রাতভর ঘেরাও ‘স্বৈরাচারী’ অধিকর্তা
সদ্য নিযুক্ত অধিকর্তার একবগ্গা সিদ্ধান্তে নতুন বছরের প্রথম দিনেই কর্মহীন হয়ে গেলেন যাদবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’র (আইআইসিবি) ৯১ কর্মচারী। এই কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তার স্বৈরাচারী কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে সিএসআইআর’র অন্তর্ভুক্ত আইআইসিবি ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে কর্মহীন কর্মচারীদের আন্দোলন। কর্মহীন কর্মচারীরা এদিন ঘেরাও করে রাখেন আইআইসিবি’র অধিকর্তা অধ্যাপক বিভা ট্যান্ডনকে। রাতের দিকে ঘুরপথে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীদের চাপে তাঁকে সেখানেই আটকে থাকতে হয়েছে। আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন বিজ্ঞানী, গবেষকরাও। রাতভর ঘেরাওয়ে তাঁদের মধ্যেও অনেকেই হাজির ছিলেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনে দিল্লি থেকে মাস চারেক আগে যাদবপুরের আইআইসিবি’তে অধিকর্তা হয়ে এসেছেন দিল্লির জেএনইউ’র ওই অধ্যাপিকা। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আরএসএস ঘনিষ্ঠ এই অধ্যাপিকাকে ব্যবহার করে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বারেবারে দমানোর চেষ্টা চালিয়েছে। সেখান থেকে আইআইসিবি’তে এসেই তিনি ফের স্বৈরাচারী শাসন শুরু করেছেন। আর তা করতে গিয়ে বছরের প্রথম দিনেই প্রবল প্রতিরোধের মধ্যে পড়ে গেলেন অধ্যাপক ট্যান্ডন।
কর্মহীন কর্মচারীদের অভিযোগ, আইআইসিবি’তে আসার পর থেকেই তিনি এখানকার কর্মী ও কর্মচারীদের উপর নানাভাবে অত্যাচার শুরু করেছেন। আর বছর শেষে তিনি কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে নামলেন। কমপক্ষে তিরিশ বছর ধরে কর্মরত থাকলেও কেন্দ্রীয় এই সংস্থায় অনেক কর্মীই চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। আর সেইজন্যই তাঁদের চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। সেই চুক্তিই প্রতিবছর পুনর্নবীকরণ করা হয়। আর এখানেই বাদ সেধেছেন বিভা ট্যান্ডন।
কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণা সংস্থা হলেও আইআইসিবি’তে কর্মরত ওই সব কর্মীরা বেশি পারিশ্রমিক পান না। রাত-দিন পরিষেবা দেওয়ার যে মাসোহারা তাঁরা পান তা দিয়ে এই দুর্মূল্যের বাজারে সংসার নিয়ে গুজরান করা কঠিন। তাও প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে অনেকে কাজ করেই চলেছেন। এসব জানা সত্ত্বেও অধিকর্তা বিভা ট্যান্ডন নিজের পরিচিত দিল্লির অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ সংস্থা থেকে লোক নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি, বিহার-ঝাড়খণ্ড-উত্তর প্রদেশ থেকে নিজের পছন্দের হিন্দিভাষী কর্মী ডেকে পাঠাচ্ছেন।
বছরের প্রথম দিনেই এদিন অনেক বহিরাগত সংস্থায় ঠিকাকর্মী হিসাবে কাজ করতেও চলে এসেছিলেন। কিন্তু সংস্থার ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ সমাবেশ চলতে থাকায় তাঁরা আর কাজে যোগ দিতে পারেননি। এদিন বিক্ষোভরত কর্মীরা জানাচ্ছেন, উপায় থাকা সত্ত্বেও নতুন অধিকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে অব্যবস্থা তৈরি করেছেন। আর তার জেরে বছরের প্রথম দিনেই পথ বসতে হলো একজন মানুষকে। কর্মীরা জানাচ্ছেন, অধিকর্তার মূখ্য উদ্দেশ্য আইআইসিবি’তে কাজ করতে থাকা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের সরিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতের বাহিনীকে কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত করা। বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুগত্যকে প্রশ্রয় দিতেই এই প্রচেষ্টা। আইআইসিবি’তে কর্মরত ১৫০ জন কর্মী-কর্মচারীর মধ্যে এযাত্রায় ৯১ জনকে ছাঁটাইয়ের কথা বলা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক সকল কর্মীদের জন্যই এদিন সকাল থেকে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ আন্দোলন।
অধিকর্তার অনাচারের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে লড়াই চালাবেন ভুক্তভোগী কর্মচারীরা। আন্দোলনকারী এদিন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, ‘‘ডিরেক্টর বুঝে নিন, পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক শ্রেণির উপর আঘাত এলে সেই শ্রমিক শ্রেণি ওঁর মতো ডিরেক্টরকে এখান থেকে দূরে হটিয়ে দেবে।’’ বিক্ষোভের পাশাপাশি কর্মচারীরা দিনভর ঘেরাও করে রাখেন অধিকর্তাকে। ছাটাই কর্মীদের সাফ কথা, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি না পাওয়া যাচ্ছে যে, যত জনের চাকরি চলে গিয়েছে তাদের প্রত্যেককে কাজে পুনরায় বহাল করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওনার ঘরের সামনে ঘেরাও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া হবে।’’
জানা যাচ্ছে, ১৫০ জনের মধ্যে ৯১ জনের চাকরি গেছে। বাকি যাঁরা অন্য টেন্ডারের মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের কাছেও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একটা সরকারি সংস্থা টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগের সময় কী করে ঘুষ চাইতে পারে? বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষমাণ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা অধিকর্তার সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্মতি আদায় করতে পারেননি। এমনকি, স্বল্প সময়ের জন্যও নিজের চেম্বারের বাইরে এসেও কথা বলতে রাজি হননি। আন্দোলনকে আরও বৃহৎ আকারে নিয়ে যেতে চাওয়া কর্মীরা জানাচ্ছেন, ‘প্রয়োজনে আমরা সারারাত তাঁর ঘরের সামনে থেকে সরব না’।
Comments :0