মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারী বহুজাতিক সংস্থা বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে গাফিলতির বড়সড় অভিযোগ তুলেছিলেন সংস্থার প্রাক্তন কর্মী জন বার্নেট। নিজের অভিযোগে অনড় থাকায় বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকে আইনী যুদ্ধে জড়িয়েও পড়েন বার্নেট। মামলার শুনানিতে যোগ দিতে এসে আমেরিকার সাউথ ক্যারোলাইনা প্রদেশে রহস্যজনক ভাবে মারা গেলেন ‘হুইসেলব্লোয়ার’ বার্নেট।
সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটন কাউন্টির করোনার সোমবার বিবিসি’কে জানিয়েছেন, মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বার্নেট। যদিও বার্নেটের মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। একটা অংশের দাবি, বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর গাফিলতির অভিযোগ এনেছিলেন বার্নেট। তাই তাঁর মুখ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বোয়িং সংস্থায় ৩ দশকের বেশি সময় কর্মরত ছিলেন জন বার্নেট। তিনি ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর নেওয়ার পরে বোয়িংয়ের প্রাক্তন কোয়ালিটি ম্যানেজার বার্নেট অভিযোগ করেন, বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানে বিস্তর গলদ রয়েছে। মুনাফা বাড়ানোর যাত্রী সুরক্ষার সঙ্গে আপোষ করেছে সংস্থা।
প্রসঙ্গত, ড্রিমলাইনার ৭৮৭ বিমান দূরপাল্লার আন্তর্জাতিক উড়ানে ব্যবহার করা হয়। সংস্থার তরফে এই বিমানটিকে অন্যতম সেরা যাত্রীবাহী বিমান বলেও দাবি করা হয়।
২০১৯ সালে বিবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার্নেট অভিযোগ করেছিলেন,‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্বল যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে বিমান তৈরিতে। আমি ২০১০ সাল থেকে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার প্রকল্পের কোয়ালিটি ম্যানেজার ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা, বিমানের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে আপোষ করা হয়েছে।’’
বার্নেটের অভিযোগ, ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের ২৫ শতাংশ অক্সিজেন মাস্ক আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করবে না। মাঝ আকাশে হঠাৎ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বড় অংশের প্রাণহানী ঘটতে পারে অক্সিজেনের অভাবে।
তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিমান তৈরির কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে সুরক্ষার সঙ্গে আপোষ করা হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে কারখানা থেকে ত্রুটিপূর্ণ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ গায়েব হয়ে গিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, সেগুলি বিমান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে গোপনে।’’
বার্নেট জানিয়েছিলেন, ‘‘মুনাফার পরিমাণ বাড়াতে বিমান তৈরিতে জঞ্জালের টিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছে বোয়িং। আমি আমার সিনিয়রদের এই তথ্য জানালেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি।’’
বোয়িং কোনও ব্যবস্থা না নিলেও আমেরিকার ফেডেরাল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বার্নেটের একাধিক আশঙ্কাকে সত্যি বলে মেনে নেয়।
স্বাভাবিক ভাবেই সেই বার্নেটের হত্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
Comments :0