MAMATA BANERJEE IN TRIPURA

‘ইনডাইরেক্ট’ বিজেপি; আগরতলাতেও বোঝালেন মমতা

জাতীয়

BJP TERROR TRIPURA CPIM MAMATA CONGRESS TMC BENGALI NEWS

‘‘আমি দীর্ঘদিন আগেই বুঝেছিলাম সিপিআই(এম)’র বি টিম হল কংগ্রেস। তাই কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল বানিয়েছিলাম।’’

মঙ্গলবার আগরতলার রোড শো তে অংশ নিয়ে এমনটাই দাবি করলেন মমতা ব্যানার্জি। একইসঙ্গে এমন এক সময়ের সঙ্গে নিজের যোগসূত্র ফের একবার জোরালো ভাবে প্রমাণ করলেন, যখন প্রথমবারের জন্য বাংলায় পায়ের তলার মাটি খুঁজে পেয়েছিল বিজেপি। 

মঙ্গলবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় রোড শো এবং সভা করেন মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর সাংসদ ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। তাঁদের দুজনের কয়েক ঘন্টার সফরের পুরোটাই ছিল তীব্র সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস বিরোধীতায় ভরা। অমিত শাহ’র সুরে সুর মিলিয়ে বাম-গণতান্ত্রিক জোটকে খুল্লমখুল্লা নিশান করলেন তাঁরা দুজনে। দাবি করলেন, বিজেপির প্রকৃত বিরোধী তৃণমূল। এদিন মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জির ভাষণ শুনলে মনে হতেই পারে, সেরাজ্যে বিজেপি নয়, বরং ক্ষমতায় রয়েছে বাম কংগ্রেস জোট। আর মমতা এবং অভিষেক প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপির হয়ে প্রচারে নেমেছেন। 

এদিন আগরতলায় মমতা বলেন, ‘‘আমি বহুদিন আগেই বুঝে গিয়েছিলাম যে কংগ্রেস সিপিআই(এম)’র বি টিম। এখন ত্রিপুরার মানুষও সেটা বুঝতে পারছেন। তৃণমূল না হলে বাংলায় পরিবর্তন করা সম্ভব হত না। এখানে লড়াই করলেও বাংলায় রাম, বাম আর শ্যাম এক’’। 

পিসির সুরে সুর মিলিয়েই অভিষেক দাবি করেন, ‘‘ সিপিআই(এম) বাংলা এবং ত্রিপুরাকে ধ্বংস করেছে।’’ 

দুজনেই সিপিআই(এম)’র পাশাপাশি কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেন। যদিও মমতা ব্যানার্জিকে এদিন কেন্দ্রীয় বাজেটের জন্য বিজেপির মৃদু সমালোচনা করতেও শোনা যায়। কিন্তু তাঁর বিজেপি বিরোধীতা সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর পাশাপাশি তিনি ত্রিপুরাকে শিল্পোন্নত রাজ্যে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কী ভাবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে সে বিষয়ে কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি মমতা ব্যানার্জিকে। 

মমতা ব্যানার্জির এই বক্তব্যকে ঘিরে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, কংগ্রেস সিপিআই(এম)’র বি টিম বুঝতে পেরে তিনি তৃণমূল গঠন করেন সিপিআই(এম) বিরোধী লড়াইকে জোরদার করতে। এবং সেই লড়াইয়ের কৌশল হিসেবেই তিনি বাংলায় বিজেপির ঢোকার রাস্তা তৈরি করে দেন। তৃণমূলের জোটসঙ্গী হিসেবেই প্রথমবারের জন্য বাংলা থেকে সাংসদ এবং বিধায়ক পায় বিজেপি। ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যার পরেও তিনি বিজেপির সঙ্গে জোট বজায় রেখেছিলেন। সেই জোটের হাত ধরেই বাংলায় ‘পাঁশকুড়া লাইন’, কামতাপুর আন্দোলনের মতো বিশৃঙ্খলাগুলি মদত পায়। 

২০১১ সালের পর বাংলায় যেই কায়দায় সংবিধান, গণতন্ত্র এবং বিরোধীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে তৃণমূল, ত্রিপুরায় সেই একই কায়দায় গত পাঁচ বছর ধরে হামলা চালিয়েছে বিজেপি। ত্রিপুরার মানুষকে বিজেপির অপশাসন থেকে মুক্তি দিতে জোটবদ্ধ হয় সেরাজ্যের গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি। কিন্তু সেই জোট গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি তৃণমূল। বরং বিজেপির বদলে সেই জোটকে চড়া সুরে আক্রমণ করে চলেছে তৃণমূল।

এপ্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ত্রিপুরায় আইনের শাসন ফেরাতে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে, সংবিধানকে রক্ষা করতে বিজেপি বিরোধী দলগুলি এক জায়গায় এসেছে। সেই জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন বামপন্থীরা। এই জোটকে ইতিমধ্যেই ভয় পেতে শুরু করেছে বিজেপি। তাই সেই জোটকে আক্রমণ করতে মমতা এবং তৃণমূলকে ভাড়া করে ত্রিপুরায় নিয়ে গিয়েছে তাঁরা। মমতা ব্যানার্জি একাধিকবার বলেছেন, আমি ‘ডাইরেক্টলী’ বিজেপিটা করিনি। আমরা বলছি, এবং এদেশের মানুষ দেখছেন তিনি ‘ইনডাইরেক্টলী’ বিজেপি করছেন। আজ আগরতলায় সেটা আরেকবার প্রমাণিত হল। তৃণমূল ত্রিপুরায় অর্ধেক আসনেও প্রার্থী খুঁজে পায়নি। তাঁরাই নিজেদের বিকল্প হিসেবে দাবি করছে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে। 

এদিন কলকাতায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, মেঘালয় এবং গোয়ায় কংগ্রেসকে দুর্বল করে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। এখন ত্রিপুরাতেও সেই চেষ্টাই করছেন তিনি। 

Comments :0

Login to leave a comment