ইউক্রেন ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ যায় আমেরিকার যুদ্ধ ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলির পকেটেই। মার্কিন সংবাদ প্রতিষ্ঠান সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন মার্কিন ডেপুটি স্বরাষ্ট্রসচিব ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
এই যুক্তিতেই মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের আর্থিক বরাদ্দে অনুমোদন চাইছে জো বাইডেন প্রশাসন।
নুল্যান্ড বলেছেন, ইউক্রেন ত্রাণের বরাদ্দ অর্থ দিয়ে আমেরিকার মাটিতে অস্ত্র সহ অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি হয়। তাই ইউক্রেনকে টাকা বরাদ্দ করার অর্থ, ঘুরিয়ে মার্কিন অর্থনীতিতেই টাকার জোগান বাড়ানো।
মার্কিন সংসদে ইউক্রেন ত্রাণের বিল আটকে রেখেছে বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি। সেই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে সিএনএন’কে ন্যুলান্ড বলেছেন,‘‘আমার স্থির বিশ্বাস বিল পাশ হয়ে যাবে, কারণ এর সঙ্গে মার্কিন অর্থনীতির স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন ত্রাণ প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থ সরাসরি মার্কিন অর্থনীতিতেই ঘুরে আসছে। সেই টাকায় আমেরিকার বিভিন্ন কারখানায় অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। ৪০টি রাজ্যেই এরফলে উপযুক্ত বেতনে শ্রমিক নিয়োগ হবে।’’
আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের আনা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি ত্রাণ প্যাকেজ আটকে দিয়েছেন রিপাবলিকানরা। শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে রফাসূত্র বের করা সম্ভব হয়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন শুরু হলে ফের বিল পাশের জন্য ঝাঁপাবে বাইডেন প্রশাসন। এবং বিল পাশের জন্য রিপাবলিকানদের সমর্থন আদায়ের জন্যই এই মন্তব্য করেছেন নুল্যান্ড।
নুল্যান্ডের পাশাপাশি আমেরিকার স্বরাষ্ট্র সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ অর্থের ৯০ শতাংশ খরচ হয় আমেরিকায়। সেই টাকাতেই তৈরি হয় যুদ্ধের সরঞ্জাম।’’ ২০ ডিসেম্বরের সাংবাদিক বৈঠকে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘‘ইউক্রেন ত্রাণের পরিমাণ বাড়লে তা মার্কিন বাণিজ্যের জন্য সহায়ক হবে। একইসঙ্গে মার্কিন সমাজেও তার সদর্থক প্রভাব পড়বে। শক্তিশালী হবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি।’’
জার্মানির কিয়েল ইন্সটিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি অবধি ইউক্রেনকে ত্রাণ হিসেবে ৭৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। তারমধ্যে সামরিক সহায়তার পরিমাণ ৪৬.৬ বিলিয়ন ডলার।
যদিও ইউক্রেনের দাবি, মার্কিন ত্রাণের পরিমাণ একেবারেই যথেষ্ট নয়। পশ্চিমী বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্থিক সহায়তা মিলছে না। গত সপ্তাহে আমেরিকার বেশ কয়েকজন সাংসদ বা সেনেটর ইউক্রেন সফরে যান। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনস্কি তাঁদের বলেন, ‘‘আমেরিকা যদি সঠিক পরিমাণে ত্রাণ না পাঠায়, তাহলে রাশিয়ার কাছে যুদ্ধে হেরে যেতে পারে ইউক্রেন।’’
রাশিয়ার তরফে আমেরিকা সহ পশ্চিমী বিশ্বের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘‘নিজেদের স্বার্থে কিয়েভকে ত্রাণ পাঠাচ্ছে আমেরিকা সহ পশ্চিমী বিশ্ব। এরফলে অপ্রয়োজনীয় ভাবে সংঘাতকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনকে ত্রাণ পাঠানো এবং ঘুরিয়ে প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহুজাতিকদের মুনাফা নিশ্চিত করতে চাইলেও, আমেরিকার জনসাধারণের একটা বড় অংশ এই যুদ্ধ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হ্যারিস পোল এবং কুইন্সি ইন্সটিটিউটের করা সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ৪৮ শতাংশ আমেরিকান চাইছেন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চালু হোক, এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথ তৈরি হোক। মাত্র ২২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ওয়াশিংটনের উচিত শর্তহীন ভাবে কিয়েভকে সামরিক সাহায্য করে যাওয়া।
Comments :0