POWER BILL ADANI SCAM

কয়লা আমদানিতে আদানির মুনাফা ৩০ হাজার কোটির, বাড়ছে মাশুল

জাতীয়

শুক্রবার শিলিগুড়িত সিপিআই(এম)’র বিক্ষোভ আদানি কেলেঙ্কারি আর বিদ্যুতের বিলে নিয়েই।

বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে অন্তত ৩০ শতাংশ কয়লা আমদানি করতে হবে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রক এই মর্মে নির্দেশ পাঠিয়ে রেখেছে উৎপাদন সংস্থাগুলিকে। তার জন্য চলতি বছরেই সংস্থাগুলির বাড়তি খরচ পড়বে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। আদানি গোষ্ঠীর তহবিলে যাবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকারের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব বিদ্যুৎকর্মীদের জাতীয় স্তরের সংগঠন ইলেকট্রিসিটি এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। সরব জনতাও। 
শুক্রবারই শিলিগুড়িতে আদানির কয়লা আমদানি কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে পথে নেমেছে সিপিআই(এম)। ‘জনগনের বিদ্যুতের অধিকার রক্ষা করুন’, স্লোগানকে সামনে রেখে ‘অস্বাভাবিক বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং স্মার্ট মিটার বসানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে বিদ্যুৎ দপ্তর অভিযান হয় এদিন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই বিদ্যুতের দাম এবং আদানির মুনাফা নিয়ে হচ্ছে প্রতিবাদ।
সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্র্যাসি’-তে কয়লা কেলেঙ্কারির খতিয়ান বিশদে দিয়ে প্রকাশ হয়েছে নিবন্ধ। বিদ্যুৎকর্মী আন্দোলন এবং সিআইটিইউ নেতা প্রশান্ত নন্দী চৌধুরীর নিবন্ধে বলা হয়েছে যে ভারতেই রয়েছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কয়লা ভাণ্ডার। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে আমদানিতে বাধ্য করার জন্য। 
বিদ্যুৎকর্মী আন্দোলনের অভিযোগ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় আদানি গোষ্ঠীরই কেনা খনি থেকে আসছে কয়লা। ২০১৯-২১ পর্বে দেখা গিয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে আদানির ৩১ লক্ষ টন কয়লা আমদানি হয়েছে ভারতে। তার দাম ইন্দোনেশিয়ায় ছিল ১৩.৯ কোটি ডলার। ভারতে মুন্দ্রা বন্দরে এসে এই কয়লারই দাম হয়েছে ২১.৫ কোটি ডলার। 
কয়লা চালানের মাঝে হাতবদল করা হয়েছে তাইপেই, দুবাই এবং সিঙ্গাপুরের তিনটি সংস্থার নামে। মাঝের এই সংস্থাগুলির মুনাফার ওপর আমদানি শুল্ক ছাড় হয়েছে। এই সংস্থাগুলি আদানিরই নিয়ন্ত্রিত এবং সাজানো। যার মাধ্যমে আসলে বিপুল শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। পণ্য হস্তান্তর দেখিয়ে বাড়ানো হয়েছে দামও। লাভের ওপর লাভ তুলেছে আদানি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ইউনিটে গড়ে ৭-৮ টাকা বেড়েছে। সংক্ষেপে আদানির কয়লা কেলেঙ্কারি এমনই, বলছে বিদ্যুৎকর্মীদের ফেডারেশন। 
আদানির এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দলীয় স্তরে নীরব রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধিতার কথা বললেও কেন্দ্রের বিদ্যুৎনীতিতে জনতার ওপর চাপানো হচ্ছে শুল্ক। সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির ডাকে শুক্রবার এই দ্বিচারিতার প্রতিবাদে সেবক রোডের বিদ্যুৎ দপ্তর অভিযান হয়। বিদ্যুতের ‘ফিক্সড রেন্ট’ বাড়ানোর প্রতিবাদ হয়। বিদ্যুৎ দপ্তর চত্বরে বসে বিক্ষোভ চলে। আওয়াজ ওঠে অবিলম্বে স্মার্ট মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। 


সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে যেভাবে বিদ্যুতের বিল বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ আইনকে কেন্দ্রের সরকার এর আগে সংশোধন করেছিলো। বর্তমান মোদী সরকার দেশে তাপবিদ্যুতের মূল উপাদান কয়লা আমদানির একচেটিয়া অধিকার দিয়েছে আদানিকে। ফলে বিদ্যুতের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের রাজ্যে পশ্চিমবাংলায় দেখা যাচ্ছে গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সংস্থা নির্বাচনী বন্ডে তৃণমূলকে ২০০ কোটির বেশি টাকা দিয়েছে। এরাজ্যেই একতরফা বিদ্যুতের বিল বাড়ানো হচ্ছে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের বিল বাড়ানোর জন্য স্ল্যাবগুলিকে বদলানো হয়েছে। বিদ্যুতের বিল দ্বিগুন-তিনগুন হয়ে যাচ্ছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment