পঞ্চায়েতের একমাত্র জয়ী সিপিআই(এম) প্রার্থীর সন্তানের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে দলবদল করালো তৃণমূল। সেই প্রার্থী গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে ফাঁস করলেন জঘন্য এই ঘটনা। দলবদল ফলাও করে দেখালেও প্রার্থীর বয়ান ঠাঁই পেলনা কোনও সংবাদমাধ্যমে। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনারও সাক্ষী থাকল ২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচন।
পূর্ব বর্ধমানের কালনার কাঁকুড়িয়া পঞ্চায়েতের একটি আসনে জয়ী হন সিপিআই(এম) প্রার্থী গীতা হাঁসদা। গণনা কেন্দ্রের মধ্যেই তাঁকে দলে যোগ দেওয়ানোর দাবি করে তৃণমূল। সংবাদমাধ্যমেও এই ঘটনা প্রচার করা হয়।
কিন্তু গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গীতা হাঁসদা আসল ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, পঞ্চায়েতের একমাত্র বাম প্রার্থী হিসেবে তিনি জয়ী হন। এরপর তৃণমূল তাঁকে হুমকি দিতে শুরু করে। তাঁর শিশুসন্তানের অনিষ্ট করারও হুমকি দেওয়া হয়। এই অবস্থায় কোনও উপায় না দেখে তিনি তৃণমূলের শেখানো কিছু কথা বলতে বাধ্য হন।
গীতা হাঁসদার এই বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিআই(এম)’র তরফেও।
সবমিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ইতিহাসে এমন কালো দিন আর দু’টি রয়েছে কিনা সন্দেহ।
যদিও গণতন্ত্র হত্যার এই চিত্র কেবলমাত্র কালনাতেই সীমাবদ্ধ নয়। পূর্ব বর্ধমানের রায়না ব্লকের পলাসন পঞ্চায়েত। গণনার পরে এই পঞ্চায়েতে ১৮-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। কিন্তু একাধিকবার পুনঃগণনা, গায়ের জোরে জয়ী প্রার্থীদের মারধোর করে সেই ফল ১০-৮ এ নামিয়ে এনেছে তৃণমূল। এমনটাই অভিযোগ পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিআই(এম) নেতৃত্বের।
হুগলী জেলার ফুরফুরা পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতেই রয়েছে ফুরফুরা শরিফ। সেই পঞ্চায়েতে ২২-৭ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বাম-আইএসএফ জোটের প্রার্থীরা। জেলার বাম এবং আইএসএফ নেতৃত্বের অভিযোগ, গায়ের জোরে জনমত উল্টে দিয়েছে তৃণমূল। তারফলে পঞ্চায়েত ফল দাঁড়িয়েছে ২৯-০!
এর পাশাপাশি অভিযোগ এসেছে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘী ব্লক থেকেও। অভিযোগ, সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ের সংশাপত্র দিতে দিচ্ছেন না করণদিঘীর বিধায়ক গৌতম পাল। তিনি ২০১৮ সালেও ভোট লুটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। একই কায়দায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর ব্লকের কালিকাপুর-১ এবং ২ নম্বর পঞ্চায়েতের জয়ী সিপিআই(এম) প্রার্থীদের সংশাপত্র নিতে বাধা দিচ্ছেন বিধায়ক লাভলী মৈত্র। বাদুড়িয়া ব্লকেও গায়ের জোরে জনমত উল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাবড়ায় সিপিআই(এম)’র জয়ী প্রার্থীর ব্যালট চিবিয়ে খেয়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
এই সমস্ত ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে সরব হয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যম গণনা কেন্দ্রের ভিতরে দলবদলের ভিডিও দেখালেও, বাইরে বেরিয়ে এসে গীতা হাঁসদা কী বললেন সেটা দেখালো না। তিনি মিডিয়ার একাংশ এবং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে জানিয়েছেন, বিডিওকে সরিয়ে বিধায়করা গণনা প্রক্রিয়াকে ‘প্রিসাইড’ করছেন। যেখানে তাঁদের থাকার কথাই নয়, সেখানেও তারা রয়েছেন, এবং লুট চালাচ্ছেন। ঘুষখোরদের কালেক্টার তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু আষাঢ় মাসেই জনমতের বর্ষণ শেষ হবেনা।
তিনি জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই লুটের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সরব হতে শুরু করবেন। রাস্তার লড়াই জারি থাকবে। যতক্ষণ না রাজ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ততক্ষণ লড়াই জারি থাকবে।
Comments :0