SUICIDE DUE TO POVERTY

অনাহারের জ্বালায় দম্পতি আত্মঘাতী

রাজ্য জেলা

suicide poverty coochbehar bengali news

জয়ন্ত সাহা: মেখলিগঞ্জ 
 

গ্রামবাংলায় অনাহারের ভয়াবহ চিত্র আবার উঠে এল কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে। অভাবের তাড়নায় দুই সন্তানকে রেখে এবার এক হরিজন দম্পতি আত্মহত্যা করলেন মেখলিগঞ্জের রানিরহাট এলাকায়। শুক্রবার সকালে ওই দম্পতিকে ঘরের ভিতরই মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের লোকজন। 

মৃত দম্পতির নাম রাজকুমার হরিজন (৩৫) ও মঞ্জু হরিজন (২৬)। তাঁদের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে, ১০ বছরের খুশি ও ৬ বছরের রাশি। সামান্য জুতো ও ছাতা সেলাই করে পরিবার প্রতিপালনের চেষ্টা করতেন রাজকুমার। 

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই কাজ করে দুই সন্তানের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে পারছিলেন না বাবা রাজকুমার হরিজন। নিজেও ভুগছিলেন অপুষ্টিতে। শরীরে বাসা বেঁধেছিল ক্ষয়রোগ। গ্রামে অন্য কাজও জুটছিল না। শেষ পর্যন্ত চরম হতাশায় স্বামী-স্ত্রী মিলে বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ।


গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ছ’টা নাগাদ পরিবারের লোকজন দেখতে পান, ওই দম্পতির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে শোওয়ার ঘরে। এরপর প্রতিবেশীরা ছুটে যান। খবর পেয়ে মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত ভার্মা।

মৃত যুবকের পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রাজকুমার হরিজন পেশায় ছিলেন চর্মকার। কিন্তু সেই কাজে রোজগার কমে এসেছিল। তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হতো। এই ঝামেলার জেরে স্ত্রী তাঁর বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছেন কয়েকবার। স্বামী ও সন্তানদের টানে ফের ফিরেও আসতেন তিনি।

আত্মঘাতী মঞ্জু হরিজনের মা গন্ধেশ্বরী হরিজন বললেন, ‘‘ওদের সংসারে অভাব লেগেই ছিল। জামাইয়ের আয় ছিল সামান্য। অন্য কোন কাজও পেত না।’’ রাজকুমারের মা সুখমণি হরিজন জানালেন, তাঁর ছেলের টিবি রোগ ছিল। কীভাবে এই ঘটনা হলো, তা বুঝতে পারছেন না। তাঁদের অভাবের সংসার ছিল। বাচ্চাদুটোর এখন কী হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন রাজকুমারের মা।


রোজগারের অভাবে অনাহারে দিনের পর দিন কাটানো আর তার জেরেই এই আত্মহত্যা, পরিবারের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ও নিন্দায় সরব হয়েছেন এলাকাবাসী। তবে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের রানীরহাটে এই জোড়া আত্মহত্যা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলতে রাজি হননি তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, দু’জনের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।

সারা ভারত কৃষকসভার জেলা সভাপতি বিপিন শীল বলেছেন, কোচবিহারের গ্রামে গ্রামে কাজ নেই। অনাহারে মানুষের মৃত্যুর এরকম ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন সেগুলিকে ধামাচাপা দেয়। এর আগেও মেখলিগঞ্জ শহরের বুকে এমন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। অনাহারে মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এলে তখন প্রশাসনের টনক নড়ে। 

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের প্রথম দিনেই এই আত্মহননের ঘটনা প্রমাণ করল, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি গত ১০ বছর ধরে গরিব মানুষের ভরসাস্থল নেই। পঞ্চায়েতগুলি হয়ে উঠেছে লুটেরাদের স্বর্গ।

Comments :0

Login to leave a comment