পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। লুক আউট নোটিশ জারির পরেও ২৫দিন হয়ে গেলো, এখনও শাহজাহানের কোন হদিশ পাচ্ছে না ইডি। অথচ গোপন আস্তানায় থেকেই বেমালুম হলফনামায় সই দিলেন, আদালতে আইনজীবী মারফত আগাম জামিনের আবেদনও করলো সন্দেশখালির ‘ত্রাস’, রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বাহুবলী তৃণমূলী নেতা শেখ শাহজাহান।
আর সেই সময়তেই বিচারব্যবস্থায় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান শেখের কতটা অধিকার আছে তা নিয়ে একদিকে খোদ বিধানসভার অধ্যক্ষ যেমন মন্তব্য করলেন, অন্যদিকে রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী কার্যত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মগোপনের থাকা এবং পুলিশের না ধরতে পারার কথা কথা উল্লেখ করলেন! পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ থাকা একজ দুষ্কৃতী যিনি কীনা বিধায়কও নয়, তাঁকে নিয়ে খোদ বিধানসভার অধ্যক্ষ মন্তব্য করছেন, রাজ্যের মন্ত্রী ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ টেনে আনছেন- আক্ষরিক অর্থেই তা বেনজির ঘটনা!
শাহজাহান শেখ কোথায়? সন্দেশখালির বিধায়ক বলেছিলেন, এলাকাতেই আছে শাহজাহান ভাই। রাজ্যের কারা মন্ত্রী বলেছিলেন- ভিনরাজ্যে চিকিৎসা করাতে গেছে, তাই এরাজ্যের পুলিশ ধরে পারছে না। এবার আরো একধাপ এগিয়ে খোদ রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বললেন- ‘শাহজাহান আদালতের তত্ত্বাবধানেই আছেন।’ কীভাবে? তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধ্যক্ষ। বিমান ব্যানার্জির কথায়, ‘শাহজাহান শেখ কি আদালতে যেতে পারেন না? আমি তো মনে করি, আদালতের তত্ত্বাবধানে আছেন। কোনও ব্যক্তি যদি আদালতে আবেদন করেন আগাম জামিনের জন্য, তার মানে তিনি আদালতের তত্ত্বাবধানে আছেন।’ কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক আইনজীবীও রাজ. বিধানসভার অধ্যক্ষের এমন মন্তব্যে রীতিমত তাজ্জব। ফেরার এক অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন কেবলমাত্র করেছেন তার মানে তিনি আদালতের তত্বাবধানে আছেন?
বিস্মিত হওয়ার পর্ব এখানেই শেষ নয়। সবকিছুকেই প্রায় ছাপিয়ে রাজ্যের আরেক প্রবীন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আবার বলেছেন- ব্রিটিশরাও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে খুঁজে পায়নি। বহু রাজ্যে অনেক দুষ্কৃতী থাকে, খুঁজে পায় না পুলিশ।সব সময়ে সব দুষ্কৃতীকে খুঁজে পাওয়া যাবে এমন নয়।’ শাহজাহানের প্রসঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম কেন টেনে আনতে হলো তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতেই পরে পরিষদীয় মন্রীে বলেন, অপরাধ করলে তো শাস্তি হবে, আমি অপরাধের পক্ষে নেই।
শাহজাহান শেখের মত এক তৃনমূল দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরতে পারছেনা আর স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দেশের জন্য লড়াই করছেন- দুটো ঘটনাকেই একই বন্ধনীতে ফেলছেন রাজ্যের মন্রী য়- তৃণমূল রাজত্বে যেন সবই সম্ভব। আবার রাজ্যের সেচ মন্রীগ্ পার্থ ভৌমিক আবার শেখ শাহজাহানকে ‘ভদ্রলোক’ বলে বিশেষন দিয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কেন পুলিশের কাছে এখনও অধরা সন্দেশখালির এই ত্রাস!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্য প্রশাসনের মদতেই কী ২৫দিন ফেরার অবস্থায় রয়েছে শাহজাহান শেখ? ২৫দিন ধরে যার হদিশ পাচ্ছেনা পুলিশ সেই ব্যক্তি কীভাবে হলফনামায় সই করে আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করলেন মঙ্গলবার? তাহলে কী আইনজীবী তাঁর গোপন ডেরা থেকে সই করিয়ে এনেছিল নাকি শাহজাহান নিজেই কলকাতায় এসে হলফনামায় সই করে গেছে? একজন আইনজীবীও তাঁর ডেরা জানতে পারছে কিন্তু পুলিশ জানতে পারছেনা? কেন্রীডায় এজেন্সিও খোঁজ পাচ্ছেনা।
তবে শুধু আগাম জামিন নয় মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালতে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে যেন কোন কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার হয় তার আবেদনও জানানো হয়। যদিও বিচারক সঙ্গে সঙ্গেই তা খারিজ করে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে শুনানি ছিল শেখ শাহজাহানের আগাম জামিনের আবেদনের। শুনানিতেই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে শেখ শাহজাহানকে তলব করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হলে ইডি’র তরফে বলা হয় হঠাৎ করে এই শুনানি। ফলে কেন তলব করা হয়েছে তার তথ্য প্রমান সহ আদালতে পেশ করতে কিছুটা সময় লাগবে। যেহেতু আগাম জামিনের শুনানি যে মঙ্গলবারই হবে সে ব্যাপারে প্রস্তুতি ছিল না তাই বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়ার জন্য সময় চাওয়া হয় ইডি’র তরফে। এরপরেই আদালত এই শুনানি পিছিয়ে দেয় আগামী শনিবার পর্যন্ত। আর তখনই শাহজাহানের তরফে আইনজীবী শাহজাহানের বিরুদ্ধে যাতে কোনও কড়া পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেই জন্য ‘নো-কোঅরসিভ অ্যাকশন’ র আর্জি জানান। যদিও পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেয় আদালত। ফলে শনিবার পর্যন্ত এই বাবহুবলী নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা, এমন আবেদন খারিজ হয়ে গেছে।
Shahjahan ED
গোপন ডেরা থেকে নিশ্চিন্তে আগাম জামিনের আবেদন শাহজাহানের,
×
Comments :0