Weaving Artist Suicide

তাঁতশিল্পীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার পূর্বস্থলীতে

রাজ্য জেলা

সংসার চালাতে ভরসা ছিল তাঁতের কাজ। তবে বাজারে শাড়ির চাহিদা নেই। অভাবের গ্রাস ক্রমশ আগ্রাসী হচ্ছিল। শেষমেশ আত্মহত্যার পথই বেছে নিলেন ৫৩ বছরের তাঁত শিল্পী, দাবি পরিবারের। মৃতের নাম দুর্যোধন প্রামানিক। বাড়ি পূর্বস্থলী থানার মেড়তলা গ্রামে। বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন বলে পরিবারের তরফে জানা গেছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে শিল্পী দুর্যোধন প্রামানিক একসময় বাড়িতে দশটি তাঁত বসিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। পরে আরো অপরের বাড়িতে কুড়িটা তাঁতে সুতো সরবরাহ করে তাঁত কাপড়ের ব্যবসা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে তাঁত শিল্পের ভয়ংকর পরিস্থিতি শুরু হয়। বছরখানেক হলো তিনি তাঁতের ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে বন্ধুদের আর্থিক সহায়তায় একটি টোটো কিনে চালাতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁর মতো অনেকেই কাজ হারিয়ে টোটো চালাতে শুরু করেছেন। ফলে চরম প্রতিযোগিতা শুরু হলে দুর্যোধন প্রামাণিকের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে ওঠে। একটিমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি আরও বিপাকে পড়ে যান। ফলে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছিলেন। হতাশার থেকেই তিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে এদিন মত প্রকাশ কররেছেন প্রতিবেশী প্রবীর প্রামানিক, বাপি ভাগী, অক্ষয় প্রামাণিকের মতো প্রতিবেশীরা। এদিন কালনা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়। 
ওই এলাকায় এটাই তাঁত শিল্পীদের আত্মহত্যার ঘটনা প্রথম নয়।  ইতিপূর্বে কালনা থানার ধাত্রী গ্রামের যুব তাঁতশিল্পী দয়াল বসাক ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আত্মঘাতী হন। এই ধাত্রীগ্রামেই ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ১১ তারিখে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন সমিরন বসাক নামে আরো এক তাঁত ব্যবসায়ী। ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৪ তারিখে ছেলেদের পরিত্যাক্ত তাঁতঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন সরস্বতী বসাক নামের এক বৃদ্ধা। তাঁর বাড়ি নসরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাটশিমলা গ্রামে। এই হাটশিমলা গ্রামেই ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি রাত্রিবেলা নিজের তাঁত ঘরে গলায় দরি দিয়ে আত্মঘাতী হন নিমাই বসাক নামে আরো এক তাঁত শিল্পী।
উল্লেখ্য; কালনা মহকুমায় ষাট হাজার মানুষ এই হস্তচালিত শিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্ত এই শিল্পে মন্দা নেমে আসায় বহু তাঁতশিল্পী কাজ হারান। বিরাট প্রভাব পরে কালনা মহকুমার কালনা শহর, ধাত্রীগ্রাম, কাদিপাড়া, পূর্বস্থলীর নশরতপুর, সমুদ্রগর, মাজিদা, মেড়তলা, শ্রীরামপুরের মতো তাঁতশিল্প নিবিড় এলাকা গুলিতে। সাধারণত কালনায় ঢাকাই জামদানি শাড়ি বেশি উৎপন্ন হতো। আর এই শাড়ি বেশির ভাগই বুনতেন-- উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পরিযায়ী তাঁত শ্রমিকরা। কিন্তু প্রথম লকডাউনে তারা ফিরে যাওয়ার পর আর এদিকে কেউ পা বাড়াননি। অন্যদিকে জীবন জীবিকার টানে এখানকার তাঁত মালিকরা নিজেরাই শ্রমিক হয়ে গিয়ে তাঁতে বসে যান। কিন্তু কাপড় হাটগুলোতে তাঁত কাপড়ের খরিদ্দার না থাকায় ১২শো টাকা মূল্যের কাপড়ের দাম নেমে আসে মাত্র সাড়ে চারশো টাকায়। ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হন তাঁত শিল্পীরা। সেই ক্ষতি সমাল না দিতে পেরে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এদিন শ্রমিক নেতা প্রবীর মজুমদার বলেন, আত্মহত্যা সমাধানের পথ হতে পারে না। সবাইকে সংঘটিত হয়ে এই সমস্যার সমাধানে নামতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment