এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বসু বলেন, রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির দ্বৈরথ ভাঙার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লড়াই জোরদার করতে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করেছে বামফ্রন্ট। তাই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে কিছু সময় লেগেছে। আমরা এসইউসিআই’র সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তাঁরা একসঙ্গে লড়াই করতে রাজি হননি। সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা সরাসরি আমাদের সঙ্গে সমঝোতায় না এলেও জানিয়েছেন, যেখানে তাঁদের প্রার্থী থাকবে না, সেখানে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থন জানাবেন।
আইএসএফ’র সঙ্গে জটিলতা তৈরির প্রশ্নে বসু স্পষ্ট করেছেন, আইএসএফ নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। একাধিকবার বৈঠকে বসার কথা থাকলেও তাঁরা অনুপস্থিত থেকেছেন। আলোচনা প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই বৃহস্পতিবার একতরফা ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে আইএসএফ। শুরুতে বহু আসনের দাবি জানালেও আইএসএফ’র দাবি এসে দাঁড়ায় ৮টি আসনে। ৮টি লোকসভা আসন মানে ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্র। প্রতিটি লোকসভায় গড়ে ১৫০০ বুথ রয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ হাজারের বেশি বুথ। এই সংখ্যক বুথে ভোট করানোর সংগঠন কোথায় আইএসএফের?
বসুর স্পষ্ট বক্তব্য, আইএসএফ যখন বুঝল বামফ্রন্টের থেকে ব্যাপক সংখ্যক আসন পাওয়া যাবেনা বুঝতে পেরেই জোট ভেঙেছে আইএসএফ। এবং দায় এড়াতে বলা হচ্ছে জোট ভাঙার জন্য বামেরা দায়ী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বসু পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, বামেরা কিভাবে জোট ভাঙার জন্য দায়ী হতে পারে? আমাদের সন্দেহ আইএসএফ প্রথম থেকে আন্তরিক ছিল না। বামপন্থীরা বাস্তবতা বুঝে রাজনীতি করেন। আমি সংবাদমাধ্যম থেকে শুনলাম, আইএসএফ বলেছে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে দীপ্সিতা ধরের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করা হলে তাঁরা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে না। এই দাবি ঠিক নয়।
তিনি সাংবাদিকদের তদন্তধর্মী সাংবাদিকতা করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, আপনারা তদন্ত করে দেখুন এআইএমআইএম প্রার্থী আইএসএফ’র টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে কিনা।
প্রসঙ্গত, ২০২১’র বিধানসভা নির্বাচনের কিছু মাস আগে গঠিত রাজনৈতিক দল আইএসএফ চলতি লোকসভা নির্বাচনে ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে আইএসএফ নেতৃত্ব দাবি করেছেন।
পুরুলিয়া লোকসভা নিয়ে এর আগে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেসের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। এদিন বসু স্পষ্ট করেছেন, সমঝোতা অনুযায়ী পুরুলিয়া কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে। ফরওয়ার্ড ব্লক ওই আসন দাবি করবে না। সব মিলিয়ে ১২টি আসনে প্রার্থী দেবে কংগ্রেস।
বসু এদিন বলেছেন, মথুরাপুর এবং জয়নগর কেন্দ্রের প্রার্থী পরবর্তীকালে দেওয়া হবে।
রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিমান বসু বলেছেন, তৃণমূলের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে না তাঁরা লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করতে নেমেছে। নির্বাচনী বন্ডের তথ্য থেকে সামনে এসেছে, কিভাবে বিজেপির তহবিলে টাকা ঠেলে ঘুরপথে ওষুধের দাম বাড়ানোর ছাড়পত্র আদায় করেছে ওষুধ কোম্পানিগুলি। এই জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে তৃণমূল চুপ। কারণ তৃণমূলও একই কায়দায় নির্বাচনী বন্ডে টাকা তুলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। রাজ্যে কাজ নেই। তাই লক্ষ লক্ষ যুবক কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন। আর দেশের নিরিখে কাজের বাজারের ছবি আরও করুণ। বৃটিশ ভারতের থেকেও বর্তমানে ভারতে অর্থনৈতিক অসাম্য বেশি।
Comments :0