MD Salim

ফরাক্কায় বিশাল সমাবেশে সেলিম

রাজ্য

গঙ্গা ভাঙনে যখন মালদহ-মুর্শিদাবাদের একাংশের মানুষ গৃহহীন হচ্ছে তখনও এই সমস্যা নিয়ে সমান উদাসীন কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুই সরকার। ভাঙন থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে লড়াই করতে হবে দুই সরকারের বিরুদ্ধেই, সেই লড়াই হবে লাল ঝান্ডা নিয়ে। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় দুই জেলার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বিশাল সমাবেশে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বৃষ্টিভেজা মিছিল এবং সমাবেশে মানুষের কণ্ঠেও শোনা গিয়েছে সেই লড়াইয়ের স্লোগান। 
ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর থেকে মালদহে গঙ্গা নদীর বাঁ তীরে এবং মুর্শিদাবাদে ডান তীরে ব্যাপক ভাঙনে জমি চলে যাচ্ছে নদীর গ্রাসে। ১৯৯৬ সালে দেবগৌড়া সরকার তৈরি হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার এই ভাঙনকে জাতীয় বিপর্যয় মেনে নিয়ে ৯২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল ভাঙন রোধ ও পুনর্বাসনে। কিন্তু সেই সরকার চলে যাওয়ার পরে কাজ হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার ভাঙন নিয়ে উদাসীন, মোদী সরকার নমামি গঙ্গে বললেও রাজ্যকে টাকা দিচ্ছে না, রাজ্য যেটুকু টাকা বরাদ্দ করছে তা ভাঙন রোধের বদলে লুট হয়ে যাচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পগুলিও জলে চলে গিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভাঙন রোধ ও পুনর্বাসনের দাবিতে এদিন মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্টের যৌথ আহ্বানে ফরাক্কায় সমাবেশ করা হয়, ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।  
সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, গঙ্গা নদী বাঁচাতে, ভাঙন রুখতে সবাইকে একজোট হতে হবে। ফরাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে ডেপুটেশনের পর দরকার হলে কলকাতায় যেতে হবে, দিল্লি যেতে হবে। আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়তে হবে গঙ্গা নদীকে রক্ষা করার জন্য। আমাদের বাঁচার লড়াইয়ের সঙ্গে নদী বাঁচানোর লড়াই একসঙ্গে লড়তে হবে।
তিনি বলেছেন, রাজ্যে স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছেন না। কম মজুরিতে কাজ করতে হচ্ছে। মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দুই সরকার। এই যুদ্ধ আমরাও স্বীকার করছি। তার জন্য লড়তে হলে সবাইকে এককাট্টা হতে হবে। যাঁর ঘর ভেসেছে, যাঁর ঘর এখনও ভাসেনি, তাঁদের সবাইকে এককাট্টা হতে হবে। সব খেটে খাওয়া মানুষকে লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে এককাট্টা করতে পারলে তবে নদী এবং জীবন বাঁচানোর লড়াইতে সাফল্য আসবে।
এদিন নিউ ফরাক্কা মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রোজেক্ট অবধি হয় মিছিল হয়। তারপর সেখানেই বিক্ষোভ সভা হয়। সভায় সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, সিপিআই(এম)’র মালদহ জেলা সম্পাদক কৌশিক মিশ্র, জমিল ফিরদৌস, সিপিআই নেতা বাবর সরকার, আরএসপি নেতা নওফেল মহম্মদ সফিউল্লাহ, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা বিভাস চক্রবর্তী।
নেতৃবৃন্দ ভাঙন নিয়ে দুই সরকারের ভুল নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সমাবেশ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে জাতীয় নদী গঙ্গার ভাঙনকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে হবে। ভাঙনে যাঁদের জমি, বাড়ি বিলীন হয়েছে তাঁদের ল্যান্ড লুজার হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে, স্থায়ী ভাঙন রোধ ও পুনর্বাসনে  কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে যৌথ দায়িত্ব নিতে হবে, ভাঙনে ভিটে-মাটি হারানো মানুষদের বিকল্প জমি ও আবাস দিতে হবে, ফরাক্কা  ব্যারেজ কর্তৃপক্ষকে ভাঙন রোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, বর্ষায় টাকা জলে না ফেলে শুখা মরশুমে ভাঙন রোধের কাজ চাই, ভাঙন রোধে বালির বস্তা ব্যবহার করা চলবে না, চর জমির সিকস্তি-পয়োস্তি আইন বাতিল করতে হবে, কৃষকদের জমির মালিকানা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। ফরাক্কা ব্যারেজ প্রোজেক্টের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে এই দাবিগুলি সমেত স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়েছে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে। 
সমাবেশে সেলিম বলেছেন, কেন্দ্রের সরকার বলেছিল ব্যারেজের আপ ডাউনে ৪০ কিলোমিটার নদী, নদীর পাড় দেখভালের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। মোদী সরকার নমানি গঙ্গে নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য, নদীকে রক্ষার জন্য টাকা দিয়ে মানুষের ভক্তি আর বিশ্বাসকে নিয়ে কারবার করার চেষ্টা করছে। ২২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে। গঙ্গায় ২ মিটার নাব্যতা থাকার কথা থাকলেও তা হয়নি। গঙ্গার নাব্যতা কমছে, গভীরতা কমছে, জল ধারণ ক্ষমতা কমছে। প্রতিদিন তাই ভাঙন হচ্ছে। 
তিনি বলেছেন, নদীর পাড় রক্ষায় ব্যবস্থা নিলে, প্রয়োজনীয় গাছ লাগালে নদীক্ষয় হতো না। প্রতি বছর উর্বর জমি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব নিয়ে নদী রক্ষা করেনি, পাড় বাঁচাতে গাছ লাগানো হয়নি। মানিকচকে ভুতনির চরে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ভাঙনের ফলে। জমি, বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ কারও কোন হুঁশ নেই। সরকারের কাজ ছিল গৃহহীন মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়া, তার বদলে সরকার সিএএ, এনআরসি, এসআইআর’র কথা বলছে। বামপন্থীরা আগেই বলেছিল, ফরাক্কা ব্যারেজ যাতে নতুন বিপদ না নিয়ে আসে সেটা দেখতে হবে। এখন সেই নিরাপত্তা আদায় করতে হলে লাল ঝান্ডা হাতেই লড়াই করতে হবে।
এদিন সকাল থেকেই ফরাক্কায় একজোট হন দুই জেলার মানুষ। সম্মিলিত মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে, ভাঙন রোখার নাম করে নদীতে বালির বস্তা ফেলে টাকা লুট চলবে না। বামফ্রন্ট সরকার যেভাবে খাস জমিতে পাট্টা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিল সেই উদ্যোগ ফের চালু করতে হবে। ফরাক্কার ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে ডেপুটেশন দিতে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিআই(এম)’র প্রাক্তন সাংসদ বদরুদ্দোজা খান, মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি সচ্চিদানন্দ কান্ডারি, মালদহ জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক কৌশিক মিশ্র, আরএসপি নেতা সর্বানন্দ পাণ্ডে, সিপিআই নেতা বাবর সরকার ও ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা গোপাল সিকদার। 
....................................................
ক্যাপশন: বৃহস্পতিবার ফরাক্কায় মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বিশাল সমাবেশে বলছেন মহম্মদ সেলিম।

Comments :0

Login to leave a comment