নির্জলা শহর। জলের জন্য হাহাকার পরিস্থিতি। স্টকে থাকা জল দিয়ে আরো বড় জোর চারদিন চলবে। এই জল ফুরিয়ে গেলে চারদিন পর থেকে জলসঙ্কট আরো তীব্র হবে বলে শনিবার মেয়র খোদ স্বীকার করে নিলেন। আগাম কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আচমকাই শহরের পানীয় জল পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজ করতে গিয়ে রীতিমতো ল্যাজে গোবরে হয়ে পড়েছেন মেয়র।শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন নাগরিকেরা।
ফুলবাড়ি জল উত্তোলন কেন্দ্র শিলিগুড়ি শহরে জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তিস্তার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিস্তা সেচ খালের গজলডোবায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হওয়ায় তিস্তার লকগেটগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তিস্তা ক্যানেলে। এই কাজ চলাকালীন সময়ে তিস্তা সেচ খালে জল সরবরাহ বন্ধ থাকার কারনে এবং ফুলবাড়ি জল উত্তোলন কেন্দ্র তিস্তা নদীর বাঁধ সংষ্কার ও নদী থেকে পলি সরানোর কাজ শুরু হওয়ায় ১০ মে থেকে আগামী তিন সপ্তাহ ২৫মে পর্যন্ত শহরের পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে আগাম জানানো হয়েছিলো কর্পোরেশনের তরফে। কিন্তু নির্ধারিত দিনের তিনদিন আগে অর্থাৎ গত ৭মে থেকে শহর জুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শহরে সার্বিকভাবে জল সরবরাহে কোন অসুবিধা হবে না বলে কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ডের তরফে আশ্বাস দেওয়ার পরেও, গত কয়েকদিনে জল সঙ্কটের মুখে পর্যাপ্ত পরিমান পানীয় জল পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের ব্যর্থতার অভিযোগ মিলছে শহরবাসীদের কাছ থেকে।
পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ থাকার এই ১৫দিন সময়ে শহরের মহানন্দা নদীর জল পরিশোধন করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে জলের ট্যাঙ্ক ও পাউচ পাঠিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে বলে মেয়র জানিয়েছিলেন। কর্পোরেশনের নিজস্ব ২৫টি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। তাই ৪৭টি ওয়ার্ডের সবকটি ওয়ার্ডে কোনভাবেই জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। শহরবাসীদের অভিযোগ, ১০মে নয় অসহ্য গরমে শহর জুড়ে গত ৭মে থেকে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জল ছাড়া কিছুতেই চলছে না। গত চার পাঁচদিন ধরে পরিশ্রুত পানীয় জল নিয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছেন তারা। হয়রান হতে হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও পানীয় জল না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পানীয় জল নিয়ে শহর জুড়ে কালো বাজারির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। ২০টাকার জল দ্বিগুনেরও বেশী দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দাম বাড়িয়ে ৫০টাকা করা হয়েছে। এতো টাকা দিয়ে জল কিনে পান করা সব অংশের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পৌর প্রশাসন নির্বিকার। ১৫নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুলেখা মৌলিকের কথায়, এই বোর্ড আসার পর থেকেই জলের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। এইবার আজকে নিয়ে পাঁচদিন ধরে জল সমস্যায় রয়েছি। শুক্রবার থেকে জল আসবে না বলেই শুনেছিলাম। কিন্তু আমরা ওয়ার্ডবাসীরা তো তারও দুইতিন আগে থেকে জল পাচ্ছি না। জানি না এর থেকে কবে রেহাই পাবো।
গত কয়েকদিন থেকে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলের স্ট্যান্ড পোষ্টগুলিকে ঘিরে মানুষের উপছে পড়া ভিড়। ১০তারিখের আগে থেকেই ১৫, ৩৩, ৩৯, ২১, ৪০ , ৪১ নম্বর সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলকষ্টে ভুগছেন সাধারন মানুষ। চড়া রোদে সকাল থেকে তিন চার ঘন্টা লাইন দিয়ে খাবার জন্য জল নিচ্ছেন তারা। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনের দাঁড়িয়ে থাকার পরেও জলের খালি পাত্র নিয়েই ফিরে গেছেন। দিনের বেলাতে কোন কোন জায়গায় ক্ষানিকক্ষন জলের দেখা মিলেছে তো, বিকেলে সেই কলে জল আসছে না। অনেক আশ্বাসের বানী শোনানো হলেও শহরের জল সঙ্কটের বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই অন্য কথা বলছে। পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক হবে কবে প্রশ্ন জলযন্ত্রনায় জর্জরিত গোটা শহরের নাগরিকদের? যেমনটা বলা হয়েছে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তাতে করে শহরের জলকষ্ট যে সহজে মেটার নয় তা ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে শহরবাসীদের কাছে। ক্রমশ পরিশ্রুত পানীয় জলের দাবিতে শহরে ক্ষোভ বাড়ছে।
Water Crisis
তীব্র পানীয় জলের সঙ্কটের মুখে শিলিগুড়ি
×
Comments :0