NYAY YATRA

ন্যায় যাত্রা রুখতে হামলা পুলিশের, আহত অনেকেই

জাতীয়

Congress tmc cpim bjp bengali news

বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি 
 

রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জড়ো ন্যায় যাত্রা’ মঙ্গলবার গুয়াহাটি মহানগরে প্রবেশের মুখে ন্যায় যাত্রীদের উপর আসাম পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালালো। পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জে শতাধিক পদযাত্রী জখম হয়েছেন। গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া, বিধায়ক জাকির হোসেন সহ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা। পুলিশের লাঠিচার্জে ভূপেন বরার ডান হাতের কবজি ভেঙে গিয়েছে। বিধায়ক জাকির হোসেন মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তবে পুলিশের বাধা ও হামলা মোকাবিলা করে ব্যারিকেড ভেঙে গুয়াহাটিতে ঢুকেছে ন্যায় যাত্রা। আর রাতেই বিজেপি সরকার রাহুল গান্ধী, কানহাইয়া কুমার ও কে সি বেণুগোপালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে, ন্যায় যাত্রা আটকাতে ব্যর্থ হয়ে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশের ডিজি-কে টুইটে অধুনা এক্স হ্যান্ডেলে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বিকেলে রাহুলের বিরুদ্ধে বশিষ্ঠ থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। রাতে কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে আসাম পুলিশ। এদিকে, প্রথমদিকে ন্যায় যাত্রাকে মিয়া যাত্রা অর্থাৎ মুসলিমদের যাত্রা বলে কটাক্ষ করেছিলেন হিমন্তবিশ্ব। এদিন এই যাত্রাকে নকশালদের যাত্রা আখ্যা দিয়েছেন তিনি। হিমন্তের অভিযোগ, পদযাত্রীরা নকশালদের মতো আচরণ করছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে টুইটে মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের ডিজির মধ্যে কথোপকথন চলে। মুখ্যমন্ত্রী টুইটে ডিজি-কে মামলা করার নির্দেশ দেন। পালটা ডিজি টুইটে জানান, রুট বদল করার অপরাধে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এনিয়ে নেটপাড়ায় হাসাহাসি শুরু হলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ডেকে বলেন, হামলার দায়ে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি। লোকসভা নির্বাচনের পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, আসামে ন্যায় যাত্রা আটকাতে শুরু থেকেই বাধা তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। পদযাত্রা, সভা করতে বাধা দিচ্ছেন। রাহুল গান্ধীকে মন্দিরে যেতেও বাধা দিচ্ছেন। ন্যায় যাত্রা আসামে পৌঁছানোর আগে রাহুল গান্ধীকে গুয়াহাটিতে ঢুকতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারিও দেন হিমন্তবিশ্ব। একসময় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে গুয়াহাটিতে রাহুল গান্ধীর পদযাত্রার অনুমতি বাতিল করে দেয় পুলিশ। ফলে গুয়াহাটিতে রাহুলের পদযাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে হিমন্তের হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করেই রাহুলকে নিয়ে এদিন গুয়াহাটিতে পদযাত্রা করবেন বলে ঘোষণা করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। ফলে এদিন সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গুয়াহাটিতে। পুলিশই এই উত্তেজনা ছড়ায়। ভোর থেকে গুয়াহাটি প্রবেশের সবকটি রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তুলে পুলিশ। 
সোমবার মেঘালয়ে রাত কাটিয়ে এদিন সকালে ওই রাজ্যের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সামনে বক্তব্য রেখে ফের আসামে ঢুকে গুয়াহাটির উদ্দেশ্য পদযাত্রা শুরুর কথা ছিল রাহুল গান্ধীর। কিন্তু রাহুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয় মেঘালয় সরকার। শেষপর্যন্ত রাহুলের বক্তব্য শুনতে পড়ুয়ারা রাস্তায় নেমে আসে। তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের সামনে বক্তব্য রাখেন রাহুল। তারপর আসামের খানাপাড়া থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে রওনা হয় পদযাত্রা। কিন্তু তাঁকে আটকাতে খানাপাড়ায় বিশাল ব্যারিকেড গড়ে তুলে পুলিশ। ব্যারিকেডের সামনে সহস্রাধিক সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করে সরকার। আবার খানাপাড়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে সকালে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের একটি ব্যানার নিয়ে আচমকা হিমন্তের মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকার নেতৃত্বে শো’খানেক বিজেপি কর্মী ঝাড়ু হাতে খানাপাড়ায় জড়ো হন। টানটান উত্তেজনার মধ্যে সকাল এগারোটা নাগাদ খানাপাড়া থেকে কংগ্রেসের পদযাত্রা শুরু হয়।  কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রাকে সমর্থন জানিয়ে বিরোধী দল সিপিআই(এম), সিপিআই, রাইজর দল, আসাম জাতীয় পরিষদ সহ একাধিক দল ও সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা নিজ নিজ ঝান্ডা নিয়ে পদযাত্রায় শামিল হন। পদযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি ও তাঁদের মেজাজ দেখে ব্যানার গুটিয়ে কেটে পড়েন মন্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা। এরপর পদযাত্রীদের পুলিশ ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। কিন্তু পুলিশের বাধা ঠেলে পদযাত্রীরা ব্যারিকেড উপড়ে  ফেলেন। তখন হিমন্তের পুলিশ পদযাত্রীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বদের বেছে বেছে আক্রমণ শুরু করে। ব্যারিকেডের বাঁশে পদযাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে মারপিট করে পুলিশ। পদযাত্রায় অংশ নেওয়া মহিলাদের উপর পুরুষ পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশের আক্রমণের মুখে পড়েও পদযাত্রীরা এগিয়ে যান। পদযাত্রীদের জেদি মনোভাব দেখে একসময় পুলিশও সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। এরপর  রাহুল গান্ধীর কনভয় এগিয়ে যায়। কিছু পথ এগোনোর পর কনভয় থামিয়ে  বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, হিমন্তবিশ্বের স্বৈরাচারী শাসনের নমুনা দেখছে সারা দেশ। ‘আমরা ব্যারিকেড ভাঙবো। কিন্তু মোদী-শাহ-হিমন্তের মতো আইন ভাঙব না।’ রাহুল গান্ধী আরও বলেন, গুয়াহাটিতে বিজেপি নেতারা মিছিল করতে পারে, আরএসএস মিছিল করে। বিরোধীদের মিছিল করতে দিচ্ছে না আসাম সরকার। উলটে পুলিশ, গুন্ডা লেলিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন, শারীরিক আক্রমণ করছেন, রক্ত ঝারাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের ন্যায় যাত্রা আটকাতে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। কিন্তু আমরা এতদিন ধরে তা সহ্য করছি। এর মানে আমরা দুর্বল নই। ব্যারিকেড ভেঙেই এগোবে ন্যায় যাত্রা। আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া ভূপেন বরা বলেন, হিমন্তবিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী নয়, উনি একজন গুন্ডা। রাজ্যটাকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। জমি, বাগান সব লুট করছেন। কয়লা, বালি, পাথর, সুপারি ইত্যাদি থেকে মাসে দুশো কোটি কাটমানি খাচ্ছেন হিমন্ত। নিজের স্ত্রীর নামে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প থেকে কয়েক কোটি নিয়েছেন। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ সরব হয়ে উঠেছেন দেখে পদযাত্রার উপর পুলিশ, পোষা গুন্ডা লেলিয়ে দিয়েছেন। 
এরপর কইনাধরা, বেলতলা, গুয়াহাটি হয়ে হাজোতে গিয়ে পদযাত্রা সমাপ্ত হয়। হাজোতে সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল বলেন,  আরএসএস’র মতাদর্শের বিরুদ্ধে এই ন্যায় যাত্রা। তাই নাগপুরের নির্দেশে এই যাত্রা আটকানোর চেষ্টা করছেন হিমন্তবিশ্ব। তিনি হিমন্তকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ মুখ্যমন্ত্রী আখ্যা দিয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পদযাত্রা আটকানোর যত চেষ্টা করছেন তত আমাদের ফায়দা হচ্ছে। ন্যায় যাত্রা ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে। বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে? এই প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, নির্বাচনের পর জোটের নেতারা বসে ঠিক করবেন।

Comments :0

Login to leave a comment