CPI(M) NOMINATION IN COOCH BEHAR

লুট আটকে এবার হিসাব নেওয়ার নির্বাচন

রাজ্য জেলা

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS কোচবিহার সদরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা।

জয়ন্ত সাহা: কোচবিহার


ব্লক ১২টি। নির্বাচনের দিন সশস্ত্র তৃণমূল দখল করে নিয়েছিল ১০টি ব্লক। বাকি ২টিতেও গ্রামবাসীরা প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তবু সেখানেও দেদার ছাপ্পা হয়েছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ছিল কোচবিহারের ছবি।

কিন্তু সেই বেপরোয়া দখল কেন? উত্তর দিয়েছে গত পাঁচ বছর। লুট চলেছে নির্বিচারে, পাঁচ বছরে। সেই লুটের জন্যই ২০১৮-র দখল। 
কোচবিহারের বানেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক আশুতোষ দত্ত কী জেনেছেন? তিনি তাঁর ছেলে আশিস দত্তের জন্য বানেশ্বর সারথিবালা মহাবিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি’র চাকরির জন্য তৃণমূলের দাপুটে নেতা জেলা পরিষদের সদস্য পরিমল বর্মণকে ৭.২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। চাকরি হয়নি, টাকাও ফেরত হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক দুজনকেই লিখিত অভিযোগ করেও টাকা ফেরত পায়নি ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

অর্থাৎ চুরি শুধু পঞ্চায়েতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দুর্নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির নয়া রেকর্ড গড়ে মেখলিগঞ্জের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পদ থেকে অপসারিত হলেও প্রশাসন তদন্তের পর তদন্ত করেও একজনকেও গ্রেপ্তার কিংবা টাকা কোনটাই উদ্ধার করেনি। কেন্দ্রীয় তদন্ত টিম ফি বছর জেলায় এলেও অনিয়মের গ্রাম পঞ্চায়েতে তারা একবার ও আসেনি। ‘সেটিং হয়েছে’ — গ্রামবাসীদের উপলব্ধি মুখে মুখে ঘুরছে। 


ছোটো শালবাড়ির রমজান আলি, মনসুর মিঁয়ারা বলছেন,‘‘গতবার তো পঞ্চায়েতের ভোট লুট হল। ওদের শাস্তিটা বকেয়া আছে। এবারে ভোট হবে। হিসেব বুঝিয়ে দেব। দুর্নীতির জবাব দিতে মুখিয়ে রয়েছেন,মাথাভাঙা-২ ব্লকের তৃণমূলের কর্মীরাও। অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। গত পঞ্চায়েত ভোটে ভোট লুটে সামনের সারিতে ছিলেন অমর রায়, অনিল দাসের মত জনা তিরিশেক যুবক। তাঁরাই পরে দেখেছেন দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি অঞ্চল সভাপতি করতে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সে সময়ে রাজ্যের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেও লাভ কিছু হয়নি। ওঁরাই এবার তৃণমূলকে এলাকা থেকে মুছে দিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন আদাজল খেয়ে।

গত পাঁচ বছরে বেপরোয়া হলেও তৃণমূল চুরি শুরু করেছে তাদের শাসনের গোড়া থেকেই। তাই দশ বছর পেরিয়ে গেলেও শিতলকুচি পঞ্চায়েত সমিতির ‘পুকুর চুরির’ ৩.১৪ কোটি টাকার কি হল সেটা অজানাই রয়ে গেছে ছোটশালবাড়ি, লালবাজার,শিতলকুচি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের। রাজ্য সরকার বাধ্য হয়ে সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল। সে তদন্তের রিপোর্ট দশ বছরেও প্রকাশ্যে আসেনি।

শিতলকুচির প্রাক্তন বিধায়ক হরিশ বর্মণ আরটিআই করে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনেছিলেন। সিআইডি’র আধিকারিকেরা ছোটশালবাড়িতে এসে ৪০ জন জবকার্ডধারীকে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কাজের টাকা পেয়েছেন কিনা? দশ বছর আগে যাদের নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল সেই লাইলি বিবি, নুরবানু বেওয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমরা তো সিআইডি-কে বলেছি। আমরা কাজ করিনি। টাকাও পাইনি। কোথায় তারপরেও তো কারুর শাস্তি হল না? পুকুর ও হল না।’’ 

ছোট শালবাড়ির তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান আনোয়ারা বিবি বলেন,‘‘সিআইডি আমায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পুকুর তো পঞ্চায়েত সমিতি করার কথা ছিল। আমি কিছুই জানি না।’’ ৫২টি পুকুরের মধ্যে মাত্র ৩টে পুকুর খুঁজে পেয়েছিলেন তদন্তকারী দল। পুকুর আছে বিডিও-র ওয়েবসাইটে। আর কোটি কোটি টাকা গিয়েছে শাসক দলের নেতাদের পকেটে।


দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে জেলার শাসক দলের প্রাক্তন সভাপতি থেকে প্রাক্তন মন্ত্রী। গ্রাম থেকে শহর তাদের নামে পোস্টার ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে। সবই ধামাচাপা পড়েছে। কোচবিহার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সদ্য প্রাক্তন চেয়ারপার্সন কল্যাণী পোদ্দারের বিরুদ্ধে নামে বেনামে প্রায় ১৫ কোটি টাকার সম্পত্তির একটি তালিকা জমা পড়েছে মাথাভাঙার মহকুমা শাসকের কাছে। সেখানে উল্লেখ আছে ওঁর কোচবিহার, শিলিগুড়ি, কলকাতা এমনকি দিল্লিতেও বিলাস বহুল ফ্ল্যাট আছে। আছে ১৮টি জমির মালিকানা! অভিযোগ গিয়েছে রাজ্যপালের কাছেও। ২০১১ সাল থেকেও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এঁর সম্পত্তির পরিমাণ।

সোমবার মনোনয়নপত্র জমা চলাকালীন মাথাভাঙা-১ ব্লকের বিডিও সম্বল কুমার ঝা জানিয়েছেন, ‘‘বৈরাগীহাট পঞ্চায়েতে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের কয়েক লক্ষ টাকার কাজ না করিয়েই টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে। মহকুমা শাসকের গড়া ৫ সদস্যের কমিটি রিপোর্ট দেবার কথা। বৈরাগীহাটের যে নাগরিকেরা লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তাদের আশঙ্কা পঞ্চায়েত ভোট শেষ হলে এই তদন্তও শিতলকুচির পুকুর চুরির মতো ধামাচাপা পড়ে যাবে।’’

তা নির্ভর করছে ৮ জুনের উপর। মানুষ ভোট দিতে মরিয়া। দিতে পারলে? সব ‘পুকুর’ খোঁজা হবে।

Comments :0

Login to leave a comment