Panchayat Elections Birbhum

বীরভূমে জেলা পরিষদের সিংহভাগ মনোনয়ন জমা বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের

রাজ্য

panchayat election birbhum

রণদীপ মিত্র: সিউড়ি

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূম জেলা পরিষদের কোনও আসনেই বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ দখল করেছিল শাসক তৃণমূল। এবার বীরভূম জেলায় জেলা পরিষদ স্তরে ইতিমধ্যেই বামফ্রন্ট-কংগ্রেস যৌথভাবে প্রথম দু’দিনেই ৬০ শতাংশ আসনে মনোনয়নপত্র জমা করে ফেলেছে। সামান্য যা বাকি আছে তা আগামী দু’দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে, রবিবার জানিয়ে দিয়েছেন বামফ্রন্ট-কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। মনোনয়নের এই চিত্র দেখে বীরভূমের মানুষ এখন বলছেন, ‘উন্নয়ন তখন রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল, এখন তিহার জেলে শুয়ে আছে।’
‘‘২০১৮ আর ২০২৩-এক নয়। মানুষের যা মেজাজ তাতে তৃণমূলকে যে সমঝে চলতে হবে, বিলক্ষণ বুঝেছেন শাসক দলের নেতারা। এবার পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে লুটেরাদের হটিয়ে মানুষের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার জোটবদ্ধ লড়াই হবে।’’ রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে একযোগে এই ঘোষণা করেছেন বীরভূম জেলা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। সেই সঙ্গে এই লড়াইয়ে সর্বতোভাবেই শামিল হওয়ার বার্তা দিয়েছে সিপিআই(এম-এল), সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন, সিপিআই (এমএল-এনডি)-র মতো বামপন্থী দলগুলিও।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সারা রাজ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যত ধর্ষণ করার নজিরে শীর্ষে ছিল তৃণমূলের বাহুবলী নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূম জেলা। সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে বিরোধীদের প্রার্থীপদ জমা দিতে না দিয়ে গতবার পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের প্রায় ৯০ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লুট করেছিল তৃণমূল। এদিন বামফ্রন্ট-কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ভাগে কে ক’টি আসন পেল বড় কথা নয়। একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব আসনেই তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী শক্তির জয় সুনিশ্চিত করাটাই মূল লক্ষ্য। জেলা পরিষদের পাশাপাশি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রেও মনোনয়ন দাখিল সম্পন্ন হয়েছে অনেক আসনেই। আগামী দু’দিনের মধ্যে অধিকাংশ আসনে মনোনয়ন সম্পন্ন হয়ে যাবে বলেও আশাবাদী বাম-কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। 
এদিন সিউড়িতে সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা কমিটির কার্যালয় সুরেন-শরদীশ ট্রাস্ট ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমরা সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও তার দোসর লুটেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপকতর ঐক্য গঠনের ডাক দিয়েছি। তাতে প্রতিদিন মানুষের আস্থা বাড়ছে। আবার এই ঐক্যবদ্ধ লড়াই শুধু একটি পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য নয়। আগামীতেও সব ধরনের সংগ্রামে এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে।’’

এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেসের সহসভাপতি চঞ্চল চ্যাটার্জি। তাঁকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আসন সমঝোতা নিয়ে বামফ্রন্টের সঙ্গে নানা জায়গায় সমস্যা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সমস্যা মিটবে কী করে? উত্তরে কংগ্রেস নেতা জানিয়েছেন, ‘‘আসন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে এই কথা মানতে রাজি নই। বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের যৌথ আন্দোলনের উপর আস্থা রাখা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আমরা আলোচনা সাপেক্ষেই আমাদের রণকৌশল ঠিক করেছি। কে ক’টি আসন ভাগে পেল সেটা বড় কথা নয়। কে কোথায় দাঁড়ালে জিতবে এই ভাবনাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা আসন ভাগাভাগি আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন করে ফেলেছি। যেটুকু বাকি আছে তা একদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এককথায় আমাদের জোট হয়েছে সর্বাত্মক।’’ 
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে এই যৌথ লড়াই সর্বতভাবে অংশগ্রহণ করার অঙ্গীকার করেছেন সিপিআই (এমএল)-র নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে উপস্থিত হতে না পারলেও একই বার্তা পাঠানো হয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, সিপিআই (এমএল-এনডি)’র তরফ থেকেও। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা দীপঙ্কর চক্রবর্তী, ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক চ্যাটার্জি, বিজয় বাগদি, সিপিআই’র দ্বারিক চক্রবর্তী, আরএসপি’র স্বপন রায়, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্ত মালাকার, আরসিপিআই’র খগেন মাল, সিপিআই(এমএল)’র সুবোধ মিত্র প্রমুখ। 
অপরদিকে, গত শনিবার লাভপুরে মনোনয়ন পর্বে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ মাইক হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন।


মাইকে তিনি বলেছেন, ‘‘এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া যাবে না। কেউ যদি দেয় তাহলে তার দায় তৃণমূল নেবে না।’’ এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘তৃণমূল বিধায়ক কে এখানে? নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। সেই দায়িত্ব তৃণমূল নেয় কীভাবে? তাছাড়াও তৃণমূল বিধায়ক আসলে বিরোধীদের নয়, নিজেদের দলের লোককেই এই বার্তা দিতে চেয়েছে। কারণ তৃণমূলেরই এক গোষ্ঠী তো এখন অপর গোষ্ঠীর মনোনয়ন দানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment