LEFT RALLY IN KHEJURI

মুখ্যমন্ত্রী আর তাঁর ‘ভাই’,লড়াই এই দু’দলের জোটের বিরুদ্ধে

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP হেড়িয়ার সভায় সূর্য মিশ্র

পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোট হবে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে। যারা এখন তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকার নাটক করছেন তাদেরই কেউ মুখ্যমন্ত্রীর ভাই সেজে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন। আসলে এদের দুর্নীতির চিত্র এক। ফলে একদিন না একদিন এদের একত্র হতেই হতো। সিঙ্গুরে নব্বই শতাংশ তৈরি কারখানা ধ্বংস করার কারিগর এই দুই শক্তি। সেটা মনে রাখতে হবে। শনিবার খেজুরির হেঁড়িয়ায় এই কথা বলেছেন গণআন্দোলনের নেতা সূর্য মিশ্র। 


প্রসঙ্গত, শুক্রবারই বিধানসভায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে চা খেতে ডেকেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। পরে বিধানসভাতেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, শুভেন্দুর প্রতি তাঁর ‘ভাই’য়ের মতো স্নেহের কথা। 


শনিবার সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন উপলক্ষ্যে হেঁড়িয়াতে শিবপ্রসাদ বিদ্যালয়ের মাঠে সভা আয়োজিত হয়েছিল। সেই সভায় সূর্য মিশ্র বলেন, কয়েক বছর আগেও আদানির নাম কেউ শোনেননি। বিজেপি সরকারে আসার পর বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে আদানি। এদেশের সরকার ১২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণমুক্ত করে দিয়েছে তাদের। আর এ রাজ্যের সরকার সেই আদানির হাতে দেউচা পাঁচামীর কয়লা খনি তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করেছে। মালদহে কৃষকদের জমির উপর দিয়ে রেল লাইন পাতার কাজ হচ্ছে। শোষণ চলছে গরিবদের উপর। এ জেলাতেই বন্দর তৈরির বরাত দেওয়া হচ্ছে আদানিকে। গরিব মানুষকে যারা লুট করছে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে এই দুই সরকার। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নেই, যেদিন লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে এরাজ্যের মানুষ এই দুই স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ হবেন। 


২০০৯ থেকে খেজুরি সশস্ত্র তৃণমূলীদের দখলে। ২০০৭-র জানুয়ারি থেকে চলছে খেজুরিতে তৃণমূল-বিজেপি’র আক্রমণ। সেই সময় যিনি তৃণমূলের নেতা ছিলেন, সেই শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপি’র নেতা। ২০০৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খেজুরিতে ২০ জনেরও বেশি বামপন্থী কর্মী শহীদ হয়েছেন। বামপন্থীদের উপর নানা ধরনের অত্যাচার হয়েছে। কিন্তু বামপন্থীদের মুছে ফেলা যায়নি, বরং তাদের শক্তি আরও বাড়ছে, এদিনের সমাবেশ ছিল তারই প্রমাণ।


সূর্য মিশ্র বলেন, যারা তৃণমূল করে তারা কি জানেন কালীঘাটে শুধু একটিমাত্র ব্যানার্জি পরিবারের নামেই ৩৫টি জমি রয়েছে। কি করে এই অল্প সময়ে এতগুলো জমির মালিকানা পাওয়া যায় তার রহস্যটা কি? এই প্রশ্ন তৃণমূলের নেতাদের করতে হবে। গ্রামের গরিব সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার লড়াই করবে, আর তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করবে। তা হতে পারে না। 
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছে শনিবার। চলবে রবিবার পর্যন্ত।

 এদিনের সমাবেশে সূর্য মিশ্র আরও বলেন, তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকেরাও খেতে খামারে কাজ করেন। তাঁদেরও জীবনে যন্ত্রণা রয়েছে কিন্তু এই দুই সরকার খেতমজুরদের স্বার্থবাহী নয়। বামপন্থীদের প্রতিনিয়ত লড়াই সংগ্রাম চলছে খেতমজুরদের ন্যূনতম মজুরি, কৃষকের ফসলের দামের দাবি নিয়ে। 


সভায় খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, দেশের মানুষের অন্নের জোগান দিতে যারা পরিশ্রম করেন তারাই লাল ঝান্ডার সম্পদ। সেই সমস্ত বঞ্চিত শোষিত মানুষদের স্বার্থেই লাল ঝান্ডা সব সময় রয়েছে। সংসদে বামপন্থী সাংসদদের আন্দোলনে ১০০ দিনের কাজ চালু হয়েছিল, গ্রামীণ বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের দিশা বামপন্থীরাই দেখিয়েছিল। তখন তৃণমূল বা বিজেপি কোথায় ছিল? ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট করছে তৃণমূল। লুটের পরিমাণ দশ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্যের সরকার এই ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতির বিষয়ে কোনও তদন্ত করেনি। আসলে লুটের টাকার ভাগ কালীঘাট পর্যন্ত পৌঁছেছে।


সভায় খেতমজুর নেতা তুষার ঘোষ বলেন, খেতমজুররা খেতে জমিতে কাজ করেন। কমছে কাজ। মজুরি মিলছে না। সরকারি উদাসীনতায় খেতমজুররা দিশাহারা। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কাজের ফাঁকা বুলি শোনাচ্ছেন।


শ্রমিকনেতা অনাদি সাহু বলেন, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল। কেন জিনিসপত্র, পেট্রোল, ডিজেল এর দাম বাড়ছে? শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছে না কেন? কৃষক তার ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন কেন? সাধারণ গরিব কৃষক শ্রমিক খেতমজুরদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এই দুই সরকার। তার প্রতিবাদ করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে গ্রামে গ্রামে।


সভায় গণআন্দোলনের নেতা নিরঞ্জন সিহি বলেন, জেলাবাসী তৃণমূলের অত্যাচারে জর্জরিত। পঞ্চায়েতগুলিতে লুট চলছে। সরকারি প্রকল্পে দলবাজি চলছে। জোট বাঁধছে গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদ চলছে। বক্তব্য রাখেন খেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদক হিমাংশু দাস। উপস্থিত ছিলেন ইব্রাহিম আলী সহ কৃষক, শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আশিস প্রমাণিক।


এদিন সমাবেশ শেষে শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পাঠ করেন হিমাংশু দাস। রবিবার পর্যন্ত সম্মেলন চলবে।

Comments :0

Login to leave a comment