MD SALIM PRESS CONFERENCE

নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই কমিশনের! অভিযোগ সেলিমের

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

প্রথম দিনেই স্পষ্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করেছে। শুক্রবার জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিনে যে পরিস্থিতি দেখা গেছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম থেকেই বলেছি, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আজকে বোঝা গেল রাজ্য নির্বাচন কমিশন নিজেই প্রস্তুত নয়।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেলিম অভিযোগ করেছেন, অধিকাংশ জায়গায় কী করতে হবে তার কোনও নির্দেশ যায়নি। আজকে যারা মনোনয়ন জমা দিতে গেছেন, তাঁরা দেখেছেন হয় টেবিল রেডি নেই, টেবিল রেডি থাকলে লোক নেই, লোক থাকলে তাঁরা প্রশিক্ষিত নয়, অথবা ফরম নেই। অথচ এগুলি করাই প্রশাসনের কাজ। একজন অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ প্রশাসককে কমিশনার করা হলো। তিনি কি ভেবেছিলেন ভিনি ভিডি ভিসি, এলাম দেখলাম জয় করলাম ভঙ্গিতে নির্বাচন হয়ে যাবে! 

সেলিম বলেছেন, প্রশাসনের যারা ব্লক বা মহকুমা স্তরে রয়েছেন তাঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নির্বাচন কমিশনার যখন ঘোষণা করলেন তখনই সবটা যাচাই করে নেওয়া উচিত ছিল তাঁর। ঘোষণার পরে রাতে তিনি অনলাইনে মিটিং করেছেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। রাতভর কর্মীদের দিয়ে বাঁশ বাঁধা যায়, কিন্তু বাকি প্রস্তুতি সারা হয়নি। আজ সকাল থেকে বামফ্রন্ট কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন মনোনয়ন জমা দিতে। প্রথম দিনে উৎসাহ নিয়ে যারা নেমেছেন তাঁদের অভিনন্দন জানাই, অনেক জায়গায় বিলম্বে হলেও তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন। কিছু জায়গায় কাল দেওয়া হবে। 


সেলিম বলেছেন, এখনও মানুষের ক্ষোভের বাস্তবতাকে না বুঝে তৃণমূল কোথাও কোথাও মনোনয়নে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশের কোনও প্রস্তুতি ছিল বলে মনে হয় না। কোথাও কোথাও ব্লক পর্যায়ে সর্বদলীয় বৈঠক করা হয়েছে, যা আগেই করা উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনের। তাদের বুদ্ধিমত্তায় এল না এটা! নির্বাচনের বিষয় কেবল একজন জানলেই চলবে- এটা একনায়কতন্ত্রের প্রবণতা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসে এসব করা চলে না। 

সেলিম আরও বলেন, পঞ্চায়েত মানে গণতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু এরা গণতন্ত্রকে সঙ্কুচিত করতে চাইছে। তৃণমূল এবং প্রশাসন গণতন্ত্রকে যত সঙ্কুচিত করতে চাইবে, বামপন্থীরা মানুষকে নিয়ে ততোই ওদের শক্ত মুঠো আলগা করে দিয়ে অধিকার কেড়ে নেবে। 
 

এদিকে শুক্রবার বারাসতে সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির দপ্তর শান্তিময় ঘোষ স্মৃতি ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে পার্টি নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকে এদিন মনোনয়নপত্র পৌঁছায়নি। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ ও জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। 

সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হলেও নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকার সরকার অপ্রস্তুত। তাই শুক্রবার বহু জায়গায় আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে পারেননি। 

তিনি একের পর জায়গার উদাহরণ দিয়ে বলেন, মুর্শিদাবাদের ভরতপুর, নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা, উত্তর ২৪ গরনার সন্দেশখালি, বারাসত ব্লক ১ বিভিন্ন জায়গায় এই পরিস্থিতি দেখা গেছে। কোথাও তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী বাধা দিয়েছে। কোথাও বা ডিসিআর পাওয়া যায়নি, কোথাও বা নমিনেশন পেপার ব্লকে এসে পৌঁছায়নি। বারাকপুর এসডিও অফিসে ডিসিআর ছিল না। এইভাবে একটা দিন গেল। বাকি রইলো ৫ দিন, এই ৫দিনে কি প্রায় ৭৪ হাজার আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব? হাইকোর্টও সঠিকভাবেই এই প্রশ্ন তুলেছে। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, প্রযুক্তি এগিয়েছে, তাহলে অনলাইনে নমিনেশন কেন জমা দেওয়া যাবে না? নির্বাচন কমিশন কী করবে তা জানাক। আদালত সঠিকভাবেই বলেছে, সিভিক পুলিশ বা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের দিয়ে ভোট করানো যাবে না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মী রাজকুমার রায় খুন হয়েছিলেন, আজও তার তদন্ত রিপোর্ট বের হলো না। কোন ভরসায় নির্বাচনের কাজ করবেন ভোটকর্মীরা? তাঁদের নিরাপত্তার দাবিও সঠিক বলেই আমরা মনে করি।

মৃণাল চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সিপিআই(এম) জেলা পরিষদের ৬৬টি আসনের মধ্যে ৩১ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। সোম মঙ্গলবারের মধ্যেই সবার সঙ্গে আলোচনা করে সব আসনে মনোনয়ন পত্র জমা পড়ে যাবে। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে মনোনয়ন এদিন থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীরা হাজির হলেও সরকার অপ্রস্তুত, তারা সর্বত্র মনোনয়ন নিতে পারেনি। জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ৪৫৫৩টি। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩৯৩৩ এবং জেলা পরিষদে আসন সংখ্যা ৬৬টি। মোট ভোটার ৩৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৫৮জন।

Comments :0

Login to leave a comment