৌন হেনস্তায় অভিযুক্তরা কুস্তির আখড়ায়, সংস্থায় আর ফিরতে পারবে না।’’ সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সহ প্রগতিশীল একাধিক মহিলা সংগঠন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সম্প্রতি যৌথ বিবৃতিতে এই দাবিই ফের জোরালো করেছে। অন্যদিকে, এদিন ব্রিজভূষণের দিল্লির বাড়ি থেকে ফেডারেশনের অফিস সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নতুন কার্যালয় হরি নগর এলাকায়। সেখান থেকেই চলবে ফেডারেশনের কাজ। লাগাতার প্রতিবাদ-আন্দোলনের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিজভূষণ এই বাড়িতেই মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।     

জাতীয় রেসলিং ফেডারেশনের নতুন কমিটি নির্বাচিত হওয়ার দিন চারেকের মধ্যেই তা ভেঙে দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রক। তবে মন্ত্রক যুক্তি দেয়, নতুন কমিটি সংশ্লিষ্ট নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। মহিলা নেতৃবৃন্দ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘‘রেসলিং ফেডারেশনের এই নতুন কমিটিকে ক্রীড়া মন্ত্রকের সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া উচিত। কিন্তু যে পদক্ষেপ নেওয়া হলো তা নিমিত্ত মাত্র এবং এই ব্যবস্থা এতটাই দেরিতে নেওয়া হলো যে, কোনও কড়া বার্তা পৌঁছালো না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কুস্তিগিররা ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন।’’ মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের নেত্রীরা বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা রুখতে ২০১৩ সালে আইন তৈরি হয়— ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অব উওমেন অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রোহিবিশন অ্যান্ড রেড্রেসাল)বা পিওএসএইচ। সেই আইনের এবার ১০ বছর। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তার উদ্‌যাপনও হয়েছে। কিন্তু আমাদের চ্যাম্পিয়নরা, যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে দেশের জন্য পদক জিতেছেন, সেই সাক্ষী-বীনেশ-সঙ্গীতা সহ আরও অনেক মহিলা কুস্তিগির তাঁদের কর্মক্ষেত্রেযৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে সুরক্ষা চেয়েও পেলেন না। যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার পেয়েও বঞ্চিত হলেন। সরকারের তরফে স্পষ্ট করা হলো না যে, যারা মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে, তাদের কোনও জায়গা এখানে নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হলো না। উলটে যখন ফেডারেশনের নির্বাচনের ফল ঘোষণা হলো, দিল্লিতে ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের সাংসদ-বাংলোর ভিতরে স্লোগানের রব ওঠে। বাইরে প্লাকার্ড পড়ে যায়, দাবদাবা হ্যায়, দাবদাবা রহেঙ্গা (আধিপত্য আছে, আধিপত্য থাকবে)। ব্রিজভূষণের ব্যবসার সঙ্গী, তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর সঞ্জয় সিং ফেডারেশন প্রধান নির্বাচিত হন। প্রতিবাদে সাক্ষী মালিক খেলা ছেড়ে দেন, বজরঙ পুনিয়া পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেন এবং অর্জুন ও খেলরত্ন ফিরিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন বীনেশ ফোগট। 

এআইডিডব্লিউএ, এআইপিডব্লিউএ, এনএফআইডব্লিউ, পিইউসিএল সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একযোগে প্রশ্ন তুলেছে, ‘‘বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এবং ক্রীড়া মন্ত্রক কী মহিলা খেলোয়াড়দের জন্য নিরাপদ এবং অনুকূল পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারবে?’’ একইসঙ্গে তাঁরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন, প্রথমত, ব্রিজভূষণের মতো সাংসদ, যাঁরা খেলোয়াড়দের উপর শারীরিক অত্যাচার করে, যৌন হেনস্তার সংস্কৃতি তৈরির কারিগর সেই সাংসদদের ক্রীড়া সংস্থায় কোনও জায়গা হতে পারে না। বিজেপি হাইকম্যান্ডকে আশ্বস্ত করতে হবে যে তারা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ব্রিজভূষণকে প্রার্থী করবে না। দ্বিতীয়ত, জাতীয় ফেডারেশনের কমিটিকে সাসপেন্ড নয়, সম্পূর্ণ বাতিল করে দিতে হবে। নতুন করে ভোট করতে হবে। তৃতীয়ত, বিন্দুমাত্র দেরি না করে খেলাধুলো এবং অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করে নতুন কমিটি তৈরি করতে হবে। 

চতুর্থত, সাক্ষী, বীনেশ, সঙ্গীতা, বজরঙ সহ প্রত্যেকের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। এঁরা কেরিয়ারের শীর্ষে রয়েছে এখন, সম্মানের সঙ্গে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে ময়দানে। পঞ্চমত, সমস্ত ক্রীড়া ফেডারেশন পুনর্গঠন করতে হবে। সব পদে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ প্রয়োজন।

Comments :0

Login to leave a comment