পুলওয়ামায় গলদ নিয়ে প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের মন্তব্য ঘিরে শোরগোলের মধ্যেই খবর এল সেই জম্মু-কাশ্মীরের সেনা ট্রাকে সন্ত্রাসবাদী হামলায় মৃত্যু হলো পাঁচ জওয়ানের।
পুঞ্চ জেলার রাজৌরি সেক্টর দিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসবাদীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। ভীম্বর গলি এলাকায় বেলা তিনটে নাগাদ এই হামলার পরই ট্রাকটিতে আগুন লেগে যায়। সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, সম্ভবত ট্রাক লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবাদীদের ছোঁড়া গ্রেনেড ফেটেই আগুন লেগেছে।
সেনার নর্দান কমান্ডের তরফে সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, প্রবল বৃষ্টিপাত ও এলাকায় কম দৃশ্যমানতার সুযোগে অজ্ঞাতপরিচয়ী সন্ত্রাসবাদীরা সেনা ট্রাকটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তারপর গ্রেনেডও ছোঁড়া হয়। তাতেই আগুন লেগে যায় গাড়িটিতে। সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী অভিযানে মোতায়েন রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ইউনিটের পাঁচ জওয়ানের মৃত্যু হয়। হামলায় গুরুতর জখম আরও এক জওয়ানকে সেখান থেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, ‘পুঞ্চের মর্মান্তিক ঘটনায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ, ওখানে ট্রাকে আগুন লেগে ভারতীয় সেনা তার পাঁচ সাহসী সেনাকে হারিয়েছে। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।’ পরে সেনা প্রধান মনোজ পান্ডে রাজনাথকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন।
পুঞ্চের এই সন্ত্রাসবাদী হামলার কড়া নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘কড়া ভাষায় এই সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করছি। যে সাহসী জওয়ানরা তাঁদের জীবন দিলেন তাঁদের আত্মীয়দের সমবেদনা জানাই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই নিয়ে কোনও আপস চলতে পারে না।’
প্রাথমিক রিপোর্টে মনে করা হচ্ছিল পুঞ্চের ভাটা ধুরিয়ানে ওই সেনা ট্রাকটিতে সম্ভবত বজ্রপাত থেকে আগুন লেগেছে। মেন্ধার সাব ডিভিসনের ভাটা ধুরিয়ানে ঘটনাটি ঘটে। সেনা ট্রাকটি ভীম্বর গলি থেকে সাঙ্গিওট যাচ্ছিল।
ঘটনার খবর পেয়ে ৯০ কিলোমিার দূরের পুঞ্চ থেকে সেনা ও পুলিশ কর্মী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাসি শুরু করেছে বাহিনী। ভীম্বর গলি থেকে সারাংকোট ট্রাফিক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সাঙ্গিওটের যেখানে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে সেই জায়গাটি বরাবরই পাক সন্ত্রাসবাদীদের ট্রানজিট রুট হিসাবে পরিচিত। কিন্তু তেমন একটি এলাকা দিয়ে সেনা ট্রাক যাওয়ার সময় কেন উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিজি এস বৈদ্যর কথায়, এ তো বড় ধরনের নিরপত্তার গলদ। বোঝাই যাচ্ছে যথাযথ এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) নেওয়া হয়নি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই সেনা চলাচলের আগে অবশ্যই এমন সাবধানতা নেওয়া উচিত ছিল বলে প্রাক্তন পুলিশ প্রধানের মত।
গত বছর বৈষ্ণোদেবী যাওয়ার পথে কাটরার কাছে একটি বাসে আগুন লেগে চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। গুরুতর জখম হয়েছিল আরও ২২ জন। পরে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ফ্রিডম ফাইটার্স-এর নামে একটি সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এটি সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা। আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে।
Comments :0