Darjeeling

দমদমের যুবতী পর্যটকের মৃত্যু সান্দাকফুতে

রাজ্য

বন্ধুদের সাথে দার্জিলিঙে বেড়াতে এসে মৃত্যু হলো দমদমের এক যুবতীর। মৃতের নাম অঙ্কিতা ঘোষ (২৮)। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর এলাকার বাসিন্দা। কি কারণে ওই যুবতীর মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। 
জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের মুকুন্দ দাস রোডের বাসিন্দা অঙ্কিতা ঘোষ দুইদিন আগে তাঁর বন্ধুদের সাথে দার্জিলিঙ পাহাড়ে বেড়াতে এসেছিলেন। দার্জিলিঙে বেড়াতে গিয়ে প্রথমেই দার্জিলিঙ থেকে মানেভঞ্জন হয়ে সান্দাকফু বেড়াতে যান তাঁরা। মঙ্গলবার সান্দাকফু থেকে ফিরে রাতে টুমলিঙের একটি হোটেলে উঠেছিলেন। সেখানে রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোতে যান সকলেই। হঠাৎই মাঝ রাতে অঙ্কিতা অসুস্থতা বোধ করেন। দ্রুত বন্ধুরা অসুস্থ অবস্থায় অঙ্কিতাকে স্থানীয় সুখিয়াপোখরি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানে তাঁর শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করলে দ্রুত সেখান থকে দার্জিলিঙ জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু দার্জিলিঙ জেলা হাসপাতালে অঙ্কিতাকে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য দার্জিলিঙ জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত যুবতী পর্যটকের মৃত্যুর কোন সঠিক কারণ জানা যায়নি। 
সূত্রের খবর, যে হোটেলে রাত কাটানোর জন্য ওই যুবতী ও তার বন্ধুরা উঠেছিলেন সেই হোটেলের বাথরুমে কোনভাবে পড়ে গিয়েছিলেন অঙ্কিতা। যুবতীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বুধবার পর্যটন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। যুবতী সান্দাকফু থেকে ঘুরে বন্ধুদের সাথে টুমলিঙে এসেছিলেন। টুমমলিঙের হোটেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ময়নাতদন্তের পরে যুবতীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।’’
ঘটনা প্রসঙ্গে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীন প্রকাশ বলেন, ‘‘এক পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাঁর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে গোটা বিষয়টি বলা যাবে।’’ দার্জিলিঙ সদরের মহকুমা শাসক রিচার্ড লেপচা জানিয়েছেন, ‘‘সান্দাকফু বেড়াতে গিয়ে পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের তরফে সমস্ত ব্যবস্থা করা হবে।’’ 
প্রসঙ্গত চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে সান্দাকফুতে বেড়াতে গিয়ে কলকাতার ভবানীপুরের বাসিন্দা আশীষ ভট্টাচার্য (৬৫) নামে এক পর্যটকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সান্দাকফুর অনেক উচ্চতার জেরে রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণেই ওই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হয়। এছাড়াও চলতি বছরের ২৬ মে দার্জিলিঙ বেড়াতে এসে উত্তরদিনাজপুরের এক পর্যটকেরও একইভাবে মৃত্যু হয়েছিলো। তার আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু ট্রেকিং করতে গিয়ে ইজরায়েলের এক পর্যটক রাতে টেন্টে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শৈলশহরে সান্দাকফু বেড়াতে গিয়ে পর পর পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দার্জিলিঙ পাহাড়ে। 
উল্লেখ্য পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য জারি করা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশাসনিক নির্দেশিকা এখনও কার্যকর করা হয়নি। দার্জিলিঙ জেলাস্থিত ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ হাজার ৯৫০ফুট উচ্চতায় পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে বেড়াতে যাবার আগে মানেভঞ্জনে পর্যটকদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিকঠাক থাকলে তবেই পর্যটকদের সান্দাকফু বেড়াতে যাবার ছাড়পত্র মিলবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে সান্দাকফু বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য এইরকমই বেশ কিছু নিয়মকানুন চালু করার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই ফের দার্জিলিঙের সান্দাকফু বেড়াতে এসে যুবতী পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় শৈলশহর জুড়ে শোরগোল পড়েছে। পর পর পর্যটকদের মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন পর্যটনমহলও। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment