কোনও না কোনোভাবে মোদী সরকারের যারা বিরোধিতা করে বা সমালোচনা করে তাদের থেকে বাছাই করে অনেকের উপর কড়া নজরদারি চালানোর বিরুদ্ধে দেশে তোলপাড় কম হয়নি। এতদ্সত্ত্বেও নজরদারিতে ভাটা পড়েনি। যথারীতি বিরোধী নেতা, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, অধ্যাপক, আইনজীবী প্রমুখদের বিরুদ্ধে নজরদারি চলছে। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এক বিশেষ প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে দিয়েছে অন্তত দু’জন বিখ্যাত সাংবাদিকের আইফোনে পেগাসাস স্পাইওয়ার দিয়ে নজরদারি চালানো হয়েছে। একজন ‘দ্য ওয়ার’ সংবাদ পোর্টালের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধার্থ বরদারাজন এবং ‘দ্য অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট’ (ওসিসিআরপি)-র দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক আনন্দ মঙ্গনাল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এই দুই সাংবাদিকের আইফোনে পেগাসাস স্পাইওয়ার-এর উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছে। ওসিসিআরপি’তে প্রকাশিতব্য একটি প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার জালিয়াতি নিয়ে আদানিদের মতামত জানতে চেয়ে সাংবাদিক আনন্দ মেল করেছিলেন ২৩ আগস্ট। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেগাসাস দিয়ে তার ফোন হ্যাক করা হয়। একইভাবে লক্ষণীয় দিল্লিতে এক নামকরা প্রকাশককে আটক করার প্রতিবাদে অংশ নেবার পরেই হ্যাক হয় বরদারাজনের ফোন।
২০১১ সালে পেগাসাস নিয়ে দেশ উত্তাল হয়েছিল এই অভিযোগে যে মোদী সরকার নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে গোপনে নজরদারি চালাচ্ছে প্রধানত সরকার বিরোধী ও সমালোচকদের উপর। বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, বিচারক, আইনজীবী কেউই বাদ পড়েনি এই সরকারি নজরদারি থেকে। তালিকায় ছিল রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরিও। ইজরায়েলের বেসরকারি সংস্থা এনএসও’র তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়ার ব্যবহার করা হয়েছে টার্গেট করা ব্যক্তিদের ফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে। এই গোপন নজরদারি ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী যে ব্যবহারকারীর অজান্তেই তার ফোন-ল্যাপটপ-কম্পিউটারে ঢুকে সব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এমনকি অত্যাধুনিক আইফোনের ক্যামেরাতেই নজরদারি চালাতে পারে। ইজরায়েল সরকারের অনুমতিক্রমে এনএসও কেবলমাত্র কোনও সরকারকেই পেগাসাস বিক্রি করে। কোনও বেসরকারি সংস্থা পেগাসাস কিনতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে ভারতে কয়েক শত ব্যক্তির ফোনে পেগাসাস নজরদারি ভারত সরকার ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। মোদী সরকার সরাসরি কখনও স্বীকার করেনি পেগাসাস কিনেছে এবং ব্যবহার করেছে। আবার অস্বীকারও করেনি। অথচ গত বছর নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওসিসিআরপি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারত সরকার ইজরায়েলি কোম্পানি এনএসও থেকে পেগাসাস কিনেছে। সরকার স্বীকার না করলে বাণিজ্যিক লেনদেনের তথ্য থেকে পরিষ্কার ভারত এবং এনএসও’র মধ্যে পেগাসাস সংক্রান্ত লেনদেন হয়েছে।
কয়েকমাস আগে আইফোন ব্যবহারকারীদের অনেকের কাছে নির্মাতা অ্যাপল সতর্ক বার্তা/মেল পাঠায় হ্যাক হবার আশঙ্কা জানিয়ে। পেগাসাস ছাড়া আইফোন হ্যাক কার্যত অসম্ভব। স্বাভাবিকভাবে ভারতে পেগাসাস সক্রিয় তা স্পষ্ট। ক্ষিপ্ত মোদী সরকার অ্যাপল কর্তাদের ডেকে প্রবল চাপ দেয় সতর্ক বার্তাকে মামুলি ব্যাপার বলে ঘোষণা করার। চাপে পড়ে অ্যাপল জানায় তারা ১৫০ দেশে তাদের গ্রাহকদের এই বার্তা পাঠিয়েছে। অবশ্য ভারত ছাড়া কোনও দেশের গ্রাহক সতর্কবার্তা পেয়েছে বলে জানায়নি। মোদী সরকার পেগাসাস কিনেছে এবং বিরোধীদের উপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে সেটা অস্বীকার করার আর কোনও সুযোগ আছে কি?
Comments :0