কমরেড মদন ঘোষের দেহ দান করা হয়েছে বর্ধমানে মেডিক্যাল কলেজে। সিপিআিইএম) কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য শুক্রবার সকালে প্রয়াত হয়েছে নিজের বাসভবনে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১। এদিনই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
সকাল ১১টায় জেলা পার্টি অফিসে প্রয়াত কমরেড মদন ঘোষের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক কমরেড মহম্মদ সেলিম পার্টির রক্তপতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিকাল ৪টায়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব শ্রদ্ধা জানান মাল্যদান করেন। বামপন্থী বিভিন্ন গণ সংগঠনের সম্পাদক ও সভাপতি মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান। পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক মন্ডলী ও জেলা কমিটির সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান। তারপর শোক মিছিল বের হয়। মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে মরদেহ দান করা হয়।
সেলিম বলেছেন, মদন ঘোষ অনুসরণযোগ্য কমিউনিস্ট জীবন যাপন করেছেন। বর্ধমান এবং রাজ্যের পাশাপাশি তিনি দেশেরও কমিউনিস্ট আন্দোলনেরও নেতা ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৫৯ সালে কমরেড মদন ঘোষ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। তিনি বিপিএসএফ’র বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাবা অনাথবন্ধু ঘোষ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরাও কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১সালে ভাতাড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাঁর বাবা ডা: অনাথবন্ধু ঘোষ বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মতাদর্শগত সংগ্রামে ১৯৬৪ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজন হলে কমরেড মদন ঘোষ সিপিআই(এম)’র সঙ্গেই যুক্ত হন। ছয়ের দশকে এবং সাতের দশকে আধা-ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের সময়ে দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপন অববস্থায় পার্টির কাজ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
তিনি পার্টির জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত। পার্টির জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সারা জেলায় পার্টি গড়ে তুলতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে শিলিগুড়ি সম্মেলন থেকে পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন ২০০২ সালে। ২০০৮ সালে কোয়েম্বাটোরে পার্টির ১৯তম পার্টি কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
বর্ধমান জেলা কৃষকসভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সারা ভারত কৃষকসভার প্রাদেশিক কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। কৃষকসভার সর্বভারতীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালন করেছেন।
বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি থাকাকালীন তাঁর কৃষিক্ষেত্রে ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। এই কাজে ‘সংকল্প’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্থাপনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। সভাধিপতি থাকাকালীন বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চ সহ বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়নমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখে গেছেন। পার্টি শিক্ষাকেন্দ্র মটর-বিনয় ট্রাস্ট গড়ে তুলতে তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। গণশক্তি পত্রিকার দুর্গাপুর সংস্করণ চালু করতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
স্ত্রী, এক কন্যা, জামাতা এবং এক নাতনি সহ পরিবারের সমস্ত সদস্যদের রেখে গেছেন তিনি।
Comments :0