হিসেব মতই বললেন, ‘রামই বিধান, রামই ভারতের পরিচয়’। সংবিধান যদিও দেশের বিধি এবং বিধানে বা পরিচয়ে এমন উল্লেখ করেনি। স্বাধীনতা আন্দোলনের মর্ম প্রতিফলিত হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের ঘোষণায়। সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যের প্রতিটি শব্দে নীরব থাকলেন নরেন্দ্র মোদী।
দেশের যুবক যুবতীদের উদ্দেশ্যের তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান ভারত যুব শক্তির ওপর নির্ভরশীল। আমি যুবক যুবতীদের বলব আমাদের হাজার বছরের পরম্পরা এবং বর্তমান সময়ের সাফল্যকে মাথায় রেখে তাদের এগিয়ে যেতে হবে।’’
প্রধানমন্ত্রী যুবক যুবতীদের বললেন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে। কিন্তু কোনও ভবিষ্যতের দিকে তার কোন দিশা তিনি দেখাতে পারলেন না। রাম রাজত্বের সাথে নিজের রাজত্বের তুলনা করলেও কর্মসংস্থান বা চড়া দামে জিনিস কিনতে বাধ্য হওয়া নাগরিকদের যন্ত্রণায় নীরব থাকলেন। ‘নতুন ভারত’-র প্রধানমন্ত্রী যেমন নীরব থাকেন মণিপুরে ভয়াবহ জাতিদাঙ্গা বা ধর্ষকদের মুক্তিতে।
কোন দিশা তিনি দেখাতে পারলেন। আগামী দিন ‘রামের আদর্শকে’ মাথায় রেখে দেশ কি ভাবে চলবে তাও তিনি বলতে পারলেন না।
উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘মন্দিরের কাজ হয়েছে, এবার আমাদের আগামী দিনের কথা ভাবতে হবে। আমাদের আজ থেকে হাজার পরবর্তী উন্নত দেশ তৈরি করতে হবে।’’ প্রধানমন্ত্রী যখন অযোধ্যায় দাঁড়িয়ে দাবি করছেন যে ভারত আগামী দিনে উন্নতির দিকে এগোবে তখন আমাদের দেশের বেকারত্বের হার স্বাধীনতার পর সর্বাধিক।
নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন রাম মন্দির নির্মান ভারতের শান্তি, পারস্পরিক বন্ধুত্বের প্রতীক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কথার সাথে বাস্তবে কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ধর্মের নামে, জাতের নামে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করা হচ্ছে। সংবিধান স্বীকৃত যেই মৌলিক অধিকার তার আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আক্রান্ত।
বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর কথায় সাম্প্রদায়িক উষ্কানি থাকবে না তা হতে পারে না। রামের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নাম করে হালকা ভাবে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি দিয়ে গেলেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘রামের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাদের ত্যাগ, তপস্যায় কিছু খামতি নি্শ্চয় ছিল যার জন্য আমাদের এই কাজ করতে এতোদিন সময় লাগলো।’’
প্রধানমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি রাম মন্দির নির্মানে হিন্দুত্ববাদীদের ভূমিকা, মসজিদ ভাঙা তারপর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের কথা বলছেন। তারপরই তিনি বলেন, ‘‘বিচার বিভাগের কাছে কৃতজ্ঞ ন্যায়ের মর্যাদা রাখার জন্য।’’
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে মন্দির নির্মানের রায় দেয়। তবে সেই রায়ে স্পষ্ট বলা হয় যে, মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মান করার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তারা মন্দির নির্মাণের রায় দিচ্ছে। সেই রায়েই ঐতিহাসিক সৌধ বাবরি মসজিদ ভাঙার নিন্দাও করা হয়েছিল!
এদিনের সভা থেকে বিরোধীদেরও আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলেছিল মন্দির হলে আগুন জ্বলবে। তারা দেশের স্বরূপ জানে না।’’ প্রধানমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন তখন তার পিছনে বসে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। রাম মন্দির নির্মান এবং বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে ছিল আরএসএস এবং বিজেপি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
Comments :0