Economy

ফের শিল্পোৎপাদনে অধোগতি, তরিতরকারির দাম আরও চড়া

জাতীয়

একদিকে কমেছে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার, আরেকদিকে বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের খুচরো দাম। মোদী সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির এই বেহাল দশা ফের সামনে এল সরকারি তথ্যেই। কেন্দ্রের সরকারের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) সর্বশেষ রিপোর্টে জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে দেশে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৪.২৪ শতাংশ। তা চলতি বছরের জানুয়ারিতে নেমে এসেছে ৩.৮ শতাংশে। শিল্পোৎপাদন সবথেকে বেশি সঙ্কুচিত হয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং অর্থাৎ কারখানায় পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে। ডিসেম্বরে যেখানে ওই ক্ষেত্রে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫ শতাংশ, সেখানে এ‍ই জানুয়ারিতে তা কমে হয়েছে ৩.২ শতাংশ। পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার জানুয়ারির ৮.৩ শতাংশ থেকে ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ৮.৬৬ শতাংশ, খুচরো বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়াই যার কারণ। ২০২৪’র জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি, এই এক মাসে মূলত চড়া হারে বেড়েছে তরিতরকারি ও মাংসের দাম। অর্থনীতির এই অবনমনের জন্য মোদী সরকারকে কড়া ভাষায় বিঁধেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (আগের টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে শিল্পোৎপাদনে অধোগতি মোদী সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার প্রমাণ। মোদী সরকারের অযোগ্যতায় সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে যে কোনও ভাষণে বড় গলায় দাবি করেন, তাঁর সরকার দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছে। বাকি বিশ্ব এখন ভারতের অর্থনীতিকে সমীহ করে, এমন দাবিও শোনা যায় তাঁর মুখে। কিন্তু তিনি যে সরকারের মাথায়, সেই সরকারেরই এনএসও’র তথ্য এই দাবির অন্তঃসারশূন্যতাকে সামনে এনে দিলো। অবশ্যই এই প্রথম নয়। মঙ্গলবার প্রকাশিত এনএস’র সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, ‍ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে দেশে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার শুধু কমেছে, তা নয়। ক্রমাগত ব্যবহারে ক্ষয়িষ্ণু ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন জানুয়ারি পর্যন্ত শেষ তিন মাসের মধ্যে এই নিয়ে দু’বার কমে গেল, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে কমেছে ০.৩ শতাংশ। এই ধরনের পণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়া মানে বাজারে এর চাহিদা কমেছে, যা এমন পণ্যের কম ব্যবহারকেই ইঙ্গিত করছে। এর অন্যতম কারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতায় ঘাটতি, যার জন্য তাঁরা এমন পণ্যের ব্যবহার কমাতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে নতুন কেনার জন্য বাজারে চাহিদা বাড়ছে না। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে উৎপাদন সবথেকে বেশি কমেছে কম্পিউটার, বৈদ্যুতিন সামগ্রী এবং চশমা ও লেন্সের, ১১.৯ শতাংশ। জামাকাপড়ের উৎপাদন এই সময়ে কমেছে ১.৬ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ২০২৩’র এপ্রিল থেকে ২০২৪’র জানুয়ারির মধ্যে জামাকাপড়ের উৎপাদন কমেছে ১৭.৫ শতাংশ। তার পিছনেই রয়েছে কম্পিউটার, বৈদ্যুতিন সামগ্রী এবং চশমা ও লেন্সের উৎপাদন। ওই একই সময়ের মধ্যে এগুলির উৎপাদন কমেছে ১৪ শতাংশ। সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহারের অন্যতম প্রধান সামগ্রী হলো জামাকাপড়। তার উৎপাদন এত ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার কারণ, দেশে এর চাহিদা কমেছে। স্পষ্টতই এর অর্থ, বিশাল সংখ্যক মানুষ জামাকাপড় কেনা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই তার পিছনে রয়েছে সাধ্যের অভাব বা আয়ের ঘাটতি। অবশ্যই দেশে বড় সংখ্যায় যে গরিব, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে, তাদের মধ্যেই এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে।
পাশাপাশি সরকারি তথ্য জানিয়েছে, যে খাদ্যদ্রব্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী, তার দামও প্রবলভাবেই ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষ যেখান থেকে রোজ খাবারের উপকরণ কেনেন, সেই খুচরো বাজারে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে তরিতরকারি ও মাংসের দাম ব্যাপক বাড়ায় খাদ্যদ্রব্যে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার যেমন এই এক মাসে ৮.৩ থেকে ৮.৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে, তেমন খাদ্যপণ্য মূল্য সূচকও এই সময়ে বেড়ে‍‌ছে ০.১ শতাংশ। খুচরো বাজারে খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে তরিতরকারির দাম ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে বেড়ে‍‌ছিল ২৭.০৩ শতাংশ, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে ৩০.২৫ শতাংশ। ওই এই দুই মাসের ব্যবধানে তরিতরকারির মধ্যে টমেটোর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৩৮.০১ ও ৪২.০১ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২৯.৬৯ ও ২২.১ শতাংশ। সেই সঙ্গে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে আলুর দাম ১২.৩৮ শতাংশ, বেগুনের দাম ২৩ শতাংশ এবং মুরগির মাংসের দাম ৫.৬৯ শতাংশ বেড়েছে। নিশ্চিতভাবে এই মূল্যবৃদ্ধি গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। 
ইয়েচুরি এক্স-এ তাঁর পোস্টে অর্থনীতি পরিচালনায় মোদী সরকারের অকর্মণ্যতায় জনগণের এই দুর্দশার কথাই বলেছেন। তিনি লিখেছেন, মোদী সরকারের অকর্মণ্যতা আবার বেআব্রু হয়ে গেল। ভারতে ফেব্রুয়ারি মাসে তরিতরকারির দাম তীব্র গতিতে ৩০.২৫ শতাংশ বেড়েছে, জীবনধারণকেই কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্পোৎপাদনে অধোগতি ও কর্মচ্যুতি। সব মিলিয়ে জীবন দুর্বিষহ। শহর ও গ্রাম, গোটা দেশেই দুর্দশার চেহারা প্রকট। অর্থনীতি পরিচালনায় মোদী সরকারের অব্যবস্থাপনা মারাত্মক ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে জনজীবনে। সর্ব ক্ষেত্রে মোদী সরকারের ব্যর্থতা অর্থনীতিকেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারও মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন বুধবার। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এদিন মহারাষ্ট্রের নাসিকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে কৃষক ও সাধারণ মানুষ মোটেই খুশি নন। বেকারত্ব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সরকারের নীতির কারণেই। আসন্ন নির্বাচনে এর মূল্য দিতে হবে বিজেপি-কে। 

Comments :0

Login to leave a comment