EMPLOYEE STATE Govt

ভয়াবহ সরকারী কর্মী সঙ্কোচনে বিপর্যস্ত পরিষেবা (প্রথম পর্ব)

রাজ্য

শ্যামল কুমার মিত্র
ভয়াবহ কর্মী সঙ্কটের সমস্যার প্রতি উদাসীন থেকে রাজ্য সরকার
প্রশাসনকে অস্থায়ী কর্মী নির্ভর করে তোলার যে পরিকল্পনা নিয়েছে
এবিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে সচেতন পাঠকবর্গকে নিম্নে প্রদত্ত তালিকাগুলি লক্ষ্য করতে অনুরোধ করব।
তালিকা নম্বর: ১ (তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন)
(এদেশের জনসংখ্যার বয়সভিত্তিক বিন্যাসের তালিকা)
১ থেকে ২৪ বছর   ২৫ থেকে ৩৪ বছর   ৩৫ বছর    তদূর্ধ্বে  গড় বয়স
      ৫০%                ১৫%           ৩৫%       ২৭.৬ বছর
জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৪ বছর বা তার নিচে এবং গড় বয়স মাত্র ২৭.৬ বছর। এহেন বয়স বিন্যাসে যা স্বাভাবিক তা হলো, কর্মসংস্থানের বাজারে জনসংখ্যার সিংহভাগের উপস্থিতি। জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষি এবং শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ আশঙ্কাজনকভাবে ক্রমহ্রাসমান। সিঙ্গুরে উৎপাদন শুরুর মুখে টাটাদের মোটরগাড়ি কারখানা ধ্বংসের সর্বনাশা কার্যক্রম সার্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর আতঙ্কের বাস্তবতা তৈরি করেছে, যার ফলে অতিক্রান্ত ১৩ বছরে এরাজ্যে শিল্পে কার্যত কোনও নতুন বিনিয়োগ নেই। ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ কার্যত প্রতীকী। এ অবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই সরকারি ক্ষেত্রে সমস্ত শূন্যপদ পূরণ এবং কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এমনটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু উভয় সরকারই স্থায়ী শূন্যপদে নিয়োগ, আক্ষরিক অর্থে বন্ধ করে দিয়েছে, অথচ বেকারি স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ।
তালিকা নম্বর : ২
(রাজ্য পুলিশে শূন্যপদ)
পদের নাম   শূন্যপদ
কনস্টেবল    ৩৫,০০০
এ.এস.আই   ৩,৫০০
এস.আই         ৬৫
ডি.এস.পি        ৭৫
অন্যান্য       ১৩,৮৬০
সর্বমোট       ৫৩,০০০
(তথ্যসূত্র : রাজ্য পুলিশ)
তালিকা নম্বর : ৩
(কলকাতা পুলিশে শূন্যপদ)
পদের নাম     শূন্যপদ
কনস্টেবল     ৭,৭৪২
এ.এস.আই    ১,২৭৩
এস.আই         ৭৫৬
সার্জেন্ট          ৬০৯
সর্বমোট       ১০,৩৮০
(তথ্যসূত্র : কলকাতা পুলিশ)
রাজ্য পুলিশে অনুমোদিত পদের ৪১% এবং কলকাতা পুলিশে অনুমোদিত পদসংখ্যার ৫০% পদ শূন্য। কর্মরত পুলিশ কর্মীদের একটি বড় অংশ তথাকথিত ভি.আই.পি-দের দেহরক্ষী হিসাবে নিযুক্ত। একটা অংশ আমলা, মন্ত্রীদের বাড়িতে আক্ষরিক অর্থে গৃহভৃত্যের কাজে নিযুক্ত। ফলে বাস্তবে পুলিশের নিয়মিত কাজে নিযুক্ত কর্মরত কর্মী সংখ্যা আরও কম। এনসিআরবি’র তথ্য অনুসারে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ১৬০.৭৬ জন কর্মরত পুলিশ কর্মী প্রয়োজন, সারা ভারতে আছেন ১৫২.৮০ জন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা মাত্র ৯৭.৬৬ জন। রাজ্যের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনের তুলনায় এত কম সংখ্যায় কর্মী কোন ভোকালটনিকে পুলিশকে অতীতের মতো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড-র সমমানে পৌঁছে দেবে? ১৯২৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আমলে পুলিশকর্মীরা ইউনিয়ন/অ্যাসোসিয়েশন করার অধিকার অর্জন করেছিলেন। ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি বর্তমান সরকার সেই অধিকার কেড়ে নেয়। ফলে কাজের চাপে দিশেহারা পুলিশ কর্মীদের অসহায় অবস্থা জানানোর মতো কোনও ফোরামও নেই। এক শ্রেণির পদস্থ পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীর দলদাসসুলভ আচরণ ও বেপরোয়া দুর্নীতি সমগ্র পুলিশকর্মী সমাজকে ‘গণশত্রু’হিসাবে জন ঘৃণার সামনে এনে ফেলেছে। হাজার হাজার সৎ-স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ এবং জনতার কাছে দায়বদ্ধ পুলিশকর্মী অসহায় অবস্থায় চোখের জল ফেলছেন।
তালিকা নম্বর : ৪
(শিক্ষকদের শূন্যপদ)
পদের নাম          শূন্যপদ
মাদ্রাসা শিক্ষক    ১০,০০০
প্রাথমিক শিক্ষক   ১,৯০,০৮৫
মাধ্যমিক শিক্ষক   ১,৩৯,২৯৫
উ.মা. শিক্ষক        ২৩,৭১১
প্রধান শিক্ষক          ৫,৮২৪
শিক্ষাকর্মী           ২৯,২৩৫
সর্বমোট            ৩,৯৮,১৫০
(তথ্যসূত্র : রাজ্য বিধানসভায় ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু)
এই তালিকা থেকে স্পষ্ট শুধু উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের ৩,৯৮,১৫০ টি পদ শূন্য। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে অনুমোদিত পদের কমবেশি ৫০% পদ শূন্য। ১৩টি সরকারি গ্রন্থাগারে ১৬২টি অনুমোদিত পদের ৯২ (৫৬.৭৯%)টি পদ শূন্য। ২৪৮০টি সরকার পোষিত গ্রন্থাগারে ৫৫২০টি অনুমোদিত পদের ৪১৭৭ টি (৭৫.৬৭%) পদ শূন্য। ফলে গ্রন্থাগারসহ গোটা সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত কোমায়।
তালিকা নম্বর : ৫
(স্বাস্থ্য বিভাগে অনুমোদিত পদ, কর্মরত কর্মী ও শূন্যপদ)
পদের নাম    অনুমোদিত পদ   কর্মরত কর্মী   শূন্যপদ  শতাংশের শূন্যপদ
নার্স             ৫৪,৫৮৪         ৪৩,৬০৬    ১০,৯৭৮    ২০.১১%
নার্স               ৩,৮৯০          ২,৫৮৮     ১,৩০২    ৩৩.৪৭%
(সুপার স্পেশালিটি)
জি. ডি. এ            ২৭,৫৬৯        ৯,৪৮৬    ১৮,০৮৩    ৬৫.৫৯%
কর্মবন্ধু (সুইপার)        ৯,০৩৮        ২,৮৮৪    ৬,১৫৪    ৬৮.০৯%
ডোম                      ২৯০            ৯৩      ১৯৭    ৬৭.৯৩%
মেডিকেল অফিসার    ৬,৯০০    ৫,৮৫৯    ১,০৪১     ১৫.০৮%
মেডিকেল অফিসার     ৩,৪২৮   ২,২২৭    ১,২০১    ৩৫.০৩%
(স্পেশালিস্ট)
বি.এম.ও.এইচ           ৩৭০      ২৪২      ১২৮    ৩৪.৫৯%
অপটোমেট্রিস্ট            ৫০৩      ২৭৭     ২২৬    ৪৪.৯৩%
ডব্লিউ.বি.পি.এইচ.অ্যান্ড এ.এস ৫০২    ৪৪১    ৬১    ১২.১৫%
(বি.এম.ও.এইচ বাদে)
ডাইরেক্টরেট
এল.ডি.সি               ২,৩৯৭    ৭০১   ১,৬৯৬   ৭০.৯৩%
ইউ.ডি.সি                ১,৭৬৮    ৭৪৯   ১,০১৯   ৫৭.৬৩%
হেড ক্লার্ক                  ৩৬৫    ৩৫৩      ১২    ৩.২৮%
সচিবালয় কর্মী-আধিকারিক    তথ্য প্রার্থনা করেও পাওয়া যায়নি
তথ্যসূত্র : এ কলমচিকে ডাইরেক্টরেট অফ্ হেলথ্ সার্ভিসেস প্রদত্ত পত্রনম্বর : HAD/12M-03-23/04/A2789 dt. 06.04.2023
রাজ্যে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় সরকারি হাসপাতালে বেড সংখ্যা, ডাক্তার সংখ্যা এবং নার্স সংখ্যা যথাক্রমে ৯৭, ৮.৭৬ এবং ৪৬.১৯, যা প্রয়োজনের নিরীখে তো বটেই, সর্বভারতীয় গড় এবং অন্য রাজ্যের থেকেও অনেক কম। বিনামূল্যে সরবরাহযোগ্য ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তালিকা ক্রমশই ছোট হচ্ছে। সামগ্রিক পরিকাঠামো যথেষ্ট খারাপ। কর্মরত ডাক্তার-নার্সদের একটা অংশকে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে সরিয়ে প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবার সর্বস্তরে নজিরবিহীন বিপুল কর্মী ঘাটতি — কোন ধমক-চমকের সরকারি নীতিতে এই পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় আগত রোগীদের জনপ্রত্যাশিত মান ও গতি এবং মানবিকতা প্রত্যাশিত সহমর্মিতার সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম সংখ্যায় কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মীদের পক্ষে? ফলে সরকারি হাসপাতালগুলিতে জনরোষের শিকার হচ্ছেন কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্সরা যাঁরা কর্মী ঘাটতির কারণে তাঁদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের অনেক বেশি কাজ করে চলেছেন। এই জনরোষ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্নে সরকার দার্শনিক সুলভ নিরাসক্ত।
এবার ৬ এবং ৭ নম্বর তালিকা দেখুন। এই ২ টি তালিকায় প্রদত্ত পরিসংখ্যান গত ৩১.১২.২০১৫ তারিখের এবং তথ্যসূত্র : ব্যুরো অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক্স অ্যান্ড স্টাটিস্টিকস্, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ পুরানো তথ্য কেন? ২০১৬ থেকে সরকার এ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ করছে না। তাই বর্তমান অবস্থা বুঝতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে যতদূর সম্ভব সঠিক গণনার অতিরিক্ত কোনও পথ খোলা নেই।
তালিকা নম্বর : ৬
(পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান)
সময়  ৩১ ডিসেমবর, ২০১৫   
 ৩০ বছর পর্যন্ত       ৩১-৪০ বছর        ৪১-৫০ বছর          ৫১-৬০ বছর                 কর্মরতকর্মী  শতাংশ  কর্মরতকর্মী শতাংশ  কর্মরতকর্মী শতাংশ   কর্মরতকর্মী  শতাংশ 
৪৬,১৪৫     ১৩.৯৩   ৬৪,২৮৪   ১৯.৪১   ১,০২,৩৪৩   ৩০.৯০    ১,১৮,৪৭৭  ৩৫.৭৬%
৪০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন সরকারি কর্মীর শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্য ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সীদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। ফলে কম বয়সী সরকারি কর্মীর সংখ্যাধিক্য প্রশাসনের গতির পক্ষে অনুকূল। ২০১৬ সালের শুরুতেই রাজ্যের প্রশাসন বয়স্ক (৪১-৬০ বছর) ৬৬.৬৬% কর্মীর ভারে গতিহারা। ২০১৬ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যত প্রতীকী। ফলে বর্তমানে প্রশাসনে তরুণ কর্মীর তুলনায় বয়স্ক কর্মীর সংখ্যা আতঙ্কজনকভাবে বেশি। অন্যদিকে চলছে শাসকদলের অনুগত কর্মী/আধিকারিকদের একটা বড় অংশের ঢালাও অবসর পরবর্তী পুনর্নিয়োগ। ফলে প্রশাসন বয়সের ভারে স্থবির। অন্যদিকে, সিনিয়রিটি পদোন্নতির মাপকাঠি, ফলে অফিসারের সংখ্যা নিম্নপদের কর্মীর থেকে অনেক বেশি। গোদা বাংলায় প্রশাসনে নির্দেশ/আদেশ দেওয়ার লোক বেশি, কাজ করার লোক কম, কারণ কাজটা নিম্নপদস্থ কর্মীরাই করেন। আক্ষরিক অর্থে, মাথাভারী প্রশাসন।
তালিকা নম্বর : ৭
(রাজ্য সরকারি কর্মীদের লিঙ্গভিত্তিক ও জনগোষ্ঠীগত বিন্যাস)
রাজ্য সরকারি কর্মীসংখ্যা ৩১ ডিসেম্বর.২০১৫  ৩,৩১,২৪৯   
পুরুষ       মহিলা        এস.সি.   এস.টি.   ও.বি.সি.   মুসলিম ২,৬১,৮৮৫ ৬৯,৩৬৪   ৫৮,৫০৮  ১৬,৭৮২  ১৪,৪৮৭    ১৮,৯৮০ ৭৯.০৬%   ২০.৯৪%   ১৭.৬৬%   ৫.০৭%   ৪.৩৭%    ৫.৭৩%
গত ৩১.০৩.১৯৯৬ তারিখে তৎকালীন জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকারি কর্মীদের অনুমোদিত পদসংখ্যা নির্ধারিত হয়েছিল ৪,৮৪,২৯০টি। ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত নতুন কর্মী নিয়োগ সংখ্যায়, আক্ষরিক অর্থে প্রতীকী। কর্মীবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার বিভাগের তথ্য - অবসরগ্রহণ, মৃত্যু ইত্যাদি কারণে বছরে গড়ে ৫% করে কর্মী কমে। সেই হিসাবে ৩১.১২.২০২৩-এ কর্মরত কর্মীসংখ্যা কমবেশি ২,১৯,৭৫৬। অর্থাৎ গত ৩১.০৩.