শুক্রবার সকালে ভাঙড় কলেজে প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন সকালে তিনি ভাঙড়ে যান। ঘুরে দেখেন বিজয়গঞ্জ বাজার। কথা বলেন সাধারণ মানুষের সাথে। বৃহস্পতিবার এই বিজয়গঞ্জ বাজারের সামনে সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ কর্মীদের আটকানো হয় মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময়। চলতে থাকে গুলি, বোমা। রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যম। পুলিশের সামনে মৃত্যু হয়েছে একজন আইএসএফ কর্মীর।
রাজ্যপাল যখন ভাঙড় কলেজে পুলিশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করছেন তখন কলেজের বাইরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য জমায়েত করেন আইএসএফ কর্মীরা। তাদের দাবি তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাদের মনোনয়ন দিতে দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন পত্র হাতে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে তারা দাবি জানান জাতে তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। রাজ্যপালের সঙ্গে দুজন আইএসএফ কর্মী দেখাও করেন। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ওই আইএসএফ কর্মীরা জানিয়েছেন যে তারা রাজ্যপালের কাছে মনোনয়ন পর্বে শাসক দলের পক্ষ থেকে যেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হয়। তাদের কথায় রাজ্যপাল তাদের সব কথা শুনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভাঙড় কলেজে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ভাঙড় ১ এবং ভাঙড় ২ ব্লক অফিসের গিয়ে আধিকারিদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল।
কাশীপুর থানার পুলিশ শোনপুকুরে এসে আইএসএফ ও সিপিআই(এম) কর্মীদের আশ্বাস দিয়েছিল, যে বিডিও অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দিয়ে যান, কোনও অসুবিধা হবে না।
প্রার্থীদের সঙ্গেই আসছিলেন পেশায় রঙের মিস্ত্রি মহিউদ্দিন মোল্লা। আইএসএফ কর্মী হিসাবেই পরিচিত এলাকায়। বিজয়গঞ্জ বাজার সংলগ্ন মেলা মাঠের কাছে তাঁদেরকে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ সরে যায়। মেলা মাঠের আগে নিমতোড়িয়া মোড়ের সামনে আগে থেকেই জড়ো হওয়া তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা আইএসএফ-কে আসতেই দেখেই গুলি চালায়। মহিউদ্দিন মোল্লার (২৪) মাথায় লাগে, ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু হয় তাঁর। গুলিবিদ্ধ হয়েই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও একজন আইএসএফ কর্মীর। মৃতের নাম সেলিম মোল্লা (২৫)। চালতাবেড়িয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এই যুবক। রাতে আরজিকর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
গত তিনদিনে একাধিকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ভাঙড়ে। খোদ ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা জীবনতলা, বাসন্তী থেকে দুষ্কৃতী বাহিনী নিয়ে এসে হামলা চালায়। লক্ষ্য একটাই, যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারে সিপিআই(এম) ও আইএসএফ!
খোদ মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত ভাঙড়ে তৃণমূলীদের সশস্ত্র, রক্তক্ষয়ী হামলা, সন্ত্রাসকে প্রকারান্তরে যেন বৈধতা দিয়েছেন। এদিন সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘যারা বিরোধী আছে ওখানে, নতুন জিতেছে (পড়ুন আইএসএফ) তারাই প্রথম গন্ডগোল করেছে পরশুদিন (পড়ুন মঙ্গলবার)। ওখানে ভাঙচুর, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমাদের তরফে কালকে (পড়ুন বুধবার) একটা প্রতিবাদ হয়েছে। যেটা সত্যি আমি বলব।’ অর্থাৎ বুধবার ভাঙড়-১-এ তাণ্ডবলীলা চলেছে, গুলি, বোমার বৃষ্টি হয়েছে, একজন বিরোধী প্রার্থীকেও মনোনয়ন দিতে দেয়নি শওকত, আরাবুল বাহিনী সেই ঘটনাকেই সামান্য ‘প্রতিবাদ হয়েছে’ বলে মনে করেন খোদ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ভাঙড়ের পরিস্থিতি আসলে কী তা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট।
Comments :0