টানা ৭ দিন হয়ে গেল তবুও তীব্র দাবদাহ থেকে নিস্তার মিলছে না এখনই। পূর্ব ভারতজুড়ে চলা তাপপ্রবাহ আরও অন্তত চার দিন বেজায় ভোগাবে বলে সতর্ক করে দিল আবহাওয়া দপ্তর। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও যাঁরা পেটের টানে কাজ করে যেতে বাধ্য হন, সেই সমস্ত শ্রমজীবীদের জন্য অবশেষে টনক নড়ল মোদী সরকারের। এই সমস্ত মেহনতি অংশের মানুষের জীবন সঙ্কটের কথা ভাবতে রাজ্যগুলির প্রতি নির্দেশিকা জারি করলো কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসনকে লেখা চিঠি কেন্দ্রীয় শ্রম সচিব আরতি আহুজা বলেছেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা অসুস্থ না হয়ে পড়েন সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। এই মর্মে ঠিকাদার সংস্থা ছাড়াও, নির্মাণ এবং শিল্প সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই চিঠিতে।
তাপপ্রবাহ সম্পর্কে আবহাওয়া দপ্তরের জারি করা সতর্কতার ভিত্তিতে শ্রমিক, কর্মচারীদের কাজের সময় পরিবর্তন করার কথাও উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় শ্রম সচিব এই চিঠিতে। এছাড়াও কাজের জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখার কথাও বলেছেন শ্রম সচিব আহুজা।
একই সঙ্গে খনি শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি এই চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কাজের জায়গায় কাছাকাছি তাঁদের বিশ্রামের জায়গার ব্যবস্থা করা ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা জল এবং নুন-চিনির জলের ব্যবস্থা করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই চিঠিতে।
বিভিন্ন কারখানা এবং খনিতে কাজ করতে শ্রমিকরা গরমে অসুস্থ না হয়ে পরেন সেই দিকে খেয়াল রেখেই কাজের গতি কমানো ছাড়াও, তাঁদের বিশ্রমের সময় বাড়ানো, দিনে যে সময়ে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা থাকবে তখনই শ্রমিকদের দিয়ে বেশি শ্রমের কাজগুলি করানোর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। খোলামেলা জায়গায় কাজ করানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কল-কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা ছাড়াও নির্মাণ শ্রমিক, ইটভাটর শ্রমিকদেরকেও অত্যধিক তাপ ও আর্দ্রতা কারণে বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি শ্রমিকদের মহল্লায় এই বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতামূলক প্রচার চালতেও বলেছেন কেন্দ্রীয় শ্রম সচিব।
তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ত্রিপুরা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির ঘোষণা করেছে। এর আগে ওডিশা সরকার রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দিল্লিতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি সতর্কতা জারি করেছে। চড়া রোদের মধ্যে স্কুলের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি ছাড়াও বিহারে তীব্র তাপপ্রবাহ চলবে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি টানা তাপপ্রবাহের কবলে। আর্দ্রতা বাড়তে থাকায় গরমে প্রচণ্ড অস্বস্তিও বোধ হচ্ছে। কার্যত গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দা। একই অবস্থা ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও। এখানে আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি থাকবে আরও দু’দিন। একই সঙ্গে সিকিম সহ পশ্চিবঙ্গের তারই অঞ্চলে কয়েকটি জেলায় তাপ প্রবাহের পরিস্থিতি দেখা দেবে বলে মঙ্গলবার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
এদিকে, উত্তর পশ্চিম ভারত এবং দক্ষিণ ভারতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার তেমন কোনও পরিবর্তন হবে না। তারপর দুই থেকে তিন ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে বলে আশার কথা শুনিয়েছে হাওয়া অফিস।
টানা ৭ দিন ধরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে তীব্র তাপ প্রবাহ চলছে। অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল অঞ্চলে এই পরিস্থিতি রয়েছে ৫দিন ধরে। বিহারেও চার দিন ধরে তাপ প্রবাহ চলছে। ইতিমধ্যে পাঞ্জাব, হরিয়ানাতেও দু’দিন ধরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উত্তর পশ্চিম ভারতের সমতল অঞ্চল ছাড়াও পূর্ব ও মধ্যে ভারতে তাপমাত্রা ক্রমশ চড়ছে। এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৪ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। উত্তরের উপকূলের জেলগুলিতে ইতিমধ্যে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও তা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে।
সোমবার দেশের উষ্ণতম অঞ্চল ছিল এলাহাবাদ। এখানকার পারদ ৪৪.৬ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সিকিমে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভবিকের চেয়ে ৫.১ ডিগ্রির চেয়ে বেশি ছিল। বিহার, আসাম সহ উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির কয়েকটি জেলাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অস্বাভাবিক চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি ছিল।
এদিকে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩.১ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি ছিল পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লিতে। ছত্তিশগড় কয়েকটি জেলা ছাড়াও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলি, ওডিশা, মধ্য প্রদেশ এবং কেরালাতেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ডিগ্রি বেশি ছিল।
এদিকে মহারাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা প্রবল সমালোচনার মুখে ফেলেছে বিজেপি’র জোট সরকারকে। তীব্র গরম এবং সঙ্গে প্রচণ্ড আদ্রতার জন্য এই পরিস্থতির তৈরি হয়েছিল।
Heat wave in India will prevail
কাজের সময় পরিবর্তনে নির্দেশিকা শ্রম মন্ত্রকের
×
Comments :0