WATER CRISIS

জল পেতে এক কিমি হাঁটে মোল্লাপাড়া

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP BENGALI NEWS শিউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দারা এইভাবেই ড্রেনের উপর থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করেন।

বিশ্বজিৎ রায়, বারাকপুর

বাড়িতে কল আছে। তবু এক কিমি দূরে গিয়ে জল আনতে হয়। কারণ — বাড়ির কল থেকে জল পড়ে না। সরকারি খাতায় অবশ্য— জলের লাইন আছে।

 
রাস্তার ধারে একটি নলবাহিত কলে সুতোর মতো সরু হয়ে জল পড়ে। তবে সারাদিন নয়। সারাদিনে দু’ঘণ্টার মতো জল থাকে। এর মধ্যে গিয়ে জল ভরে আনতে হয়। ড্রেনের ধারে সেই কল। নলবাহিত কলের মুখটা একেবারে নিচু করে দিয়েছেন গ্রামের মানুষ। সেই কলের মুখে আবার একটা বড় পাইপ লাগিয়ে কোনমতে পানীয় জল নিতে হয়। 

রাজিয়া বিবি, রোশন আলি, কেরামত আলিদের নিত্যদিন জলযন্ত্রণায় ভুগে এইভাবেই জল সংগ্রহ করতে হয়। 


গ্রামের নাম মোল্লাপাড়া। শিউলি গ্রাম পঞ্চায়েত। বারাকপুর ২নং ব্লকের এই পঞ্চায়েতের মানুষ তীব্র জলকষ্টের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। মানুষ জলের দাবিতে পঞ্চায়েতে গেছেন। তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলেছেন। 

তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য আশার আলি মণ্ডলের বক্তব্য কী? তিনি বলেন, ‘‘একটা অপদার্থ পঞ্চায়েত প্রধান। এর কোনও যোগ্যতা নেই। এর থেকে একটা মূর্খ লোককে প্রধান করলে পঞ্চায়েত ভালো ভাবে চলতো। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে জলকষ্ট মিটবে। এখন মানুষ আমাদের ধরছে। আমরা উওর দিতে পারছি না।’’
গ্রামে টিউবওয়েল আছে। অধিকাংশ খারাপ হয়ে পড়ে আছে। 


‘‘যে সরকার মানুষকে খাবার জল দিতে পারে না, সেটা আবার কিসের উন্নয়ন?’’ বলছেন বিশ্বাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সঙ্গীতা বিশ্বাস। রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না। ভোরবেলা উঠে জল আনতে ছুটতে হয়। রান্নার জল, জামাকাপড় কাচার জন্য জল টেনে টেনে আনতে হয়। মহিলার কথায়, ‘‘রাস্তার তলা দিয়ে যে কলের পাইপ গেছে সেটা ফুটো করে জলের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু হয়নি।’’ 

এই পাড়ার বাসিন্দা শম্ভু ঘোষ, পাপিয়া ঘোষ, রিন্টু চক্রবর্তী, ফুলকুমারী রায়, ডলি বিশ্বাস একইভাবে জলকষ্টের তীব্র যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন। 


ঘিদাহ গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মল্লিকের অভিজ্ঞতা, ‘‘বামফ্রন্ট আমলে এই গ্রাম পঞ্চায়েতে নলবাহিত জল আসে। জলের জন্য দুটো রিজার্ভার হয়। তখন মানুষকে জলের লাইন নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন করতে হতো। সেইসময় পঞ্চায়েত থেকে ফেরুল দিয়ে জলের লাইন দেওয়া হয়। তৃণমূল আসার পর পঞ্চায়েতের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। মানুষ নিজের খুশিমতো পাইপ ফুটো করে জলের লাইন নিয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে কিছু বলছে না।’’ নতুন করে পঞ্চায়েত থেকে জলের রিজার্ভার তৈরি হয়নি। 


প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের শিউলি পঞ্চায়েতের পাশেই মোহনপুর পঞ্চায়েত। এটিও তৃণমূল পরিচালিত। এই পঞ্চায়েতের চককাঠালিয়া, বীরনগর, মোহনপুর গ্রামের একাংশ মানুষ একইভাবে জলকষ্টে ভুগছে। মোহনপুর পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়। সেই ব্যবস্থাটা ধরে রাখতে পারেনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত। 


বারাকপুর ১নং ব্লকের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলেও একই ছবি। শিবদাসপুর, মাঝিপাড়া, পলাশী, ব্রক্ষ্মচারী কলোনী এইসব জায়গায় মানুষ তীব্র জলকষ্টে ভুগছেন। এই এলাকার জন্য গঙ্গার জল পরিশোধন করে মানুষের কাছে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে বামফ্রন্টের সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ধরমপুর হস্টেলের ভিতরে জল পরিশোধনের জন্য যন্ত্রপাতি বসানো হয়। ১২ কিমির বেশি পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়।

মাঝিপাড়া-পলাশী গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনটি জলের রিজার্ভার হয়। শিবদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে জলের রিজার্ভার তৈরি হয়। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সব কাজ হয়। কিন্তু তৃণমূলের পঞ্চায়েত এই প্রকল্পের কাজ শেষ করেনি। পাইপ বারো বছরে নষ্ট হয়ে গেছে। জলের রিজার্ভার ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। পানপুর-কেউটিয়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও সেই তীব্র জলকষ্টের ছবি। 


কিন্তু চুরির অভিযোগ এই সব এলাকাতেই প্রবল। শিউলি পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে সত্তর লাখ টাকা আর্থিক তছরুপের অভিযোগ এনে মামলা করেছে তৃণমূলেরই ৩জন পঞ্চায়েতের সদস্য। অন্যদিকে পঞ্চায়েত থেকে চোর তাড়াতে মানুষ এককাট্টা হচ্ছে। পঞ্চায়েতে থেকে মানুষের উন্নয়ন হয়নি। মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূলের দলবল— এই অভিজ্ঞতায় সোচ্চার হচ্ছেন মানুষ।

Comments :0

Login to leave a comment