ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে দুলকি চালে হেঁটে চলেছে ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’। নিজের ছন্দে সে হাঁটছে, কোন কিছুরই পরোয়া না করে। সেই বাঘের পিছনে দেখা যাচ্ছে দীগন্ত জোড়া উঁচু গাছের পাঁচিল।
সেই বাঘের কিছুটা দূরে এক কৃষক ট্র্যাক্টার চালিয়ে চাষ করছেন নিজের জমিতে।
এমনই দৃশ্যের দেখা মিলেছে উত্তর প্রদেশের পিলভিট এলাকায়। ৫২ সেকেন্ডের এই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে টুইটার সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায়। কয়েক লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন সেই ভিডিও। হয়েছে একের পর এক রিটুইট। মনে করা হচ্ছে, স্থানীয় কোন কৃষক এই ভিডিওটি করেছেন।
স্থানীয় ভাবে মনে করা হচ্ছে, উত্তর প্রদেশের দুধওয়া অভয়ারণ্য থেকে বাঘটি লোকালয়ে চলে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়েও দুধওয়া থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে বাঘ বেড়িয়ে পড়ার খবর মিলেছে।
এই ভিডিও সামনে আসার পরে মূলত তিন ধরনের মতামত উঠে আসছে। একাংশের নেটিজেনের বক্তব্য, এর থেকেই স্পষ্ট, বণ্যপ্রাণ এবং মানুষ সহজেই সহাবস্থান করতে পারে। শুধু প্রয়োজন পারস্পরিক সম্মান এবং বন্যপ্রাণকে উত্তক্ত না করার প্রবৃত্তি।
[ad}
অপর পক্ষের মতে, অভয়ারণ্যে বাঘের খাবারের পরিমাণ কমছে। তারফলেই সে বাধ্য হচ্ছে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দিতে। এখানে বন্যপ্রাণ এবং মানুষের সহাবস্থানের ‘রোম্যান্টিক’ তত্ত্ব টেনে আনা ঠিক নয়। বরং রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বনদপ্তরে কাঠগড়ায় তোলা উচিত।
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলিরও দাবি, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে যতটা দাবি করা হয়, বাস্তবে তার সিকিভাগও কাজ হয়না। খাতায় কলমে দেখানো হচ্ছে দেশে জঙ্গলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শতাংশে কারচুপি করার জন্য কৃষিজমির স্যাটেলাইট চিত্রকে জঙ্গল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অপরদিকে ঘন অরণ্য ধ্বংস করে খনি, রাস্তা, বাঁধের জলাধার ইত্যাদি নির্মাণ করা হচ্ছে। তারফলে সত্যিকারের জঙ্গলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। স্বাভাবিক নিয়মেই তারফলে খাবারে টান পড়ছে জঙ্গলের বাসিন্দাদের।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আরও একটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করছেন। তাঁদের বক্তব্য, দুধওয়ার মতো জঙ্গলে বাঘের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশেই বাঘের সংখ্যা গত ১০-১৫ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারফলে প্রায় সমস্ত জঙ্গলেই খাবারে টান পড়ছে। ‘বাড়তি’ বাঘগুলিকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। তারজন্য প্রয়োজন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সংখ্যা এবং পরিমাণ বৃদ্ধি করা। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে সেই কাজ করা হয়ে উঠছে না। এর পরিণাম হিসেবেই লোকালয়ে বন্যপ্রাণের আনাগোনা বাড়ছে। বাড়ছে বন্যপ্রাণের সঙ্গে মানুষের সংঘাতও।
Comments :0