Editorial

সেটিং তত্ত্বের স্বীকৃতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

বঙ্গ রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় আরএসএস’র কৌশল নিয়ে রীতিমতো ধন্ধ তৈরি হয়েছে রাজ্য আরএসএস’র একাংশের মধ্যে। তারা বুঝেই উঠতে পারছেন না মোহন ভাগবত এবং মোদী-শাহরা কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাস খেলে চলেছেন। যদি রাজ্যে বিজেপি তথা আরএসএস সত্যি সত্যিই ক্ষমতা দখল চায় তাহলে গুচ্ছ গুচ্ছ সুযোগ পেয়েও কেন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই গুরুতর প্রশ্নটি এখন শুধু আর রাজ্য বিজেপি-আরএসএস’র অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নেই, এটা এখন আমজনতার প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। সঙ্ঘ-বিজেপি নেতা-কর্মীরা সেটা প্রকাশ্যে বলতে না পারলেও আমজনতা কিন্তু সর্বত্র প্রকাশ্যেই বলছেন।
‘দিদিভাই তথা মোদী-মমতার মধ্যে সকলের অলক্ষ্যে যে একটা অলিখিত সেটিং চুক্তি আছে সেটা প্রথম থেকেই বলে আসছে বামপন্থীরা বিশেষ করে সিপিআই(এম)। গোড়ার দিকে কেউই এটা বিশ্বাস করত না বা কোনও গুরুত্বই দিত না। আজ অভিজ্ঞতায় মানুষ একটু একটু করে বুঝতে পারছেন এবং উপলব্ধি করতে পারছেন যে বিষয়টা মোটেই উড়িয়ে দেবার নয়। সেই সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নারদ স্টিং অপারেশন, শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি, আরজি কর পর্যন্ত চুরি, লুট, খুন-ধর্ষণের বহু ঘটনার তদন্তভার বর্তেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই, ইডি-সহ অন্যান্য সংস্থার উপর। চোখের সামনে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হওয়া সত্ত্বেও অজস্র প্রমাণ, সাক্ষ থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত একটি মামলারও তদন্ত শেষ করেনি মোদী-শাহ নিয়ন্ত্রিত তদন্ত সংস্থা। বেশিরভাগ ষেত্রেই তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। বহুদিন পর হঠাৎ করে তারা সক্রিয় হয়। আবার চলে যায় শীত ঘুমে। কোনও তদন্তই নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এগোয়নি। বরং অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের আড়াল করা, সাজাপ্রাপ্তি থেকে রেহাই দেওয়াই যেন তাদের লক্ষ্য হয়ে গেছে। যদি অপরাধীদের ধরা এবং উপযুক্ত সাজা দেওয়া লক্ষ্য হতো তাহলে বে‍‌শিরভাগ নেতা-মন্ত্রীদের জেল স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যেত। মোদী-শাহরা চান না তৃণমূল সরকারের পতন হোক। তাই তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করছেন।
কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল গঠনে প্রথম থেকে আরএসএস-মমতা সঙ্গী। আরএসএস’র সব ধরনের সাহায্য ছাড়া তৃণমূল গঠন সম্ভব হবে না এবং রাজ্যে ক্ষমতা দখলও সম্ভব হতো না। আর তৃণমূল সরকার যে এখনো টিকে আছে তার পেছনেও অবদান আছে আরএসএস তথা মোদী সরকারের। কিন্তু কেন তৃণমূলকে রক্ষা করছে বিজেপি? আসলে তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে বি‍‌শেষ কোনও পার্থক্য নেই। তাই দু’দলের নেতারাই নিত্য দলবদল করতে পারে। আজ যে তৃণমূল, কাল সে বিজেপি। আবার পরশু হয়ে যায় তৃণমূল। তৃণমূলের টিকেটে জিতে বিজেপি হয়ে যায়, আবার বিজেপি’র টিকিটে জিতে তৃণমূল হয়ে যায়। বাইরে লোক দেখানো কুস্তি হলেও আসলে কিন্তু দোস্তি। বিজেপি জানে তৃণমূলের নৈরাজ্য শাসনে চুরি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের লড়াই করছে বামপন্থীরা। তাই বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষমতায় ফেরা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু বিজেপি কোনও অবস্থাতেই বামপন্থীদের ক্ষমতায় ফিরতে দিতে চায় না। বামেরা ক্ষমতায় এলে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি কোণঠাসা হয়ে পড়বে। তাই তারা বোঝাপড়া করে একে অন্যের একমাত্র শত্রু সাজছে। অর্থাৎ রাজ্যে দেখাতে চাইছে হয় বিজেপি নয় তৃণমূল। তৃতীয় কেউ নেই। এই বোঝাপড়ার লক্ষ্য বামপন্থীদের পুনরুত্থান ঠেকানো। প্রধান এবং একমাত্র শত্রু বামপন্থীদের ঠেকাতে তারা তৃণমূলকেই সঙ্গে রাখছে। কিন্তু এই বোঝাপড়া হজম হয়নি রাজ্য আরএসএস-বিজেপি-র একাংশের। সেই একাংশেরই ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে আরএসএস-র মুখপাত্রর প্রবন্ধে। পাশাপাশি সেটিং তত্ত্বের স্বীকৃতিও মিলে গেছে। 

Comments :0

Login to leave a comment