CPI-M STATE CONFERENCE

ফেরাতে হবে কাজের ছন্দ, অপেক্ষায় মহাসংগ্রাম: মিশ্র

রাজ্য

 মহাসংগ্রাম অপেক্ষা করছে, ঐক্যবদ্ধ পথেই আমাদের ফেরাতে হবে আন্দোলনের ছন্দ। বলেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। 
২৭তম রাজ্য সম্মেলনকে সোমবার অভিনন্দন জানিয়ে সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখেন সূর্য মিশ্র। রাজ্য সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সম্পাদকীয় রিপোর্টের ওপর আলোচনার শেষ পর্বে তৃতীয় দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সূর্য মিশ্র বলেছেন, ‘‘এই একটা সময়, যে সময়ের মোকাবিলা করছি, তখন অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটবে। এই একটা সময়, যখন অনেক কিছু ঘটতে পারে। অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। কিন্তু এই সময় শুধু সমস্যা ডেকে আনে না। এই সময় শুধুই আক্রমণ ডেকে আনে না। এই সময় প্রতিরোধেরও সময়। দুনিয়া বদলানোর দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার সময় এটাই। তাই এক মহাসংগ্রাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের দরকার আত্মবিশ্বাস। আর সেই আত্মবিশ্বাস কোনও ভিত্তি ছাড়া হয় না।’’ 
কীভাবে আসতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস? তার ভিত্তিই বা কী? 
মতাদর্শ অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অন্যতম ভিত্তি। সূর্য মিশ্র বলেছেন, ‘‘গত পার্টি কংগ্রেসে আমাদের রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানে বলা হয়েছিল, বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন করো, পরাস্ত করো। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এটা প্রাসঙ্গিক। এই শক্তি একটা বড় বিপদ। অনেকে মনে করেন, তৃণমূল এবং বিজেপি সমান। বিশ্বজুড়ে নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থান, মোদী সরকারের অবস্থান আমরা চোখের সামনে দেখছি। সেখানে একটা রাজ্যের একটা আঞ্চলিক দলকে এক করে দেখা ঠিক নয়।’’ 
মতাদর্শগত বোঝাপড়া স্পষ্ট করে সংগ্রামের পথ খোঁজার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদের কাছে পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য বলেছেন, ‘‘আমাদের কাজের মধ্যে ছন্দ চাই। হারমোনিয়ামের পাঁচটা রিড একসঙ্গে টিপে ধরলে তাতে ভ্যাঁ করে আওয়াজ বের হয়, তাতে সুর, ছন্দ কিছুই থাকে না। ছন্দ আমাদের আয়ত্ত করতে হবে। সুর উঠবে, ঝঙ্কার উঠবে, রণধ্বনি উঠবে। মহাসংগ্রাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। 
সূর্য মিশ্র বলেছেন, ‘‘আক্রমণ এখন বহুমুখী। বহুমুখী আক্রমণ হলে তার মোকাবিলা করতে হবে সমস্ত ফ্রন্টেই। বিশেষ করে অগ্রাধিকার দিতে হবে আশু আদায়যোগ্য দাবি আদায়ের লড়াইতে। অনেকগুলি দাবি থাকতে পারে। কিন্তু তারমধ্যে কোন দাবি তীব্র তা চিহ্নিত করতে হবে। বেশিরভাগ মানুষকে যে দাবি আদায়ের জন্য এক জায়গায় সমবেত করা যায়, যে দাবিটা লড়াই করে আদায় করা যায়, সেই দাবি আদায়ের সংগ্রামকেই তীব্র করতে হবে।’’ তার মানে এই নয় যে মৌলিক দাবির লড়াই থেকে কমিউনিস্টদের সরে থাকতে হবে। প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে পার্টিনেতা বলেছেন, ‘‘বহু, অসংখ্য আশু আদায়যোগ্য দাবির লড়াই করার মধ্যে দিয়ে মৌলিক দাবির লড়াই অগ্রসর হওয়া সম্ভব।’’
কীভাবে জনগণের কাছে এই মুহূর্তে আশু আদায়যোগ্য দাবি চিহ্নিত করার পথ কী? 
বুথের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে পার্টিনেতার কথায়। বুথ মানেই যে শুধু নির্বাচন নয় সেই ধারণার কথাকে মাথায় রেখে প্রতিনিধিদের কাছে সূর্য মিশ্র বলেন, ‘‘বুথ মানে কী? অনেকগুলি গ্রাম থাকতে পারে। সেই গ্রামে অনেকগুলি পাড়া থাকতে পারে। গ্রামে তো হিন্দু বাড়ি ও মুসলমান বাড়ি পাশাপাশি থাকে না। আদিবাসীদের পাড়া একটু দূরে। তফসিলি জাতিভুক্তদের পাড়া থাকে গ্রামের শেষ সীমানায়। গ্রামে ঢোকার সময় পাকা রাস্তার বাড়ির সামনেই থেমে গেলে চলবে না। গ্রামের ভিতরের রাস্তায় দূরতম স্থানে ওই মানুষজন থাকেন। আশু আদায়যোগ্য দাবি কী, সেটা যদি বুঝতে হয় তাহলে গ্রামের ভিতরে ওই দূরতম ঘরে ঢুকতে হবে।’’
আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশের আহ্বান করেছে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর ও বস্তিবাসী সংগঠন। শ্রেণি সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগে এই ধরনের সমাবেশ কর্মসূচি এরআগে অতীতে হয়নি। সমন্বিত শ্রেণি সংগঠনের ডাকে বিগ্রেড সমাবেশের প্রস্তুতি পর্ব নিয়ে কীভাবে এগনো যায় তার দিশা দিয়েছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য।
প্রতিনিধিদের কাছে সূর্য মিশ্র জানিয়েছেন, ‘‘ব্রিগেড করলেই হবে না। ব্রিগেড ভরলো। কিন্তু পাড়ায় কিছু নেই। গ্রামে কিছু নেই। বস্তিতে কিছু নেই। ব্রিগেড ভরিয়ে কী করবেন? নিজের এলাকায় তৈরি করতে হবে সংগ্রামের ব্রিগেড। তারজন্য এখন থেকেই জোরদার করতে আশু আদায়যোগ্য দাবির লড়াই। ২০ এপ্রিলের আগে যদি সেই লড়াই থেকে দাবি আদায় করতে পারি, তাহলেই লাল ঝান্ডা পতপত করে জয়ের পতাকা নিয়ে ব্রিগেড ভর্তি হয়ে যাবে।’’
এদিনই প্রতিনিধিদের আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার ডানকুনি খেলার মাঠে আয়োজিত প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কো অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত, মহম্মদ সেলিম, দেবলীনা হেমব্রম ও মীনাক্ষী মুখার্জি। প্রকাশ্য সমাবেশ যে ঐতিহাসিক জন জমায়েতে পূর্ণ হতে চলেছে এদিন তা জানিয়ে দিয়েছেন পার্টির হুগলী জেলা কমিটির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ।
 

Comments :0

Login to leave a comment