Abhas Raychowdhury Pandua

লুট, দুষ্কৃতীতন্ত্রের বিরুদ্ধে গড়তে হবে মেহনতির ঐক্য: আভাস রায়চৌধুরী

রাজ্য জেলা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

পাণ্ডুয়ায় ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র সভায় আভাস রায়চৌধুরী। ছবি: অভীক ঘোষ

বাংলাকে বাঁচাতে হলে বাংলার কৃষি, শিল্পকে বাঁচাতে হবে। সম্প্রীতির পরিবেশকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। লুট আর দুষ্কৃতীতন্ত্রের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্য গড়তেই হবে।
শুক্রবার হুগলীর পাণ্ডুয়ায় ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী। 
পাণ্ডুয়ার সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) হুগলী জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। 
আভাস রায়চৌধুরী বলেন, 
টানা চোদ্দ বছর তৃণমূলের রাজত্ব। আর দেশে দশ বছর পার করে আরএসএস-বিজেপি’র রাজত্ব চলছে। এখন অনেকেই উপলব্ধি করছেন বিপদ কী। আরজি করের চিকিৎসক হত্যায় ছাত্র-যুব নেতৃত্ব গাড়ি আটকে ছিল। আমরা দেখেছি সেই ঘটনায় আরএসএস প্রধান তৃণমূলকে খোলা চেক দিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তৃণমূল সরকার যা করবে আমাদেরস সমর্থন আছে।
আভাস বলেন, ২০২৩’র ২৬ ডিসেম্বর দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কলকাতাতে এলেন। বিজেপি, আরএসএস’র সঙ্গে বৈঠক করলেন। তিনি বলে গিয়েছেন বিজেপি জিতলে ভালো। কিন্তু দেখতে হবে বামপন্থী বা অন্য গণতান্ত্রিক শক্তির সমর্থন যাতে না বাড়ে। 
আভাস বলেন, তৃণমূলের জন্য আরএসএস-বিজেপি ছাব্বিশের নির্বাচনের দান ছেড়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসবেন, মিডিয়া দেখাবে। কিন্তু এসবই লোক দেখানো। কারণ তৃণমূল সরকার তো বিজেপি আরএসএস’র হয়েই কাজ করছে। 
তিনি বলেন, বামফ্রন্টের সরকার যখন ছিল, বামপন্থীদের শক্তি যখন অনেক বেশি, তখন বিজেপি’র নাম নিশান এরাজ্যে ছিল না। আজ বিজেপি’র শক্তি বেড়েছে। 
তিনি বলেন, এই পাণ্ডুয়া জমির আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। জমির আলের ধারে লড়াই হয়েছে। হিন্দমোটর পর্যন্ত কারখানা ছিল। কারখানায় মজুরির জন্য লড়াই হয়েছে লালঝান্ডার নেতৃত্বে। শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন। কিন্তু কখনও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে জাতের নামে ধর্মের নামে বিভাজনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-বিহারী, উঁচু জাত-নিচু জাত তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালের আগে এই অবস্থা ছিল না। তৃণমূলের রাজনীতি এভাবে বিভেদ এবং বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করেছে। তাতে লাভ হয়েছে আরএসএস-বিজেপি’র। 
আভাস বলেন, যে ঘরে বেকার ছেলে বা মেয়ে রয়েছে, সে পরিবার রাজনীতিতে যে পক্ষেরই হোক, মারাত্মক যন্ত্রণা বইতে হয়। সেই যন্ত্রণার মোকাবিলা জাত দিয়ে ধর্ম দিয়ে ভাগাভাগি করে হয় না। মোকাবিলার একটাই রাস্তা। তা হলো কাজের ব্যবস্থা করা। কৃষিকে উন্নত করতে হবে। কৃষিতে আধুনিকীকরণ করতে হবে। কৃষির বাজার দালালে ছেয়ে গিয়েছে। কৃষক দাম পান না। অথচ খুচরো বাজারে সবজির দাম চড়া এই শীতকালেও। মাঝের পয়সা খায় ফড়ে, দালালরা। মমতা ব্যানার্জির সরকার ২০১৪ এবং ২০১৭-তে আইন বদলে এই ফড়ে দালালদের দাপানোর ব্যবস্থা করছে। 
তিনি বলেন, একশো দিনের কাজ বন্ধ। বিজেপি বলছে দুর্নীতির জন্য কাজ বন্ধ। তা’হলে কেন্দ্রে বসে বিজেপি কী করছিল। জেলাশাসক জেলায় এই পরকল্পে নোডাল অফিসার। তা’হলে ক’জন জেলাশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি সরকার? তৃণমূলের কতজন পঞ্চায়েত প্রধান বা সভাপতির নামে দায়ের হয়েছে অভিযোগ? একজনের বিরুদ্ধেও না।
রায়চৌধুরী বলেন, বাংলাকে যদি বাঁচাতে হয় তা’হলে কাজ তৈরি করতে হবে। তা’হলে কারখানা করতে হবে। বামফ্রন্ট সরকার উন্নত কৃষির ভিত্তিতে শিল্প গড়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। সেই সংগ্রামকে খুন করেছে তৃণমূল, বিজেপি, আরএসএস সবাই মিলে। বাংলাকে বাঁচাতে হলে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন করতে হবে। 
আভাস বলেন, দুরাত্মার এই ছল যাতে মানুষ বুঝতে না পারেন তার জন্য মানুষকে ভাগ করার চক্রান্ত চলছে। পাঁচশো বছর আগে চৈতন্যদেব ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে মহামিলনের ঐতিহ্য তৈরি করেছিলেন। নবজাগরনের ঐতিহ্য তৈরি হয়েছিল এই বাংলায়। ফলে বাংলার কৃষি, শিল্পকে বাঁচাতে হবে। সম্প্রীতির পরিবেশকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। লুট আর দুষ্কৃতীতন্ত্রের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্য জরুরি। 
পাণ্ডুয়ার সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, খেতমজুর আন্দোলনের নেত্রী বন্যা টুডুও।

Comments :0

Login to leave a comment