Jharkhand election

সেই রেউড়িই ভরসা

সম্পাদকীয় বিভাগ

২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের কাছে গোহারা হেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল মোদী-শাহ’র দল। সেই বছরই লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করলেও গত লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের কাছে অনেক জেতা আসন খোয়াতে হয়েছে। গেরুয়াবাহিনী বুঝে গেছে হিন্দুত্বের জিগির যতই তোলা হোক না কেন আদিবাসীদের ভোটের একটা বড় অংশ ঝুলিতে তোলা না গেলে ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফেরা অসম্ভব। তাই আদিবাসী ভোটের দিকে পাখির চোখ করে দলের কৌশলী নেতারা অনেক ভেবে চিন্তে ভোট প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি ঝুড়ি নৈবেদ্য সাজিয়েছেন। তার সঙ্গে এমন সব কৌশলী চাল চালা হয়েছে যাতে মুসলিম বিদ্বেষের জমি তৈরি করে হিন্দু ভোট যথাসম্ভব ঘরে তোলা যায় এবং আদিবাসীদের সঙ্গে মুসলিমদের বিরোধ সৃষ্টি করে আদিবাসী ভোটে বড় আকারে ভাগ বসানো যায়। অমিত শাহ সংকল্পপত্র নাম দিয়ে যে নির্বাচনী ইশ্‌তেহার প্রকাশ করেছেন তাতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে দ্বিচারিতা এবং সুবিধাবাদ।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে রেউড়ি সংস্কৃতি বলে একদা বিরোধীদের বিদ্রুপ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই মোদীর দলই বিগত বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে এবং লোকসভা নির্বাচনে রেউড়ি সংস্কৃতির ধ্বজা উড়িয়েছে। যেখানে যা পেরেছে চোল বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। ঝাড়খণ্ডে যথারীতি ২.৮ লক্ষ সরকারি চাকরি, ৫ লক্ষ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান, বেকারদের মাসে ২০০০ টাকা অনুদান, মহিলাদের মাসে ২১০০ টাকা অনুদান, কৃষকদের সহায়তা সহ ২৫ দফা রেউড়ি বিতরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে মোদী বিরোধীদের দেওয়া ভুয়া প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন। কিন্তু বলেননি পাঁচ বছর আগে বিজেপি’র দেওয়া ভুয়া প্রতিশ্রুতির কথা। তিনি নিজেই তো বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। গত দশ বছরে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকই মিথ্যা বলে ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রতিটি রাজ্যে মোদীর দল মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় এসে যথারীতি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জমিহারা আদিবাসীদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এই বিজেপি-ই বনাঞ্চলের আইন সংশোধন করে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করেছিল। এখন উচ্ছেদ হওয়া অসহায় আদিবাসীদের দরদ দেখাচ্ছে। এক দেশ এক আইনের নামে অভিন্ন দেওয়ানি আইন ঝাড়খণ্ডে রূপায়ণের কথা বলেছে। কিন্তু আদিবাসীরা ক্ষিপ্ত হবে ভয়ে আইনের আওতা থেকে আদিবাসীদের বাদ রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাহলে অভিন্ন আইন হলো কি করে। আসলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু ভোটকে রাজনৈতিকভাবে কবজা করা ষড়যন্ত্র এই অভিন্ন আইন। পাশাপাশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা নাকি দলে দলে ঝাড়খণ্ডে ঢুকে আদিবাসী মেয়েদের বিয়ে করে আদিবাসীদের জমি হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রশ্নে কোনও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও মনগড়া তথ্য হাজির করে আদিবাসীদের ভীত ও বিভ্রান্ত করে ভোট পাবার ফন্দি করেছে। অমিত শাহ বিএসএফ সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী ঢোকার সুযোগ না দিলে তারা আসে কি করে। রাজ্যে যদি কোনও অনুপ্রবেশকারী এসে থাকে তার দায় তো প্রথম অমিত শাহের। অনুপ্রবেশের উৎস বন্ধ না করে কোনও রাজ্যেই অনুপ্রবেশ আটকানো যায়। তাছাড়া যেসব সমস্যার জন্য অনুপ্রবেশকে দায়ী করা হয়। আসামে সেই সব সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। তেমনি অভিন্ন আইন করে উত্তরাখণ্ডে ভোট রাজনীতির বাজার গরম হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এগুলি সবই গেরুয়া রাজনীতির বিভাজন ও মেরুকরণের হাতিয়ার মাত্র।
 

Comments :0

Login to leave a comment