মনুসংহিতার ‘অবদান’-র কথা এবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পঞ্চায়েত সংক্রান্ত নথিতে। তবে দেশে হিন্দুত্ববাদীদের প্রিয়তম, ‘রামলালার ঘর’ উত্তর প্রদেশ পঞ্চায়েতে মহিলাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে পিছিয়ে— তাও স্বীকার করে নিয়েছে আরবিআই।
বুধবার দেশের পঞ্চায়েতগুলির আর্থিক সহ নানা বিষয়ে একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। শিরোনাম— ‘ফিনান্সেস অব পঞ্চায়েত রাজ ইনস্টিটিউশন।’ সেই নথির শুরুতেই আরবিআই লিখছে যে, বৈদিক যুগ থেকে ইন্ডিয়ায় তৃণমূল সত্রে প্রশাসনিক ইউনিট ছিল। পঞ্চায়েতের প্রসঙ্গ পাওয়া যায় মনুস্মৃতি, অর্থশাস্ত্র এবং মহাভারতের মত প্রাচীন নথিতে।’ এই ক্ষেত্রে মনুস্মৃতিতে পঞ্চায়েতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করার সূত্র হিসাবে শুধুমাত্র ‘জার্নাল অব এডুকেশন অ্যান্ড সোশাল পলিসি’ ম্যাগাজিনে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ২০১৪-র জুনে প্রকাশিত ড. পি আনন্থের একটি প্রবন্ধর উল্লেখ করা হয়েছে। আনন্থ তখন তামিলনাডুর মাদুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সেই প্রবন্ধে কিংবা আরবিআই’র এদিন প্রকাশিত নথিতে দেশে প্রথম ত্রিস্তর পঞ্চায়েত পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠেছিল, এবং সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৭— এমন তথ্যগুলির উল্লেখ নেই। আরবিআই এই নথির বক্তব্য,‘পঞ্চায়েত তৃণমূল স্তরের সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র। স্থানীয় উন্নয়নের মাধ্যম।’ যদিও গণতন্ত্র বিকশিত করার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত যে এক শক্তিশালী মাধ্যম তা এই নথিতে বলা নেই। যদিও আরবিআই স্বীকার করছে যে, পঞ্চায়েত ‘ক্ষয়প্রাপ্ত’ হতে থাকে রাজাদের আমলে তার বিকেন্দ্রীকরণের নীতি মেনে না চলার কারণে।
তবু মনুস্মৃতি উল্লেখ করে রিপোর্ট শুরু করলেও আরবিআই দেখিয়েছে কিভাবে দেশে পঞ্চায়েত পরিচালনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। যে সময়ে তা সম্ভব হয়েছে, সেই সময়ে বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় ছিল না। আরবিআই জানাচ্ছে, দেশের মোট পঞ্চায়েত আসনের প্রায় ৪৫.৬%-এ আছেন মহিলারা। অনেক রাজ্যেই মহিলারা আছেন সেই রাজ্যের পঞ্চায়েতের মোট আসনের অর্ধেকের বেশিতে। সর্বাধিক আছেন উত্তরাখণ্ডে— ৫৬%। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি বাদ দিলে দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম মহিলা আছেন উত্তর প্রদেশে— ৩৩.৩%।
সমাজে নারীদের পিছনে রাখার দর্শন ধারণ করে মনুসংহিতা। তা হিন্দুত্ববাদীরা মেনে চলার দাবি করেন জোরালোভাবে। দেশে হিন্দুত্ববাদের কেন্দ্র এখন উত্তর প্রদেশ। সদ্য রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সেই রাজ্য থেকে সারা দেশে প্রবল হিন্দুত্বের প্রচার হয়েছে। সেখানেই পঞ্চায়েতে মহিলাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে কম। আরবিআই তাই জানাচ্ছে। তবে দেশে পঞ্চায়েতে মহিলাদের অংশগ্রহণের হারে পশ্চিমবঙ্গের থেকে এগিয়ে আছে অনেক রাজ্যই। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণে পশ্চিমবঙ্গ ছিল পথপ্রদর্শকদের অন্যতম। বামফ্রন্ট সরকার ৩৩% আসন সংরক্ষণ করেছিল মহিলাদের জন্য পঞ্চায়েতে।
পঞ্চায়েতে নির্বাচিত মহিলাদের ভূমিকা উল্লেখ করতে গিয়ে ইতিবাচক অনেক উদাহরণ দিয়েছে আরবিআই। তবে তাদের ধারণায় নির্বাচিত মহিলাদের ভূমিকায় স্থানীয় মহিলাদের দিকে অনেক লক্ষ্য রেখেছেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচিত মহিলারা অ্যাডাল্ট এডুকেশন সেন্টারে রাস্তা এবং জলের ব্যবস্থা করেছে— এটাই চোখে পড়েছে আরবিআই। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি কাজ পঞ্চায়েতে মহিলারা করেছেন পশ্চিমবঙ্গে— তার উল্লেখ নেই এই রিপোর্টে।
রিপোর্টে আরবিআই জানিয়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২৯% পিছিয়ে আছে দেশ। যদিও এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পঞ্চদশ অর্থ কমিশন ৭০হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যার মধ্যে ৪৪ হাজার কোটি পেয়েছে পঞ্চায়েতগুলি। তবু এই ক্ষেত্রে গ্রামোন্নয়ন বেশ পিছিয়ে আছে বলে আরবিআই মনে করছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে এই ঘাটতি ৫৮%। সর্বাধিক ঝাড়খণ্ডে— ৭৪%। উত্তর প্রদেশে তা ৫০%। বিহারে এই ঘাটতি ৪৭%। মধ্য প্রদেশে ৪৬%। আরবিআই’র নথি বলছে এই ক্ষেত্রে ঘাটতির বেশিরভাগ প্রধানত, মধ্য, পূর্ব, এবং উত্তর ভারতের একাংশে।
RBI PANCHAYAT
রামলালার রাজ্যে মহিলারা সবচেয়ে কম পঞ্চায়েতে
×
Comments :0