Mallika Sarabhai

তিতুমীরের পরে এবার বাধা ‘মোদী সমালোচক’ মল্লিকাকে

জাতীয়

dancer Mallika Sarabhai

উৎপল দত্ত’র ‘তিতুমীর’ এর পরে এবার মল্লিকা সারাভাই। জগৎ বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীর অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হলো না, কারণ তিনি ‘মোদী বিরোধী’। তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল জেলায় রামাপ্পা মন্দিরে, যা ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট— সেখানে এই নৃত্যানুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডির মন্ত্রক থেকে ফোন করে বলা হয়, মল্লিকার অনুষ্ঠান বাদ দিতে হবে, না হলে সেখানে উৎসবটাই করতে দেওয়া হবে না। প্রতিবাদে আয়োজকরা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে পাশের মাঠে নিয়ে যান অনুষ্ঠান। সেখানেই শনিবার নৃত্যানুষ্ঠান করেন ৬৮ বছরের শিল্পী। চার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন সেই নৃত্যানুষ্ঠান দেখতে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ‘তিতুমীর’-এর নির্দেশক জয়রাজ ভট্টাচার্য রবিবার গণশক্তিকে বলেন, এটা লাগাতার, বারংবার হচ্ছে। একটা অসভ্য, পশ্চাৎমুখী সরকার যখন এইভাবে কাজ করে তখন যাঁরা প্রগতিশীল বলে দাবি করেন, তাঁদের সোচ্চার হওয়ার কথা। 


প্রাচীন রামাপ্পা মন্দির কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) আওতায়। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক হলো মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কাকাতিয়া হেরিটেজ। তারাই সারাভাইকে নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠান পরিবেশনের সম্মতি জানিয়েছিলেন মল্লিকা। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি কাকাতিয়া হেরিটেজ ট্রাস্ট কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডির অফিস থেকে একটি ফোন পান। রামাপ্পা মন্দিরে মল্লিকা সারাভাইকে নৃত্যানুষ্ঠান করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলা হয়, হয় নৃত্য শিল্পীদের তালিকা থেকে সারাভাইকে বাদ দিন, অথবা গোটা উৎসবটাই বাতিল করুন। 


২০০২ সালে গুজরাটে মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বে সংখ্যালঘু গণহত্যার সময় থেকেই নরেন্দ্র মোদীর কঠোর সমালোচক মল্লিকা সারাভাই। গত সপ্তাহেও কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে তিনি তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মোদীর। অনুষ্ঠান বাতিলের পরে মল্লিকা সারাভাই বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ফোনে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি চান না যে ‘মোদীর সমালোচক’ কেউ এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নিক। রামাপ্পা মন্দির ইউনেসকোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার বর্ষপূর্তির দিনেই এই অনুষ্ঠান ছিল। মল্লিকা সারাভাই বলেছেন, মন্ত্রী পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আমি অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্যেই আমাকে রামাপ্পা মন্দিরে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। 


কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করার পরিবর্তে অনুষ্ঠানের আয়োজক কাকাতিয়া হেরিটেজ ট্রাস্ট অনুষ্ঠানটি নিয়ে যায় কাছেই কুদা খোলা মাঠে। সেখানে নির্দিষ্ট দিনেই শনিবার সন্ধ্যায় হয় নৃত্যানুষ্ঠান। বিশ্বখ্যাত শিল্পী এবং তাঁর ট্রুপের অনুষ্ঠান দেখতে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের পরে মল্লিকা সারাভাই বলেছেন, তেলেঙ্গানা সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন সমস্ত ব্যবস্থা করেছিল অতি কম সময়ের মধ্যে। ৪ হাজার মানুষকে সেখানে সুষ্ঠুভাবে সামলেছে প্রশাসন। তারা এটাও নিশ্চিত করেছিলেন যাতে অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে। আরও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে প্রবীণ নৃত্যশিল্পী বলেছেন, বিজেপি সরকারের এই হাত মোচড়ানোর কৌশল দেখে আমার কেবল মজাই লাগে। এটা একটা বই নিষিদ্ধ করার মতো। যখন সরকার একটা বই নিষিদ্ধ করে তখন সকলেই দৌড়ায় সেই বই সংগ্রহের জন্য। আমার অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করলেও আরও বেশি বেশি করে মানুষ আমার সমর্থনে আসবেন এবং আমার অনুষ্ঠান দেখতে চাইবেন। একটি টুইটে তিনি বলেছেন, ওয়ারাঙ্গলে গত রাতে মন্ত্রীর নিষিদ্ধ করা আমার নৃত্যানুষ্ঠান দেখতে চার হাজারের বেশি মানুষ এলেন। বিশেষত তরুণরা। 


এই বিষয়টিকে বিশেষ উৎসাহজনক বলে মনে করছেন ‘তিতুমীর’ এর নির্দেশক জয়রাজ ভট্টাচার্য। তারপরেও খানিকটা হতাশার সুরে তিনি বলেন, কেন তিতুমীর বন্ধ করা হয়েছে সেটা সকলেই জানে। আমাদের তো বাদ দেওয়া হয়েছে, আমরা নাটক করতে দিল্লি যাচ্ছি না। কিন্তু যারা যাওয়ার সুযোগ পেলেন তারা তো প্রতিবাদে খুব সোচ্চার হলেন না। পঞ্চাশ-ষাট বা সত্তরের দশকে এইধরনের ঘটনা ঘটলে তো সমগ্র নাট্যজগৎ এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত। এখন তো তেমন কিছু দেখলাম না। প্রসঙ্গত, বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের একটি টুইটে এদিন আরও স্পষ্ট হয়েছে কেন ‘তিতুমীর’ মঞ্চস্থ করতে দেওয়া হল না দিল্লির অনুষ্ঠানে। তথাগত লিখেছেন, ‘বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিষ প্রচার এবং হিন্দু মুসলমান এই দু’ ধরনের বাঙালির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টর করায় তিতুমীর অগ্রগণ্য।’ তাঁকে নিয়ে ‘বাঙালি হিন্দুর আদিখ্যেতা ন্যক্কারজনক’ বলেও মন্তব্য করেছেন তথাগত। 


প্রসঙ্গত ভারতনাট্যম ও কুচিপুরি নৃত্যশিল্পী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং হিন্দুত্বের অভিযানের প্রবল বিরোধী। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মল্লিকা বলেছেন, আমি কখনোই ভাবিনি ভারতে আমাদের সংহতি সৌহার্দের আদর্শ পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বহু মানুষ ব্র্যান্ড তৈরির বিজ্ঞাপনের এভাবে যে অন্ধ হয়ে যাবে তা কোনদিন ভাবিনি। তিনি বলেন, যেখানে হিন্দুধর্মে সব সময় প্রশ্ন করায় উৎসাহিত করার কথা বলা হয়। সেখানে হিন্দুত্বে কণ্ঠ রোধ করা হয়। এটাই হিন্দু আর হিন্দুত্বে পার্থক্য।

Comments :0

Login to leave a comment