Gyanvapi Mosque

জ্ঞানবাপী মসজিদের পুজোর অনুমতি দাবি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের

জাতীয়

এএসআই রিপোর্ট দেখিয়ে জ্ঞানবাপী মসজিদ ঘিরে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে সক্রিয় হলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অলোক কুমার দাবি করেছেন মসজিদের অজুখানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য খুলে দেওয়ার। 
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি এএসআই রিপোর্টে মন্দিরের ওপরে জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মানের সূত্রে রয়েছে। গোটা বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। জ্ঞানবাপী মসজিদের পুজো করার অনুমতি চেয়ে আদালতে যায় হিন্দুত্ববাদীরা। মসজিদের পুজো করার অনুমতি চেয়ে আদালতে মামলাও হয়। সেই মামলায় এলাহাবাদ হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় মসজিদের প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার। দীর্ঘ টাল বাহানার পর সেই রিপোর্ট আদালতে জমা পড়েছে। কিন্তু রিপোর্টে এএসআইয়ের পক্ষ থেকে কি উল্লেখ করা হয়েছে তা এখনও সামনে আসেনি। 
এই পরিস্থিতিতে রাম মন্দির উদ্বোধনের পর নতুন করে জ্ঞানবাপী নিয়ে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি ছড়াতে মাঠে নেমেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অলোক কুমার এদিন বলেছেন, ‘‘এএসআই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে দুটি দাবি করা হচ্ছে। প্রথম, আদালতের অনুমতি নিয়ে অজুখানায় পুজো শুরু করা হোক। দ্বিতীয় দাবি মসজিদ অন্যত্র স্থানান্তরিত করে জমি হিন্দু পক্ষকে দিয়ে দেওয়া হোক।’’
১৯৯১ সালের উপাসনা স্থল আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের আগে যেই ধর্মীয় স্থলের যা চরিত্র তাকেই অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। রাম মন্দির মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মানের রায় দেওয়া হলেও ১৯৯১ সালের উপাসনা স্থল আইন অপরিবর্তীত থাকছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সেই কথা মানতে নারাজ।  
রবিবার মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সংবিধানের পিছনে রাম রাজ্যের ধারনা কাজ করেছে। সমাজের সমস্ত অংশকে নিয়ে চলার এই ধারনা রাম রাজ্যে রয়েছে, সেটি সংবিধানে সংযুক্ত হয়েছে।’’ 
ভারতের সংবিধান সভার বিতর্কে কেউ রাম রাজ্যের প্রসঙ্গ তুলে অনুচ্ছেদ রাখার বা বাতিল করার কথা বলেছেন এমন কোন উদাহরন নেই। অপর দিকে প্রধানমন্ত্রী মুখে সবাইকে নিয়ে চলার কথা বললেও মথুরা এবং কাশি নিয়ে নতুন করে মন্দির বনাম মসজিদ বিবাদ তুলতে চাইছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। 
শনিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে পুনরায় প্রমাণ হয়েছে, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ একটি বিশাল হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছে। অতএব ওই কাঠামোকে হিন্দু মন্দির ঘোষণা করে তা হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন আরও এক কদম এগিয়ে বলেছেন, আর কোনও সমঝোতা হবে না। এর একটাই সমাধান, মুসলিমরা জ্ঞানবাপী মসজিদ খালি করে দিক। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, জ্ঞানবাপী শীঘ্রই আমাদের হবে। 
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং মথুরার কৃষ্ণ মন্দির ভেঙে সেখানে আওরঙ্গজেব মসজিদ বানিয়েছিলেন, এমনটাই বহুলভাবে প্রচলিত। কেন আওরঙ্গজেব মন্দির ভেঙেছিলেন, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের নানান ব্যাখ্যা আছে। একইভাবে অজস্র বৌদ্ধ মঠ-বিহার, জৈন মন্দির ভেঙেও হিন্দু মন্দির তৈরি হয়েছে। ফলে প্রশ্ন আছেই, এইসব হিন্দু মন্দিরগুলিতেও সমীক্ষা হবে কি না, অথবা তা বৌদ্ধ বা জৈনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে কি না।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি অজুখানায় যেই পাথর আছে তা শিব লিঙ্গ। ওজুখানায় সমীক্ষার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়ে এলাকা বন্ধ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন জানিয়েছেন, ওজুখানার সমীক্ষা করার জন্যেও তারা সুপ্রিম কোর্টে শীঘ্রই আবেদন জানানো হবে।

Comments :0

Login to leave a comment