আল জাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ৩০০ দিন ধরে চলা সংঘর্ষে গাজায় মোট ৮২ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছে ইজরায়েল। সরাসরি ৩৩ বিলিয়ন (=১০০ কোটি) মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষতি হয়েছে গাজায়। ধ্বংস হয়েছে ১৯৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ১১৭টি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, ৬১০টি মসজিদ, ৩টি গির্জা, দেড় লক্ষ বাড়ি, ২০৬টি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থল, ৩৪টি স্টেডিয়াম, ৩০৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিদ্যুতের নেটওয়ার্ক এবং ৭০০টি পানীয় জলের কুয়ো।
আরও ২ লক্ষ ৮০ হাজার বাড়ি, ১১৭টি স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গাজার ৩৪টি হাসপাতাল এবং ৬৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস করেছে ইজরায়েলী সেনা।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ৩৪৫৭টি গণহত্যা চালিয়েছে ইজরায়েলী সেনা। জায়নবাদী হামলায় ৩৯ হাজার ৪৮০জন প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন, নিঁখোজ রয়েছেন ১০ হাজার মানুষ এবং আহতের সংখ্যা ৯১ হাজার ১২৮।
একাধিক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, সংঘর্ষের আগে গাজার জনসংখ্যা ছিল ২২ লক্ষ। ৩০০ দিন ধরে চলা লাগাতার সংঘর্ষে ভূখন্ডের ৬ শতাংশ মানুষ আহত কিংবা নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১৬ হাজার ৩১৪ জন শিশু, ১০ হাজার ৯৮০ জন মহিলা। নিহতদের মধ্যে ৫২০ জনকে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজার ১০০ শতাংশের কাছে বাসিন্দাকেই নিজেদের বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে। তাঁরা ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। ত্রাণ শিবিরগুলিতে অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোর ফলে ১৭ লক্ষের বেশি মানুষ বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত। আহতের মধ্যে ১৩ হাজার জনের আঘাত গুরুতর। তাঁদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত গাজার বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
এরই মাঝে ১৩ জুলাই তেহেরানে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়েকে খুনের অভিযোগ উঠেছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। তেহেরানে হানিয়ের বাসভবনে ঢুকে তাঁকে এবং তাঁর দেহরক্ষীকে হত্যা করে বন্দুকবাজরা। ইরানের সরকারি বক্তব্য, এই হত্যার নেপথ্যে জায়নবাদী ষড়যন্ত্র রয়েছে।
ইসমাইল হানিয়ের হত্যাকে ঘিরে যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত তৈরি হয়েছে, তারই মাঝে ইজরায়েলের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, হানিয়ের হত্যার ফলে বড়সড় কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না হামাস।
তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর ন্যশনাল সিকিউরিটি রিসার্চের বক্তব্য, হামাসের রাজনৈতিক কিংবা সামরিক সংগঠনে হানিয়ের মৃত্যুর কোনও প্রভাব পড়বে না। বৃহত্তর প্যালেস্তিনীয় রাজনীতিতেও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকার কথা নয়। গাজায় হামাসের মূল চালিকাশক্তি সংগঠনের নেতা ইয়াইয়া সিনওয়ার। মূলত তাঁর নির্দেশেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কিংবা পণবন্দী হস্তান্তর হবে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, হানিয়ের বিকল্প ইতিমধ্যেই তৈরি রয়েছে হামাসের।
সংস্থাটির বক্তব্য, সংঘর্ষে ইয়াইয়া সিনওয়ার প্রাণ হারালেও হামাস তাঁর বিকল্প তুলে আনতে সক্ষম।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গাজায় বোধহীন গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল। গবেষক সংস্থার রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সামরিক শক্তির জোরে করতে চাইছে ইজরায়েল। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সেটা হওয়ার নয়। এবং এই দীর্ঘসূত্রিতার মাশুল গুনছেন গাজার সাধারণ মানুষ।
ভারতে সিপিআই(এম) সহ পাঁচ বামপন্থী দল ৩ আগস্ট গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। দেশের সরকারের কাছে দাবি, ইজরায়েলকে এই গণহত্যায় কোনও সহায়তা দেওয়া চলবে না।
Comments :0