Murshidabad

সাজানো মামলায় জামিন পেলেন মুর্শিদাবাদের আন্দোলনকারীরা

রাজ্য

অনির্বাণ দে: বহরমপুর

তৃণমূলের নির্দেশে মামলা সাজিয়েছিল পুলিশ। মিথ্যা মামলা, চক্রান্ত ব্যর্থ করে জেলের বাইরে পা রাখলেন মুর্শিদাবাদের ১৫ জন খেতমজুর, যুব, কৃষক সংগঠনের নেতাকর্মী। জানিয়ে দিলেন জেলের ভেতরে থেকেও তাঁরা রাস্তায় আরও বড় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।   
সোমবার দুপুরে আইনজীবী শৈবেন্দ্রনাথ সরকার জানান, ১৫ জনেরই জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়ে আইন অমান্য আন্দোলন থেকে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মোট ২৫ জনের নামে আইপিসি’র ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৫৩, ১৮৬, ১৮৮, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩, ১২০বি ও ৩০৭ধারায় মোট ২৫ জনের নামে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। সেদিন আইন অমান্য অভিযানে শামিল মানুষের উপর নির্বিচারে লাঠি চালায় পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। তারফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ডোমকলের সিপিআই(এম) কর্মী কমরেড আনারুল ইসলাম, আন্দোলন থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু হয় তাঁর।
সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়, কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে আনারুল ইসলামের। ১৪ তারিখ ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে ৪ জনের ৩ দিনের পুলিশ হেপাজত ও বাকিদের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানি ছিল, কিন্তু সেদিন আঘাতজনিত ইনজুরি রিপোর্ট দায়ের করেনি পুলিশ। খারিজ হয় জামিনের আবেদন। ২৬ তারিখ কেস ডায়েরি এবং ওই রিপোর্ট জমা করার কথা ছিল।
এদিন সিজেএম অলোকেশ দাসের এজলাসে জেলবন্দি আন্দোলনকারীদের জামিনের জন্য আবেদন করেন আইনজীবীরা। আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন, ২৫ জনের নামে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ ইনজুরি রিপোর্ট আদালতে দেখাতে পারেনি পুলিশ। আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এফআইআর থেকেই স্পষ্ট ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মামলা সাজানো হয়েছে। কৃষক, খেতমজুর আন্দোলনের নেতারা আইন অমান্য আন্দোলন সফল ঘোষণার পর অর্থাৎ আন্দোলনের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর লাঠি চালিয়ছে পুলিশ। জামিন আটকাতে সকলের ইনজুরি রিপোর্টও জমা করেনি পুলিশ। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সওয়াল করেন সরকারি আইনজীবী।
এদিন আদালতে জামিনের পক্ষে সওয়াল করেন এআইএলইউ নিযুক্ত প্রবীণ আইনজীবী আবু বাক্কার সিদ্দিকি, কাঞ্চনলাল মুখার্জি। জামিনের পক্ষে সওয়াল করেন এআইএলইউ জেলা সম্পাদক শৈবেন্দ্রনাথ সরকার, সভাপতি মইনুল হক, আইনজীবী রাজদীপ গোস্বামী, সোমনাথ মৈত্র, তোজাম্মেল হক সহ এআইএলইউ’র অনান্য আইনজীবীরা। 
শৈবেন্দ্রনাথ সরকার জানান, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছিল এটা পরিষ্কার। আইন অমান্য আন্দোলনের ঘটনায় ২৫ জনের নামে এফআইআর দায়ের করেছিল পুলিশ। ঘটনার দু’দিন আগে পা ভেঙে শয্যাশায়ী সিপিআই(এম)’এর জেলা সম্পাদক জামির মোল্লার নামেও এফআইআর করা হয়েছি। এফআইআর’এ নাম রয়েছে বর্ষীয়ান গণআন্দোলনের নেতাদের। এই মামলায় আইনি লড়াই চলবে।
সোমবার সকালে বহরমপুর সংশোধনাগারে জেলবন্দিদের সঙ্গে দেখা করেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা প্রমুখ। জেলবন্দিরা মীনাক্ষী, ধ্রুবদের জানান, মিথ্যা মামলায় দমে যাননি কেউ। জেলের ভিতরেই রাস্তার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। মীনাক্ষী বলেছেন, শুধু মুর্শিদাবাদ, সন্দেশখালি নয়। রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদী যুবক-যুবতীদের জেলবন্দি করে রাখছে পুলিশ প্রশাসন। বিজেপি’র রাস্তাতেই চলছে তৃণমূল। চালাচ্ছে হিটলারি শাসন। মীনাক্ষী এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, যত প্রতিবাদীদের জেলে পাঠানো হচ্ছে, সাধারণ মানুষের রাগ তত বাড়ছে। এবার সময় এসেছে রাস্তায় নামার। জেলের থেকে রাস্তা অনেক বড়ো।  
এদিন ডিওয়াইএফআই জেলা দপ্তর থেকে পায়ে হেঁটে আদালতের দিকে যান ডিওয়াইএফআই নেতাকর্মীরা। আদালত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা বদরুদ্দোজা খান, সোমনাথ সিংহরায়, নৃপেন চৌধুরি প্রমুখ। আদালতের বাইরে বেরিয়ে ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেন, তৃণমূল আর পুলিশ যতই মামলা করুক, রাস্তায় লড়াই থেকে আমরা এক ইঞ্চি সরে আসব না। বিভাজনের রাজনীতিকে হারিয়ে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে লড়াই গড়ে তোলা হবে। 
জামিনে মুক্ত আন্দোলনকারীদের লড়াইকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি। সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, মানুষের অধিকারে আন্দোলনে নেমেছিলেন যাঁরা, তাঁদেরকে জেল হেপাজতে রাখা হয়েছিল। এই  সাজানো  মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। রাজ্যজুড়েই এইভাবে মিথ্যা মামলায় বামপন্থীদের ফাঁসানো হচ্ছে। আর তৃণমূলের নেতারা খুন করে, লুট করে, বুক ফুলিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকসভার আগে আমাদের নেতা, কর্মীদের জেলে আটকে রাখার চক্রান্ত হয়েছিল। সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। 
এদিন জামিনে মুক্ত হয়েছেন খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক জামাল হোসেন, ডিওয়াইএফআই জেলা সম্পাদক সন্দীপন দাস, ডিওয়াইএফআই জেলা সভাপতি সৈয়দ নুরুল হাসান, যুবনেতা শাহনাওয়াজ ইসলাম, লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল হক, যুবনেতা হাসমত সেখ, সাদ আলি, জয়দেব পাল, কৃষক খেতমজুর আন্দোলনের নেতা রিন্টু মণ্ডল, জামাল হোসেন আনসারি, ফেরেসতুল্লাহ মণ্ডল, মইদুল ইসলাম মিয়া, আব্দুল আলিম সেখ, অমল হেমব্রম, চারউদ্দিন ।
এদিন রাত পর্যন্ত বহরমপুর সংশোধনাগারের বাইরে ১৫ জনের জন্য অপেক্ষা করেছেন সিপিআআই(এম) নেতা, কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা। রাত ৮টা নাগাদ বাইরে আসতেই  বার বার স্লোগান ও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। সংশোধনাগারের সামনে থেকে জেলবন্দীদের নিয়ে মিছিল করে টেক্সটাইল মোড় হয়ে বহরমপুরে সিপিআই(এম) জেলা অফিসে আসেন নেতাকর্মীরা।  

Comments :0

Login to leave a comment