দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি
এলাকায় রয়েছে ডগাইজান নদী। ওপারে বাংলাদেশ। এপারে পঞ্চায়েত এলাকা— গড়ালবাড়ি। গ্রামে হিন্দুও আছেন। মুসলমানও। অশান্তি ছিল না কখনও। ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে গড়ালবাড়িতে বামফ্রন্ট জয়ী হয়। ২০১৮-তেও একই ধারা। তৃণমূল দখলের চেষ্টা করেছিল। নিরাশিপুকুরি বুথে জয়যুক্ত হয় সিপিআই(এম)।
গত পাঁচ বছর হয়নি গ্রাম সভা হয়নি। পঞ্চায়েতের কোনও বৈঠকে ডাক পাননি সিপিআই(এম)-র সদস্য। গরিব মানুষ ১০০ দিনের কাজ পাননি। গ্রামে কাজের অভাব, বিস্তীর্ণ এলাকায় আলু চাষ হয়। এলাকায় রয়েছে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে তৈরি দু’টি হিমঘর। সেই হিমঘরে গত মরশুমে আলু রাখাকে কেন্দ্র করে হিমঘর খোলার প্রথম দিনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। সেই ঘটনায় বামপন্থীদের নাম ঢুকিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে প্রশাসন। তারপরও দমানো যায়নি বামপন্থীদের। আলুর বন্ড দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য থেকে প্রধান, সকলেই কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত বলে মানুষের অভিযোগ। বন্ড পাননি এলাকার আলুচাষিরা। জলপাইগুড়ি পৌরসভা পার্শ্ববর্তী ৪টি পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকদের ছাড়া শহরে অন্য টোটো চালকদের ঢুকতে দেবে না সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর গড়ালবাড়ি এলাকার টোটো চালকদের নিয়ে পৌরসভা অভিযান করে তাঁদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন বামপন্থীরা। গড়ালবাড়ি এলাকায় অনেক ছোট চা বাগান থাকলেও চা বাগানে পাতার দাম না থাকায় চরম সঙ্কটে ক্ষুদ্র চা চাষিরা, ১০০দিনের কাজে দুর্নীতি, তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ একাধিক পরিবারে একাধিক জব কার্ড তৈরি করে গরিব মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন এক মহিলার বার্ধক্য ভাতা গ্রাম পঞ্চায়েত বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তালিকায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছে পঞ্চায়েত।
শহর সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েত অরবিন্দ। গৌড়ি হাটের ব্রিজ বিগত কয়েক বছর থেকে ভেঙে পড়ে আছে। আসাম মোড় সংলগ্ন মুন্ডা বস্তিতে বর্ষায় সারা বছর জল জমে থাকে। নয়াপাড়া কাঠালতলা থেকে গোমস্তা পাড়া পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। পানীয় জলের সমস্যা অঞ্চলের সর্বত্র। তৃণমূলের নেতাদের ঘরের লোকদেরকে আবাস যোজনার তালিকায় নাম— যে গ্রামেই যাওয়া হচ্ছে, কথা হচ্ছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ এমননই।
অঞ্চলের ২২টির মধ্যে ৪টি আসনে বিজেপি জিতলেও তাদের কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি। তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই তারা কাজ করেছে। করলা ভ্যালি মোড় থেকে করলা ভ্যালি চা বাগান পর্যন্ত রাস্তার খুবই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। বিগত পাঁচ বছর অরবিন্দ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বুথে নেশার দ্রব্য বিক্রি উৎসাহিত হয়েছে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত। তাদের সরকার। পুলিশও তাদের কথা শুনে চলে চলে। তা সত্বেও নেশার সামগ্রী বিক্রি বাড়ছে। নেশায় বুঁদ যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই নেশাগ্রস্ত যুবকদের দিয়েই তৃণমূল বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম করাচ্ছে। ছোট দোকানদার রমেন শীল অভিযোগ করেন, সন্ধ্যার পর থেকে অরবিন্দ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বাজার এলাকায় নেশাগ্রস্তদের দাপট বৃদ্ধি পায়। এরা সবই শাসকদলের আশ্রিত, গ্রামবাসীদের অভিযোগ এমনই। করলা ভ্যালি চা বাগানের চা শ্রমিক সোমারু এক্কা বলেন ন্যূনতম মজুরির লড়াইয়ে ২০১৪ সাল থেকে তাদের পাশে আছেন শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ। এ লড়াইকে আরও জোরদার করতে বাগানের বাইরে গ্রামেও লালঝান্ডার শক্তিশালী হওয়া জরুরি। তাই এবার বাগানের শ্রমিকরা বামপন্থীদেরই ভোট দেবেন।
Comments :0