Gyanvapi Mosque

জ্ঞানবাপী দিতে হবে হিন্দুদের

জাতীয়

অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হতেই জ্ঞানবাপী নিয়ে পুরোপুরি আসরে নেমে পড়ল হিন্দুত্ববাদীরা। শনিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে পুনরায় প্রমাণ হয়েছে, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ একটি বিশাল হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছে। অতএব ওই কাঠামোকে হিন্দু মন্দির ঘোষণা করে তা হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন আরও এক কদম এগিয়ে বলেছেন, আর কোনও সমঝোতা হবে না। এর একটাই সমাধান, মুসলিমরা জ্ঞানবাপী মসজিদ খালি করে দিক। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, জ্ঞানবাপী শীঘ্রই আমাদের হবে। 
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা এএসআই যে ‘বৈজ্ঞানিক’ সমীক্ষা করেছে জ্ঞানবাপী পরিসরে তার রিপোর্ট হিন্দুত্ববাদীদের এবং মসজিদ কমিটি উভয়কেই দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ৮৩৯ পাতার রিপোর্ট। এএসআই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেনি বা রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু জানায়নি। আদালতও জানায়নি। কিন্তু রিপোর্ট মেলার পরেই হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবীরা রিপোর্ট সম্পর্কে জানিয়েছেন। মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে যদিও হিন্দুত্ববাদীদের দাবি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং মথুরার কৃষ্ণ মন্দির ভেঙে সেখানে আওরঙ্গজেব মসজিদ বানিয়েছিলেন, এমনটাই বহুলভাবে প্রচলিত। কেন আওরঙ্গজেব মন্দির ভেঙেছিলেন, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের নানান ব্যাখ্যা আছে। একইভাবে অজস্র বৌদ্ধ মঠ-বিহার, জৈন মন্দির ভেঙেও হিন্দু মন্দির তৈরি হয়েছে। ফলে প্রশ্ন আছেই, এইসব হিন্দু মন্দিরগুলিতেও সমীক্ষা হবে কি না, অথবা তা বৌদ্ধ বা জৈনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে কি না। 
আটের দশক থেকে রামজন্মভূমি মন্দির আন্দোলনের সময় থেকেই কাশী এবং মথুরা নিয়ে একইরকম দাবি আছে হিন্দুত্ববাদীদের। এরমধ্যে অযোধ্যায় মসজিদের মধ্যেই রামের মূর্তি বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাশী আর মথুরায় হিন্দুদের পৃথক মন্দির বহুযুগ ধরেই আছে মসজিদের পাশেই। উভয় সম্প্রদায়ই তাদের ধর্মাচরণ করেন নিজ নিজ ধর্মস্থানে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা যবে থেকে রাজনীতির সঙ্গে এই বিষয়টিকে যুক্ত করেছে, তখন থেকেই জ্ঞানবাপী এবং মথুরা নিয়ে সমস্যা শুরু করা হয়েছে। বাবরি মসজিদের জায়গায় সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দিয়ে দেওয়ার পরেই নতুন করে কাশী-বিশ্বনাথ মন্দির নিয়ে আসরে নামে হিন্দুত্ববাদীরা। 
১৯৯১ সালে উপাসনাস্থল আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যে ধর্মস্থানের যে চরিত্র ছিল, তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বাবরি মসজিদের বিষয়টি আদালতের বিবেচনাধীন ছিল বলে তা এর আওতার বাইরে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের উপাসনা স্থল আইনই বাতিল করা দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় সহ হিন্দুত্ববাদীদের অনেকেই। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে একাধিকবার কেন্দ্রের মতামত জানতে চাইলেও তা নিয়ে চুপ করে আছে মোদী সরকার। তারপরেও সুপ্রিম কোর্ট এই নিয়ে মতামত জানাচ্ছে না। এই সুযোগে একের পর এক নিম্ন আদালতে মামলা করে হিন্দুত্ববাদীরা সমীক্ষার দাবি জানাচ্ছে, আদালত তা মেনে নিচ্ছে। নতুন করে দেশজুড়ে মন্দির-মসজিদ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করার সুযোগ পেয়ে গেছে হিন্দুত্ববাদীরা। 
সেই মোতাবেক এদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকরী সভাপতি অলোক কুমার এক বিবৃতি দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছেন, এএসআই যে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তাতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট এবং বর্তমানেও জ্ঞানবাপী একটি হিন্দু মন্দির, ফলে তা হিন্দুদের ফেরত দেওয়া হোক। পরিষ্কারভাবেই ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট জ্ঞানবাপী মসজিদ হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হলো এলাহাবাদ হাইকোর্টের সর্বেশষ রায়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল গত ১৯ ডিসেম্বর তাৎপর্যপূর্ণ রায়ে বলেন, জ্ঞানবাপী পরিসরের ‘ধর্মীয় চরিত্র’ স্থির করবে বারাণসী দেওয়ানি আদালত। প্রামাণিক নথি এবং কথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বারাণসীর দেওয়ানি আদালত জ্ঞানবাপীর ধর্মীয় চরিত্র স্থির করা হবে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাৎর্যপূর্ণভাবে বলে, যেহেতু আইনে ‘ধর্মীয় চরিত্র’ সংজ্ঞায়িত করা হয়নি এবং একই সঙ্গে ওই স্থানের দ্বৈত ধর্মীয় চরিত্র থাকতে পারে না। হয় স্থানটি মন্দির অথবা মসজিদ। সমগ্র জ্ঞানবাপী পরিসরের ধর্মীয় চরিত্র নির্ধারণ করার পরে বলা যাবে সেটির ধর্মীয় চরিত্র। ফলে এই ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন লঙ্ঘন করা হয়নি। শনিবার সেই অনুসারেই দাবি জানিয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। একই সঙ্গে ওজুখানায় যেটাকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি করেছিল হিন্দুত্ববাদীরা, সেখানেও পুজোর অনুমোদন চেয়েছে ভিএইচপি। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন জানিয়েছেন, ওজুখানার সমীক্ষা করার জন্যেও তারা সুপ্রিম কোর্টে শীঘ্রই আবেদন জানানো হবে। উল্লেখ্য, ওজুখানায় সমীক্ষার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়ে এলাকা বন্ধ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
 

Comments :0

Login to leave a comment