FAVELA AND ANTONY

হাজার ওয়াটেও ‘ফ্যাভেলা’ ভুলছেন না অ্যান্টনিরা

খেলা

‘‘ ওন মাই বুট্‌স, বিফোর এভরি ম্যাচ, আই রাইট মাইসেল্ফ আ লিটল রিমাইন্ডার।

—ফ্যাভেলা। 

হোয়েন আই টাই মাই লেসেস, আই রিমেমবার। আই রিমেমবার এভরিথিং!’’ 

সোশাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে এমনই পোস্ট। করেছেন নেমারের সতীর্থ অ্যান্টনি ম্যাথিউজ ডস স্যান্টোস। অ্যান্টনি বলছেন, ‘‘প্রতিটি ম্যাচের আগে আমার এই বুট অতীতকে মনে করায়। ‘ফ্যাভেলা’কে মনে করায়। আমি সব কিছু মনে রেখেছি।’’

কী ‘ফ্যাভেলা’? ব্রাজিলের চলতি ভাষায় ফ্যাভেলা মানে গাছের  তলার ছাউনি। 

ব্রাজিলের রাজধানী সাও পাওলো শহরের কাছে ইনফারনিনহো নামে এক ফ্যাভেলায় জন্ম অ্যান্টনির। ইনফারনিনহো- নামেই যেন জড়িয়ে রয়েছে অবজ্ঞা। ফ্যাভেলা, পর্তুগিজ ভাষায় যার মানে ফ্যাভেলা গাছের তলার আস্তানা। খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাসের এলাকাই ‘ফ্যাভেলা’। কতকটা আমাদের চেনা বস্তি অঞ্চল। একের পর এক আর্থ সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়ে, যেই আস্তানাগুলোয় গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হয় একের পর এক প্রজন্ম। 

অনেক না পাওয়ার মধ্যেও  ফ্যাভেলা জুড়ে জন্ম নেয় কিছু স্বপ্ন, সমস্ত অপ্রাপ্তিকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন, এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

জন্ম নেয় কিছু অ্যান্টনি। জন্ম নিয়ে এসেছে কিছু অ্যান্টনি। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের উইঙ্গার।

বিশ্বকাপে নিজেদের গ্রুপের শেষ ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চকে পরখ করেন ব্রাজিলের কোচ তিতে। সেই ম্যাচে মাঠে নামেন অ্যান্টনি। তাঁর প্রথম দলেই থাকার কথা ছিল, কিন্তু চোটের জন্য সাময়িক ভাবে উল্টে  গিয়েছে যাবতীয় পরিকল্পনা। শনিবারের ম্যাচে মাঠে নেমে গোল না পেলেও, নজর কেড়েছেন তিনি। তাঁর বুটে লেখা ইংরেজি শব্দেই স্পষ্ট করে লেখা ‘ফ্যাভেলা’। 

ছোট্ট একটা ভুল হল লিখতে। 

অ্যান্টনি নজর কেড়েছেন এটা সত্যি। কিন্তু অ্যান্টনি কেবলমাত্র নিজের ‘পায়ের কাজের’ জন্য নজর কাড়েননি, নজর টানেননি। 

খেলার পাশাপাশি তিনি নজর কেড়েছেন নিজের ব্যক্তিত্বের জোরেও। যেই একরোখা, হার না মানা, বেপরোয়া ব্যক্তিত্ব তিনি অর্জন করেছেন নিজের শিকড় থেকে। 

নিজের ফ্যাভোলা থেকে। 

যেমনটা করেছেন এই ফ্যাভেলার অ্যান্টনি। অন্ধকার গলি, পচা জল জমে থাকা গ্যারেজ হয়ে নিওনে ভাসা রাজপথ, যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, খেলেছেন ফুটবল। অদম্য জেদে বাধ্য করেছেন সমালোচকদের নজর কাড়তে। তারফলে ধাপে ধাপে খুলে গিয়েছে সাও পাওলো অ্যাকাডেমি হয়ে অ্যাজাক্স অ্যামস্টার্ডামের দরজা। সেখান থেকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড হয়ে ব্রাজিলের জাতীয় দল। 

২২ বছরের জীবনে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন অ্যান্টনি। বিলাস ব্যাসনের নরম গদি আঁটা বিছানায় শুয়ে চাইলেই ভুলে যেতে পারতেন অনেক কিছুই। ভুলছেন না। তাই বিশ্বকাপের হাজার ওয়াটের আলোর ঝলকানির মাঝেও অ্যান্টনিরা নিজের বুটে ‘ফ্যাভেলা’ লিখে ময়দানে নামতে পারেন। 

এমনই জীবন থেকে ফুটবল মাঠ অবশ্য অনেককে হাজি করিয়েছে বিশ্বের জনমঞ্চে। পেলে থেকে মারাদোনা, রিভাল্ডো থেকে রোনাল্ডিনহো বা আজকের গ্যব্রিয়েল জেসুস, রিচার্লিসনরা। 

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment