EDITORIAL

পদত্যাগ রহস্য

সম্পাদকীয় বিভাগ

electoral bond sbi supreme court cpim

লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্ব যখন সর্বোচ্চ স্তরে, দু’চার দিনের মধ্যেই যখন নির্বাচনের দিন ঘোষণার কথা ঠিক সেই গুরত্বপূর্ণ  সময়ে কোনোরকম আগাম ইঙ্গিত ছাড়া আচমকা পদত্যাগ করলেন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। আরও সন্দেহের উদ্রেক করে পদত্যাগ পত্র জমা দেবার সঙ্গে সঙ্গেই কালবিলম্ব না করে গ্রহণ করা হলো। কেন এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পদত্যাগ করতে হলো তার কারণ প্রকাশ করা হয়নি। ফলে রহস্য আরও  ঘনীভূত হয়েছে। মেয়াদ শেষের চার বছর  আগে গোয়েলের হঠাৎ পদত্যাগ‍‌কে ঘিরে রহস্য যেমন দানা  বাঁধছে তেমনি ২০২২ সালে ২২ নভেম্বর তাঁর তড়িঘড়ি নিয়োগকে ঘিরেও সন্দেহও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। তখন ভাবী শিল্পসচিব থেকে প্রধানমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ গোয়েল আচমকা স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছিলেন ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তাঁকে নিয়োগ করা হলো নির্বাচন  কমিশনার পদে। তাই এবারের পদত্যাগের পেছনেও তেমন কোনও রহস্য আছে বলে রাজনৈতিক  মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য কোনও কারণে পদত্যাগ হলে সেটা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া   আচমকা হ‍‌তো না। আগে থেকেই তার আঁচ পাওয়া যেত। বি‍শেষ কোনও কারণে বা ‍বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে পদত্যাগ হলে তার আগাম প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকে, তবে সেটা গোপনে। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবার মুখে এমন কি ঘটলো যে একজন কমিশনারকে আচমকা পদত্যাগ করতে হলো এবং তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণ করতে হলো। স্বাভাবিক অবস্থায় এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ‍ ভোটটা পার করে পদত্যাগ করার  অনুরোধ আসত এবং কোনও দায়িত্বশীল  আমলা সেটা এড়াতে পারত না। তেমন অনুরোধ সম্ভবত আসেনি তাই সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ চেয়েছে পদত্যাগ করুক। কিন্তু কেন?  এই প্রশ্নে একাধিক সম্ভাব্য  উত্তর হতে পারে।
প্রথমত, মুখ্য  নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাত অথবা সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ। তাই সরকার চায়নি তাঁকে রেখে নির্বাচন হোক। প্রবল চাপ সৃষ্টি করে তাকে বাধ্য করা হয়েছে পদত্যাগ করতে। দ্বিতীয়ত, একদা মোদীর অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন গোয়েল। ‘অমৃত ভারত’  প্রকল্পের যাবতীয় পরিকল্পনা-ভাবনা নাকি তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। এবার সম্ভবত মোদী চান তাকে নির্বাচনে প্রার্থী করে সরকারের গুরুদায়িত্ব অর্পণ  করতে। তাই নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ যথাসম্ভব গুটিয়ে আনার পর রাতারাতি পদত্যাগ। তৃতীয়ত, অপর  কমিশনার অনুপচন্দ্র পান্ডের  ১৫ ফেব্রুয়ারি  অবসরের পর নতুন  কমিশনার  নিয়োগে কোনোরকম উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে কি অপেক্ষা  করছিল গোয়েলের পদত্যাগের জন্য। তখন নতুন আইনে মোদীর দু’জন খাস আমলাকে এক সঙ্গে  নিয়োগ করে গোটা নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি সরকারের  ও দলের নিয়ন্ত্রণে এনে ভোটে জেতার রাস্তা প্রশস্থ করা হবে। পদে পদে মোদীরা নির্বাচন বিধিভঙ্গ  করলেও কমিশন চোখ বুজে  কান বন্ধ করে থাকবে।
মনে রাখতে হবে এর আগে অশোক লাভাসা মোদীর বিধিভঙ্গ ছাড় দিতে অস্বীকার করে সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সি লাগিয়ে  শুধু তাকে নাস্তানাবুদ করা হয়নি তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছিল। গোয়েলের সঙ্গে কি তেমন কিছু ঘটেছে? কমিশনে  বসে মোদীকে  দু’হাত তুলে ছাড় দিতে কি অসম্মতি জানিয়েছেন? তাই হেনস্তা থেকে পার পেতে পদটাই ছেড়ে দিলেন।

Comments :0

Login to leave a comment