শঙ্কর ঘোষাল- আউশগ্রাম
জনসভা হবার কথা ছিল ৩০ মে। কিন্তু তৃণমূল পুলিশ ও বিডিওকে কাজে লাগিয়ে আউশগ্রামের বিষ্ণুপুরে সিপিআই(এম)’র জনসভা বন্ধ করে দেয়। যে জমিতে সমাবেশ হবার কথা ছিল সেই জমির মালিককে ভয় দেখিয়ে অনুমতি প্রত্যাহার করায় তৃণমূলের বালি মাফিয়া দুষ্কৃতী লালন শেখ। কিন্তু আউশগ্রামের মানুষের জেদ ছিল এই শহীদের মাটিতেই জনসভা করবেন মীনাক্ষী মুখার্জি। বুথ রক্ষা করতে গিয়ে যে রাজীবুল হক খুন হয়েছিলেন সেই গ্রামে, রক্তাক্ত মাটিতেই বুধবার সভা করেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। এদিনও তৃণমূলের গুন্ডারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাল ঝান্ডার সমাবেশে না যাবার জন্য হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবাদী মানুষ সেই রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই দলে দলে হাজির হন সমাবেশে। এদিন মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এসেছিলেন প্রত্যাশা মতোই শহীদ কমরেড রাজীবুল হকের মা আনিশা বেগম, বাবা মোজাম্মেল হক, স্ত্রী ও দুই ছেলে।
সভার শুরুর আগেই রাজীবুলের ছবির সামনে সন্তানহারা মা চোখের জল ফেলে বলেছেন যারা আমার ছেলেকে খুন করেছে তাদের যেন শাস্তি হয়। রাজীবুলের খুনের এক নম্বর আসামী তৃণমূলের ব্লক সভাপতি লালন শেখ’কে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় খুন করে, হুমকি দিয়ে লাল ঝান্ডাকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
এদিন শহীদের রক্তভেজজা মাটিতে সভা করেই শপথ নিয়েছেন এখানকার হাজার হাজার মানুষ এই এলাকায় লুটের রাজত্ব বন্ধ করা হবে, বুথ রক্ষা করবেন মানুষ রাজীবুলের দেখানো পথেই।
এদিন মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, মানুষের জীবন, মহিলাদের মান, ইজ্জত, বালি, গোরু, মোরাম লুট করেছে যারা তাদের ক্ষমা করবেন না মানুষ। তিনি বলেছেন এখনই হুমকি দিচ্ছে ভোটে জিতে এসে মা-বোনেদের ইজ্জত নেবে! ভোটে জিতে কি এমন লাইসেন্স পাওয়া যায়? ভোট চাওয়ার সময় অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় দুই ফুল, ভোট মিটে গেলে তারপর এপ্রিল ফুল। ওদের বিশ্বাস করবেন না। জিনিসের দাম বাড়ছে, ওষুধের দাম লাগামছাড়া এ সব নিয়ে দিদি, মোদীর কোন কথা নেই। মিথ্যা জুমলাবাজি আর সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে মানুষকে ভাগ করতে চায় ওরা। তিনি বলেছেন, মানুষকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাহলে যত বড় চোর ডাকাত হোক শায়েস্তা হতে বাধ্য।
তিনি এদিন বলেছেন, জিনিসের দাম কি করে কমবে ওরা তো আদানি-আম্বানির স্বার্থ দেখে। সব জিনিসের উপর জিএসটি চাপানো হয়েছে। পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়ছে, তাহলে তো সব জিনিসের দাম বাড়বে। তিনি বলেন ৪৪ টাকার ডিজেল দ্বিগুন দরে বিক্রি করে কর্পোরেট মোদীর সহযোগীরা ধনী হয়ে যাচ্ছে। জিনিসের দাম না কমলে মানুষ কী খেয়ে বাঁচবেন? গ্রাম, শহর, কর্পোরেটের লুটেরাদের হারাতে হবে। তিনি বলেন এই বিষ্ণুপুর সহ সারা রাজজ্যে আমাদের কর্মী, নেতাদের মিথ্যে মামলা দিয়ে জজেলে পুরেছে, খুন করেছে আমাদের কর্মীদের কর্মীদের কিন্তু লাল ঝান্ডার আদর্শে যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা ভয়কে জয় করে লড়ে যাচ্ছেন, কেউ পার্টি ছেড়ে অন্য দলে যাননি। তিনি বলেছেন, যদি বাঁচতে হয় তবে লড়তে হবে, মুর্শিদাবাদ আমাদের সেই পথ দেখিয়েছে। বুথ কামড়ে লড়ে যেতে হবে। কেউ যদি বুথ দখল করতে আসে তাহলে সোজা হয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারবেন না এখানকার মা-বোনেরাই ওদের উচিত শিক্ষা দেবেন রাজীবুল হক সেই লড়ায়ের পথই চিনিয়ে গেছেন।
এদিন সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামপন্থী প্রার্থী শ্যামলী প্রধান, পার্টি নেতা তাপস সরকার, সুরেন হেমব্রম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্টি নেতা অপূর্ব চ্যাটার্জি।
Comments :0