প্রয়াত হলেন সিপিআই(এম) দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্পাদক, প্রাক্তন মন্ত্রী, শ্রমজীবীদের কাছের মানুষ ও গণআন্দোলনের নেতা কমরেড নারায়ণ বিশ্বাস। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭।
প্রয়াত কমরেড বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে গত ২৩ নভেম্বর গঙ্গারামপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতিতে তাঁকে গত ২৬ নভেম্বর কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের লিভার এন্ড ডাইজেস্টিভ ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার সকাল সড়ে ছটা নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এসএসকে এম হাসপাতাল থেকে তাঁর দেহ সিপিআই(এম) রাজ্য পার্টি দপ্তরে নিয়ে আসা হয়।
সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহমদ ভবনে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, গণশক্তির সম্পাদক শমীক লাহিড়ী সহ নেতৃবৃন্দ।
সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পরে তাঁর দেহ নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট জেলা অফিস যামিনী মজুমদার ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন পার্টি নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার রাতে জেলা অফিসে শায়িত থাকবে কমরেড নারায়ণ বিশ্বাসের মৃত দেহ। বুধবার সকালে পার্টি ও গণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কর্মী সহ বিভিন্ন অংশের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রেয়ী থানার সগুনা গ্রামে কমরেড নারায়ণ বিশ্বাসের পৈতৃক বাস ভূমি। তাঁব বাবা এপার বাংলায় এসে প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হন। কিশোর বয়সে পিতৃ বিয়োগের কারণে আর্থিক অনটনে বিভিন্ন উপার্জনের কাজে যুক্ত হন। প্রয়াত কমরেড সত্তর দশকের প্রথম দিকে পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পার্টিতে আসেন। ১৯৭৫ সালে জরুরী অবস্থাকালীন তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন। ১৯৮০ সালে গঙ্গারামপুর সিপিআই(এম) আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে অবিভক্ত দিনাজপুরের জেলা কমিটির সদস্য হন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯-২০০১ পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন।
২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের রাষ্ট্র মন্ত্রী ও পরবর্তীতে ২০০৬ সালে জয়ী হয়ে পরিবহণ দপ্তরের রাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের পূর্ণ মন্ত্রী হন। ২০১৫ সাল থেকে তিন বার দক্ষিণ দিনাজপুর সিপিআই(এম) জেলা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু সেই দায়িত্ব পালন করেন। সিআইটিইউ জেলা সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। কৃষক, শ্রমিক সহ গণ আন্দোলনের নেতৃত্বে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার উন্নয়নে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
Comments :0