১৯৯৬ এর অনুমোদিত পদের নিরিখে ২০২৪ সালের শুরুতে শূন্যপদ কমবেশি ২,৬৪,৫৩৪ টি। বাস্তব তথ্যের সঙ্গে এই সংখ্যার অতি সামান্য পার্থক্য হতে পারে মাত্র। সরকারি কর্মীরা মানুষকে পরিষেবা দেন। তাই জনসংখ্যায় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনুমোদিত কর্মী পদসংখ্যায় আনুপাতিক বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি, যে কাজ আজও করেনি সরকার। ফলে আমরা বিভিন্ন তালিকায় যে সংখ্যায় শূন্যপদের তথ্য দিচ্ছি, বাস্তবে বর্ধিত জনসংখ্যার কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রকৃত প্রয়োজনভিত্তিক শূন্যপদ অনেক বেশি, কারণ ১৯৯৬-এর তুলনায় ২০২৪-এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। ১৯৮০ সালে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় কর্মরত কর্মীসংখ্যা ছিল ৬৭৬ (তখন রাজ্যের জনসংখ্যা ও কর্মরত কর্মীসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫,৪১,০০,০০০ এবং ৩,৬৫,৬১০)। বর্তমানে জনসংখ্যা কমবেশি ১০ কোটি, কর্মরত কর্মীসংখ্যা ২,১৯,৭৫৬। অর্থাৎ প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় কর্মরত কর্মী মাত্র ২১৯। স্বাভাবিকভাবে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ৬৭৬ জন কর্মরত সরকারি কর্মী মানুষকে যে মান ও গতিতে পরিষেবা দিতে পারতেন, প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ২১৯ জন সরকারি কর্মীর পক্ষে তা দেওয়া অসম্ভব। ফলে বিপুল কর্মী ঘাটতির কারণে সরকারি কর্মীরা জনপ্রত্যাশিত মান ও গতিতে মানুষকে পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে জন অসন্তোষ বাড়ছে, কর্মরত কর্মীরা জনরোষের মুখে পড়ছেন, গণশত্রু হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন। ৭ নম্বর তালিকা থেকে স্পষ্ট, কর্মী বিন্যাসে যে লিঙ্গভিত্তিক ও জনগোষ্ঠীগত অনুপাত দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে তা কমবেশি একই আছে, কারণ অবসর লিঙ্গ ও জনগোষ্ঠীর সকলেরই হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা, অথচ মহিলা কর্মীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। মুসলিম জনগোষ্ঠী ২৭-৩০%, সরকারি চাকরিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৫.৭৩%। কর্মীরা সাংবিধানিক সংরক্ষণের অনেক কম জনগোষ্ঠীগত প্রতিনিধিত্ব করছেন —  এসব রাজ্যের পক্ষে আত্মশ্লাঘার বিষয় হতে পারে না।
শূন্যপদের তথ্য থেকে স্পষ্ট মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সঠিকভাবেই বলেছেন, ‘‘ ১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে।’’১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে, অথচ অতিক্রান্ত ১৩ বছরে নিয়মিত নিয়োগের অতীত পরম্পরা বন্ধ। ‘সরকারি কর্মসূচি’ হিসাবে সর্বস্তরে নিয়োগ দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়োগ বিষয়টিকেই প্রহসনে পরিণত করেছে। মাননীয়া তেলেভাজা, ঝালমুড়ি ব্যবসার উন্নততর কর্মসংস্থানের দিশা দেখাচ্ছেন। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। স্থায়ী পদে নিয়োগ না করে নামমাত্র বেতন/মজুরিতে ক্রীতদাস মালিকের কায়দায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস করছেন। কর্মসংস্থানহীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এভাবে কোনোরকম সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই নামমাত্র বেতনে কর্মপ্রার্থী যুবক/যুবতীদের সরকারি কাজে ব্যবহার নিন্দনীয়।
(লেখক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব, পশ্চিমবঙ্গ সরকার)

Comments :0

Login to leave a comment