CABLE OPERATORS PROTEST

জীবিকা বাঁচানোর তাগিদে পথে নামলেন কেবল টিভি অপারেটররা

রাজ্য কলকাতা

cable operators reliance jio airtel

এয়ারটেল এবং জিও’র মতো বৃহৎ সংস্থাগুলি ক্ষুদ্র ও মাঝারি কেবল টিভি অপারেটরদের জীবিকার উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। কেবল টিভি অপারেটরদের ব্যবসা নষ্ট করার জন্য অনৈতিক কৌশলও নিচ্ছে এই কর্পোরেট সংস্থাগুলি।  রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার সবটা দেখেও চুপ। বরং কেবল টিভি’র ক্ষেত্রে কর্পোরেট পুঁজিকে অবাধে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে সরকারি ভাবেই। তারফলে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছেন এরাজ্যের অন্ততপক্ষে ৮০ হাজার ক্ষুদ্র এবং মাঝারি কেবল টিভি অপারেটর। এই অভিযোগ তুলে বুধবার বিধাননগরের ইনফিনিটি ভবনে এয়ারটেলের ইস্টার্ন জোনের সদর দপ্তরে বিক্ষোভ দেখালেন রাজ্যের কেবল টিভি অপারেটররা। তাঁদের দাবি, কেবল অপারেটরদের সঙ্গে নিয়েই ব্যবসা করতে হবে বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজিকে। 


কেবল অপারেটরদের বক্তব্য, ৩০-৩২ বছর ধরে রাজ্যে কেবল টিভি শিল্প গড়ে তুলেছেন তাঁরা। বর্তমানে সেখানে বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটছে। এক্ষেত্রে তাঁরা কাঠগড়ায় তুলছেন মূলত এয়ারটেল এবং রিলায়েন্স জিওকে। কেবল অপারেটরদের স্পষ্ট অভিযোগ, অন্যান্য এমএসও এবং আইএসপি সংস্থাগুলি কেবল অপারেটরদের সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা করলেও জিও এবং এয়ারটেল কেবল অপারেটরদের এড়িয়ে ব্যবসা করতে আগ্রহী। একইসঙ্গে কেবল অপারেটরদের ব্যবসা নষ্ট করতে একাধিক অনৈতিক পন্থাও এই কর্পোরেট সংস্থাগুলি নিয়েছে। এর ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছেন ৮০ হাজারের বেশি কেবল টিভি অপারেটর, এবং তাঁদের উপর নির্ভরশীল কমবেশি ১০ লক্ষ পরিবার। 


কীভাবে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি অপারেটরদের পেশা ধ্বংস করছে এয়ারটেল এবং জিও? কেবল অপারেটরদের অভিযোগ, এই দুই সংস্থা জোর দিচ্ছে কেবল অপারেটর দের এড়িয়ে ডাইরেক্ট টু হোম প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ায়। অপারেটরদের অভিযোগ, এই কাজে তাঁদের সরাসরি সাহায্য করছে বিজেপি এবং তৃণমূল সরকার। 


কীভাবে দুই সরকার কেবল অপারেটরদের খাদের কিনারায় দাঁড় করানোর কাজ ত্বরান্বিত করছে? 
এদিনের বিক্ষোভের মূল সংগঠক বিশ্ব বাংলা কেবল টিভি অপারেটর ইউনিয়নের সভাপতি শঙ্কর মন্ডলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিকম নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ট্রাই ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এনটিও-১ নামের একটি আইন পাশ করায়। প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, এরফলে কেবল টিভি’র গ্রাহকরা সস্তায় পরিষেবা পাবেন। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটা হয়েছে। গ্রাহকদের প্যাকেজের মাধ্যমে কেবল পরিষেবা নিতে হচ্ছে, এবং তারফলে তাঁদের খরচ বাড়ছে। এরফলে আগে যেই কেবল অপারেটরের অধীনে ১০০০ সেট টপ বক্স চলত, এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০০তে।  ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এনটিও-২ লাগু হবে। তারফলে কেবল পরিষেবার খরচ গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে গ্রাহকদের স্বল্পমূল্যের পরিষেবার টোপ দিয়ে ব্যবসা বাড়াচ্ছে জিও এবং এয়ারটেলের মতো সংস্থাগুলি।


কেবল অপারেটরদের আরও অভিযোগ, বিজেপির মতোই এই বৃহৎ পুঁজির সংস্থাগুলিকে সাহায্য করছে তৃণমূলও। এই সংস্থাগুলির মোট ওভারহেড তারের জন্য সাধারণ কেবল অপারেটরদের সরু তার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলরদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। বহুক্ষেত্রে স্থানীয় থানার মাধ্যমেও ক্ষুদ্র এবং মাঝারি কেবল অপারেটরদের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাঁদের তার টাঙাতে দেওয়া হচ্ছে না। 


বহু কেবল অপারেটরের বয়স ৬০-৬৫ বছর ছাড়িয়েছে। হঠাৎ জীবিকা হারালে বিকল্প কিছু খুঁজে নেওয়াও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। 


এদিন কেবল অপারেটরদের ৭ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল এয়ারটেলের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের বক্তব্য এয়ারটেলের আধিকারিকরা কিছুটা সময় চেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও সমস্যার সমাধান না হলে সারা রাজ্যে এই দুই সংস্থার পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ কেবল অপারেটররা।

Comments :0

Login to leave a comment